ছাত্র জনতার আন্দোলনে সূচিত গণবিস্ফোরণের অর্জন যেন ব্যর্থ না হয়

সালেক সুফী

ছাত্র জনতার অভূতপূর্ব আন্দোলনের ফসল সাম্প্রতিক পরিবর্তন দেশের পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের জন্য। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সুসংহত করার জন্য। ছাত্র সমাজের প্রস্তাব অনুযায়ী নোবেল পুরস্কার বিজয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজ সংস্কারক ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অচিরেই শপথ গ্রহণ করবে। সেই সরকারের সামনে কিন্তু পরিবর্তনের সূচনা করার বিশাল চ্যালেঞ্জ।

একদিকে যেমন ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতিকে সঠিক পথে আনতে হবে, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাপক সংস্কার করে সকল পর্যায়ে জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সংগ্রাম এবং পরিবর্তন কিন্তু এক ব্যক্তিকে বা এক দলকে সরিয়ে অন্য দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য হয়নি। ইতিহাস বলে বাংলাদেশ কিন্তু ৫৩ বছরে জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা দেখেনি। যখন যে দল ক্ষমতায় থেকেছে সেই দল নিজেদের মতো করে স্বেচ্ছাচার এবং নৈরাজ্য প্রতিষ্ঠিত করেছে।

ছাত্র সমাজ কিন্তু বার বার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে কোন পথে মুক্তি। কিন্তু ক্ষমতালিপ্সু শাসক গোষ্ঠী কিন্তু কখনোই দেশপ্রেমের পরিচয় দিতে পারেনি। আশা করি বিচক্ষণ ড. ইউনূস এবং দেশপ্রেমিক সেনাবহিনী দেয়ালের লিখন পড়তে পারছে। তাড়াহুড়ার কিছু নেই। প্রয়োজনে ২-৩ বছর লাগে লাগুক। দেশের মৌলিক সংস্কার না করে নির্বাচন করে ক্ষমতার পালা বদল হলে ছাত্র-জনতার মহান অর্জন বৃথা হবে।

ক্যান্সার আক্রান্ত রাজনীতি, সমাজনীতি জবাবদিহিমূলক করতে সকল অংশীজনকে নিয়ে একটি সুস্থ স্বচ্ছ দেশবাসীর কাছে  জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ সবার কাম্য। রাজনীতি থেকে পরিবারতন্ত্র চিরতরে মুছে ফেলতে হবে। মেধাভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশিদের মেধা অন্তহীন, দেশপ্রেম অফুরন্ত। কিন্তু সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সঠিক সংস্থার অভাবে কাজের পরিবেশ বিঘ্নিত। বিচারহীনতা, কুশাসন, দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এগুলো দূর করে একটি সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি না করে নতুন নির্বাচন করার কোনো যুক্তি নেই। ১৯৭১ মহান বিজয় সুসংহত হয়নি। ১৯৯০ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ফসল ঘরে তোলা যায়নি। ২০০৯-২০২৪ দীর্ঘ সময়ে একটি দল ক্ষমতায় থেকে কি করেছে তার পরিণতি এখন সবাই দেখছে।

ছাত্রদের বিপ্লবী ভূমিকা আমরা দেখছি। এই দেশের মালিক ১৭ কোটি জনগণ। দেশের সকল সম্পদে সকল নাগরিকের সমান অধিকার আছে। ব্যক্তি পূজা বা গোষ্ঠী পূজার কোনো অবকাশ নাই। আশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সবার সহায়তায় সঠিক কাজগুলো নিরপেক্ষতা বজায় রেখে করতে পারবে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। পাকিস্তানী দখলদারদের কবল মুক্ত হয়ে আমরা অন্য কোনো দেশের গোলামী করতে চাই না। আমাদের বিষয় আমাদের সমস্যাগুলো আমাদের নিষ্পত্তি করার অধিকার আমাদের সংরক্ষিত করতে হবে। উন্মুক্ত বিশ্বে আমাদের অধিকার আছে সতন্ত্র বজায় রেখে এগিয়ে যাবার।

সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ করবো সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করার। একটি সরকারের পতন হয়েছে এখন। এর আগেও কিন্তু আন্দোলনের মুখে এরশাদ সরকার এবং খালেদা জিয়া সরকারের পতন ঘটেছিল। সাধারণ নাগরিকের কিন্তু স্মরণ শক্তি জেলি মাছের ছোট নয়। সবাই সবাইকে চিনে জানে। কেউ ধোয়া তুলসী পাতা নয়।

আশা করি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অচিরেই ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × five =