চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও সরকার শ্রমবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: আইনমন্ত্রী

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি বলেছেন, বৈশ্বিক মন্দা ও নানামুখী চ্যালেঞ্জ থাকা স্বত্বেও সরকার শ্রমবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ৩৫০তম গভর্নিং বডি অধিবেশনে মঙ্গলবার একথা বলেন তিনি। খবর বাসস।

আইনমন্ত্রী বলেন, শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে প্রয়োজনীয় শ্রম সম্পর্ক তৈরীর সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে সরকার। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নের আলোকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার শ্রমক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে।

বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে সরকার গৃহীত রোড ম্যাপ (২০২১-২৬) এর আলোকে আইনগত সংস্কার, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন, শ্রম সংক্রান্ত পরিদর্শন এবং শ্রমিকদের অন্যান্য অধিকার- এ চারটি ক্ষেত্রে শ্রম সংস্থার অধিবেশনে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী।

প্রস্তাবিত বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন বিলে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের জন্য শিল্পখাতে প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংখ্যা ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনা, ইউনিয়নের প্রতি অনায্য আচরণের শাস্তি দ্বিগুণ করা, বেআইনিভাবে কারখানা বন্ধ করার শাস্তি তিনগুণ করা, শিশু শ্রমের শাস্তি চারগুণ করার বিধান রাখার কথাও উল্লেখ করেন তিনি ।

তাছাড়া প্রস্তাবিত এ সংশোধনীটিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে এবং নৌ পরিবহন খাতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও পরিচালনা সহজীকরণ, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে আপিল আবেদন সহজীকরণ সংক্রান্ত বিধান সংযুক্ত করার কথাও আইনমন্ত্রী উল্লেখ করেন। প্রস্তাবিত এ সংশোধনীটিতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার বিভিন্ন কনভেনশনের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে বলে তিনি অধিবেশনকে অবহিত করেন। যথাযথ ত্রিপক্ষীয় আলোচনা শেষে দ্রুততার সাথে সম্ভব হলে, জাতীয় সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে শ্রম  আইনের সংশোধন বিল আকারে উপস্থাপিত হতে পারে বলে মন্ত্রী জানান।

প্রচলিত আবেদন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি অনলাইন ভিত্তিক ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন চালু করা, প্রাক-আবেদন সেবা চালুকরণ, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণের ফলে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের ক্ষেত্রে গুণগত ও পরিমাণগত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। এর ফলে তৈরি পোশাক খাতে গত নয় বছরে নিবন্ধন নয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বর্তমানে প্রায় ত্রিশ লক্ষ শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নভুক্ত হয়েছে। তাছাড়া, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনভুক্তি আবেদনের সফলতার হার গত চার বছরে ৬০ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলেও জানান আইনমন্ত্রী।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আরও বলেন, কারখানা পরিদর্শকের পদ আড়াইগুণ বৃদ্ধি, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় পরিদর্শন মডিউল চালু করা, পরিদর্শকদের মানসম্মত প্রশিক্ষণ প্রদানের ফলে কারখানা ও স্থাপনা পরিদর্শনে দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। কেবল গত ২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসে বিশ হাজারেরও বেশি পরিদর্শন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে তিনি তথ্য প্রদান করেন। তাছাড়া, ইপিজেডগুলোতে নিজস্ব উন্নত পরিদর্শন ব্যবস্থা থাকা স্বত্বেও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরও পরিদর্শন শুরু করেছে।

আনিসুল হক বলেন, ছয়টি নতুন শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠার ফলে বর্তমানে মোট ১৩টি শ্রম আদালত কাজ করে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি সেল চালু করা হয়েছে যা অদ্যাবধি প্রাপ্ত ৯০ শতাংশের বেশি সালিশআবেদনের নিষ্পত্তি করেছে। শ্রমিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিযোগ সহজে দায়ের করার জন্য সরকার কর্তৃক চালু করা হেল্পলাইন সফলভাবে কাজ করেছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের প্রতি বৈষম্য বন্ধে সরকার গত তিন বছরে প্রায় ছত্রিশ হাজার শ্রমিক, ব্যবস্থাপক, মালিক, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারী, আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সরকার এ সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

অধিবেশনে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার গৃহীত বিভিন্ন ব্যবস্থার সাধিত গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির প্রশংসা করে আইএলও গভর্নিং বডির অধিকাংশ সদস্য বক্তব্য রাখেন। তাঁরা দ্রুত বাস্তবায়নের সাথে সাথে সুপারভাইজরি বডিদের সংশ্লিষ্টতায় আইএলও-এর কারিগরি সহায়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × one =