চোখ রক্ষায় রোদচশমা

নাহিন আশরাফ

রোদচশমা বা সানগ্লাস প্রধানত ব্যবহার করা হয় রোদ থেকে চোখকে রক্ষা করার জন্য। কিন্তু রোদচশমা এখন শুধু প্রয়োজনীয় পণ্য নয়, এটি ফ্যাশন অনুষঙ্গ। জানেন কী, কবে কখন কীভাবে রোদ চশমার ব্যবহার শুরু হলো। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় ১২৮৬ সালে ইতালির জিওর্দানো দা পিসা প্রথম চশমা আবিষ্কার করেছিলেন। তবে আধুনিক চশমার আবিষ্কারক গিরোলামো, তিনিও ইতালিতে থাকতেন। চশমা আবিষ্কারের আগে যাদের চোখে সমস্যা ছিল তাদের চোখের সামনে কাচ ধরা হতো। পরে ভাবা শুরু হয়, কীভাবে চশমা ডিজাইন করা যেতে পারে। চোখের সামনে কাচ ধরে রাখা কিন্তু কোনো গল্পকাহিনি না, এর লিখিত প্রমাণও পাওয়া গেছে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১২৮৬ সালে চশমা আবিষ্কার হয়। পিসার উদ্দেশ্য ছিল যাদের চোখে পাওয়ারের সমস্যা তারা যাতে এটি ব্যবহার করতে পারেন।

চশমা তো তৈরি হলো। কিন্তু এটা কীভাবে কাজ করে সেটি কারোর জানা ছিল না। ১৬০৪ সালে এই ব্যাপারে সবাইকে ধারণা দেন জোহান্স কেপলার। কিন্তু এখনকার চশমার সাথে সেই সময়ের চশমার কোনো মিল ছিল না। তখন চশমার কোনো হাতল থাকতো ছিল না। চশমা চোখের সামনে হাত দিয়ে ধরে রেখে ব্যবহার করতে হতো। চশমা যে কানে আটকিয়ে ব্যবহার করা যায়, তা আবিষ্কার হয় ১৭২৭ সালে। প্রথম চশমাতে হাতল নিয়ে আসেন অ্যাডওয়ার্ড স্কারলেট। পরে চশমার আরো উন্নতি হয়েছে। তবে এক পরিব্রাজক বলেছিলেন তিনি নাকি চীনে প্রথম চশমা দেখেন। তবে এর সত্যতা বা প্রমাণ লিখিতভাবে পাওয়া যায়নি। সেই সত্য-মিথ্যা নিয়ে এখন কারো মাথা ব্যথা নেই।

বাস্তবতা এখন এটাই যে চশমা থেকে আবিষ্কার হয় রোদচশমা। এখন রোদচশমা ফ্যাশন ও লাইফস্টাইলের একটি অংশ। নিজেকে ফ্যাশনেবল করার জন্য অনেকে রোজ ব্যবহার করছেন রোদচশমা। ফ্যাশন সচেতনদের এখন রোদচশমা ব্যবহার করতে রোদের প্রয়োজন হয় না, তারা সব ঋতুতেই সঙ্গে রাখেন রোদচশমা। আর এই ফ্যাশনসচেতনের জন্যই বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও শপগুলো পসরা সাজিয়ে বসে আছে বাহারি সব রোদচশমার কালেকশন নিয়ে। তবে রোদচশমা কেনার আগে সচেতন থাকতে হবে। কারণ চোখের মতো সংবেদনশীল অঙ্গে এটি পরতে হয়, তাই সচেতন না থাকলে চোখের ক্ষতি হতে পারে।

রোদচশমা কেনার আগে

রোদচশমা যেহেতু চোখের অনুষঙ্গ তাই এটি নিয়ে আপস করা যাবে না। রোদচশমা সূর্যের ইউভি রশ্মি থেকে চোখকে সুরক্ষা দেয়। তাই কেনার আগে দেখতে হবে চোখকে সঠিকভাবে সুরক্ষিত রাখার সব উপাদান আছে কি না! কারণ চোখের হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, ভুল রোদচশমা বেছে নেওয়ায় কত মানুষকে চোখের সমস্যার পড়তে হচ্ছে। অনেকে রোদচশমার কালেকশন বাড়ানোর জন্য নন ব্যান্ড সানগ্লাস কিনে থাকেন। সেসব সানগ্লাস পরলে রাস্তা উঁচুনিচু লাগে। অনেক সময় চোখ দিয়ে পানি পড়ে। এর কারণ হচ্ছে এসব রোদচশমায় স্মুদ সারফেসড গ্লাস থাকে না। এটি অজান্তেই চোখের অনেক ক্ষতি করে ফেলতে পারে। তাই সানগ্লাস কেনার আগে ভালো মানের কি না বুঝে কিনতে হবে। দেখে নিতে হবে, সানগ্লাস ৯৯% থেকে ১০০% ইউভিএ এবং ইউভিবি রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে কি না। এ ছাড়া পোলারাইজড লেন্সযুক্ত রোদচশমা সূর্যের কড়া আলো থেকে রক্ষা করে। পোলারাইজড লেন্স পানি, বরফ ও কাচ থেকে প্রতিফলিত আলোকরশ্মি কমাতে সাহায্য করে। কারো চোখে পাওয়ারের সমস্যা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের রোদ চশমা নেওয়া উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে। ভুল রোদচশমা বাছাইয়ের জন্য অ্যালার্জি, চোখ ব্যথার মতো অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। কিছু রোদচশমা দৃষ্টি ঝাপসাও করে দিচ্ছে।

