সালেক সুফী: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। করাচী ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিজিল্যান্ডের ম্যাচ দিয়েই শুরু হবে বহু প্রতীক্ষিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫। পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারী দুবাইতে ভারতের বিরুদ্ধে খেলবে বাংলাদেশ। মনে আছে সাদা বলের ৫০ ওভারের এই টুর্নামেন্ট প্রথম বারের মত অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশে ঢাকায়। সেই সময় বাংলাদেশে থাকায় মাঠে প্রতিটি খেলা দেখার সুযোগ হয়েছিল। এবারেও দুবাই, লাহোর, করাচি, রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিতব্য হাইব্রিড পদ্ধতির টুনামেন্টের খেলাগুলো ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দেখবো ইনশা আল্লাহ। এবারের টুর্নামেন্টে মায়ের দেশ বাংলাদেশ এবং আমাদের বর্তমান দেশ অস্ট্রেলিয়া খেলছে। আফগানিস্তান নিয়েও আগ্রহ আছে. কিন্তু চাইবো বাংলাদেশ যেন সেরা খেলা উপহার দিয়ে অন্তত সেমী ফাইনাল উন্নীত হতে পারে।
দুই গ্রুপে বিভক্ত আটটি দল। একটি গ্রূপে আছে স্বাগতিক এবং গেলো আসরের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের সঙ্গে রানার্স আপ শক্তিশালী ভারতের সঙ্গে নিউজিলণ্ড এবং বাংলাদেশ। অপর গ্রূপে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে আছে আফগানিস্তান। ভারত পাকিস্তানে যাবে না কোন অবস্থায় এই ভূমিকায় অনড় থাকায় সমাধান হিসাবে পক্ষপাত দুষ্ট আইসিসি ভারতের খেলাগুলো দুবাইতে অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
টুর্নামেন্টের অপর সাত দল বিভিন্ন মাঠ এবং পরিবেশে খেলবে। একমাত্র ভারত একই মাঠে খেলবে গ্রূপ পর্যায়ের সকল ম্যাচ এবং উত্তীর্ন হলে সেমী ফাইনাল এবং ফাইনাল। বিষয়টি সমতা ভিত্তিক কিনা বিচার কবে ক্রিকেট ভক্তকুল।
টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী সকল দল ১৫ জনের প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছে। আজ এই লেখায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্লেষণ করবো। দীর্ঘদিন বাংলাদেশ সাদা বলের বৈষয়িক টুর্নামেন্টে ভালো কিছু করেনি। একসময়ের সাড়া জাগানো পঞ্চ পাণ্ডবের সবার ক্রিকেট জীবনে ভাটির টান থাকায় এবং তাদের স্থানে সেই মাপের নতুন খেলোয়াড় গড়ে ওঠার সঠিক পরিকল্পনা না থাকাকে বাংলাদেশের পারফরমেন্স ধারাবাহিক না হওয়ার কারণ বলে মনে করে ভক্তকুল। মাশরাফি ক্রিকেটে থেকেও নেই। এবারে সুযোগ ছিল অপর চার জন সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ চার জন একসাথে খেলার। কিন্তু ঘোষিত প্রাথমিক দলে নেই সাকিব, নেই তামিম এমনকি ফর্ম হীনতার কারণে বাদ দেয়া হয়েছে লিটন কুমার দাসকে। তামিম স্বেচ্ছায় নিজেকে বেশ কিছু সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরিয়ে রেখে দল ঘোষণার কিছু আগে অবসর ঘোষণা করেছে। সাকিবের বাদ পড়ার কারণ আপাত দৃষ্টিতে তার বোলিং আকশন বিতর্কিত ভাবে অবৈধ ঘোষণার অজুহাতে শুধু মাত্র ব্যাটিং সীমাবদ্ধ হলেও রাজনৈতিক বলে সবাই বুঝতে পারে। আর লিটন বাদ পরার কারণ হিসাবে সাদা বলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ সময়ে রান খরায় থাকার কথা বলা হয়েছে। লিটন কিন্তু চলমান বিপিএল টি ২০ টুর্নামেন্টে দারুন খেলছে।
বাংলাদেশ ১৫: নাজমুল হোসেন শান্ত ( অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, তাওহীদ হৃদয়, মুশফিকুর রাহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, জাকের আলী অনিক, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব এবং নাহিদ রানা।
একাদশ নিয়ে বিতর্ক অবশ্যই হতে পারে এবং হচ্ছে কেন ক্রিকেটীয় কারণ ছাড়া দেশের সর্বযুগের সেরা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান দলে নেই। শুধুমাত্র ব্যাটসম্যান হিসাবেও সাকিব ঘোষিত ১৫ জনের দলে অবস্যই বিবেচনার জোরালো দাবিদার। লিটনের ক্ষেত্রেও বলা চলে ক্লাস চিরদিনের, ফর্ম কিছু দিনের। এখন ভালো খেলতে থাকা লিটনকে বিবেচনার সুযোগ থাকলে নেয়া উচিত বলেই মনে করি. ভারতের বিরুদ্ধে লিটনের ভালো খেলার নজির আছে। আর বাংলাদেশের প্রথম খেলা ভারতের বিরুদ্ধে দুবাইতে। আমি মনে করি না লিটনের স্থানে পারভেজ ইমন বৈষয়িক টুর্নামেন্টে ভালো বিকল্প হয়েছে। সাকিব স্কোয়াডে না থাকায় নাসুমকে বাম হাতি স্পিনার হিসাবে নেয়া হয়েছে। আর রিশাদ হোসেন লেগ স্পিন ছাড়াও লেট্ অর্ডারে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করার সুবাদে স্থান পেয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধান শক্তি থাকবে উঁচু মানের পেস আক্রমণ। তাসকিন আহমেদ আছে তুখোড় ফর্মে। মুস্তাফিজ পাকিস্তান এবং দুবাই উইকেটে ভালো করার সম্ভাবনা আছে। নাহিদ রানা দুরন্ত গতিতে বোলিং করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ইদানিং তানজিম হাসান সাকিবের আক্রমণাত্মক বোলিং দলের পেস আক্রমণ সমৃদ্ধ করেছে। শংকা আছে ব্যাটিং নিয়ে বিশেষত টপ অর্ডার ব্যাটিং নিয়ে। সৌম্য ইনজুরি থেকে ফায়ার ব্যাটিং করে নি. তানজিদ হাসান তামিম দুর্দান্ত ফর্মে থাকলেও পারভেজ ইমন অথবা নাজমুল হোসেন শান্ত কিন্তু ব্যাট হাতে আস্থাহীন মনে হচ্ছে। তাওহীদ হৃদয় এবং মুশফিক সেরা ফর্মে নেই. জাকের আলী এবং মাহমুদুল্লাহ ফর্মের তুঙ্গে থাকলেও টপ অর্ডার ভালো খেলতে হবে। প্রথম ম্যাচে ভারতের সঙ্গে বুমরা, স্বামী, আর্শদীপ, জাদেজা, কুলদীপদের সামাল দিয়ে ২৮০ -৩০০ না করতে পারলে দুবাই উইকেটে জয়ের সম্ভাবনা থাকবে না। একই অবস্থা হতে পারে নিউজিলণ্ড এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করলে টুর্নামেন্ট জমে যাবে। ভারত কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে দেশে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৩-০ ধবল ধোলাই এবং বর্ডার -গাভাস্কার সিরিজ ৩-১ হেরে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে. ২০০৭ বিশ্বকাপের মত এবারে ভারতকে হারাতে পারলে বাংলাদেশ হয়ত টুর্নামেন্টে সেমী ফাইনাল খেলার সুযোগ পেতেও পারে। ভারত, নিউজিল্যান্ড এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সাদা বল ক্রিকেট ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ।
হারানোর কিছু নেই বাংলাদেশের আছে অনেক কিছু অর্জনের। আশা করি নিজেদের সেরাটা নিবেদন করে জয়ের জন্য খেলবে বাংলাদেশ।