সবার চোখে সব ধরনের রোদ চশমা মানানসই হয় না। দেখা যাচ্ছে, আপনার বন্ধু একটি রোদ চশমা কিনল দেখে আপনারও পছন্দ হলো। আপনিও শখ করে কিনে নিয়ে এলেন এবং দেখলেন আপনার বন্ধুকে চশমাটায় যতটা ভালো লাগছিল আপনাকে তেমন লাগছে না। এর কারণ সবার গায়ের রং, মুখের সাইজ এক না। রোদচশমা কেনার আগে অবশ্যই মাথায় রাখতে আপনার গায়ের রং, মুখের সাইজ ও লিঙ্গ। যাদের গায়ের রং গাঢ় তারা হলুদ, সাদা ও কফি রঙের রোদ চশমা বেছে নিতে পারেন। তবে কালো রোদচশমা যেকোনো কিছুর সাথেই বেশ মানিয়ে যায়। কিন্তু এখন মানুষ কালোর পাশাপাশি অন্য রঙের রোদচশমাও পরছে। মুখ যদি গোলাকার ও বড় হয়ে থাকে তাহলে বড় রোদচশমা বেছে নিতে হবে। তাছাড়া এখন ওভারসাইজ রোদচশমার ট্রেন্ড চলছে। আয়তাকার মুখে উপরের দিকে কিছুটা চ্যাপ্টা ফ্রেম মানাবে। এছাড়া চুলের স্টাইল ও পোশাকের উপরেও নির্ভর করছে আপনার রোদচশমা কেমন হবে।

মগবাজার এলাকার বিভিন্ন চশমার দোকান ঘুরে জানা যায় এখন চারকোণা ফ্রেম বেশি চলছে, যাকে ওয়েফার ফ্রেম বলা হয়। পুরুষদের মধ্যে জনপ্রিয় রোদচশমা পাইলট ও ওভার শেপের গ্লাস। তবে পুরুষদের কাছে কালো রঙের রোদচশমার বেশি চাহিদা। যেকোনো পোশাকের সাথে একটি মানানসই রোদচশমা আপনাকে অনেক বেশি ট্রেন্ডি লুক দিবে। রোদচশমা এখন ফুটপাত থেকে শুরু করে ব্র্যান্ডের বিভিন্ন দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। ফুটপাতের কিছু রোদচশমা প্রথম দেখায় ভালো লাগলেও কিছুদিন ব্যবহারের পর দেখবেন চশমাটিতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই চশমা কেনার জন্য ভালো বাজেট রেখে ব্র্যান্ড থেকে কেনা উচিত।

গুচি, প্রাদা, সেন্ট লরেন্স, ডিওর ইত্যাদি কিছু ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডের সানগ্লাস এখন দেশে পাওয়া যাচ্ছে। কিছু অনলাইন পেইজ প্রি-অর্ডারের মাধ্যমে এইসব রোদচশমা দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসছে। আবার বসুন্ধরা সিটি ও যমুনা ফিউচার পার্কে কিছু শপে ব্র্যান্ডের রোদচশমা পাওয়া যাচ্ছে। এইসব জায়গা থেকে ব্র্যান্ডের রোদচশমা কিনতে গেলে আপনাকে গুনতে হবে ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার অবধি। এমনি এরচেয়েও বেশি দামের সানগ্লাসও রয়েছে। তবে নিউ মার্কেট, মৌচাক মার্কেট, তালতলা মার্কেট, গাউছিয়া ইত্যাদি জায়গা থেকে কিনলে ২৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন রোদচশমা।

বর্তমানে আরেকটি জনপ্রিয় রোদচশমা হচ্ছে রিকশা প্রিন্টের রোদচশমা। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল প্রথম রিকশা প্রিন্টের চশমা নিয়ে আসেন। ধীরে ধীরে এটি সবার গ্রহণযোগ্যতা পায়। এইসব চশমা অবশ্য বাজারে তেমন পাওয়া যায় না। কোনো অনলাইন পেইজ বা কোনো আর্টিস্টের মাধ্যমে আর্ট করিয়ে নিতে হয়। রিকশা প্রিন্টের চশমা প্রথমে গায়ে হলুদের মতো আয়োজনে পরা হতো। পরবর্তীতে এটা ভ্রমণ কিংবা যেকোনো আয়োজনেই পরা হয়ে থাকে। তবে এই চশমা কিন্তু সব জায়গায় মানানসই না। কোনো অফিসিয়াল কাজে এইসব চশমা খুব বেমানান লাগবে। আপনার ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পাবে না। অনলাইন পেইজগুলোতে ডিজাইনের উপর নির্ভর করে ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যেই রিকসা প্রিন্টের রোদচশমা পাওয়া যায়।

রোদ চশমার যত্ন

অনেক দেখে শুনে শখের রোদ চশমাটি তো কিনলেন। এবার এর সঠিকভাবে যত্ন নিতে হবে। কারণ দিনের পর দিন যদি রোদচশমার যত্ন না নেওয়া হয় তবে এর উপর দাগ পড়ে যেতে পারে। তাই যত দাম দিয়েই রোদচশমা কিনেন না কেন যত্ন নেওয়া জরুরি। রোদচশমা পরিষ্কার করার জন্য নরম সুতির কাপড় ব্যবহার করতে হবে। বাটিতে কুসুম গরম পানি নিয়ে লিকুইড সাবান দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে ঠান্ডা পানিতে ধুলে নিলেই হবে। রোদচশমা যখন ব্যবহার করবেন না তখন চশমার বক্সে করে নির্দিষ্ট স্থানে গুছিয়ে রেখে দিন, বাইরে লাগলে গ্লাসে ধুলা জমে যাবে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ফ্যাশন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eighteen − 8 =