মাসুম আওয়াল
আয় ছুটে সুর তুলে আয় রেলগাড়ি আয়,
আমরা বেড়াতে যাবো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার।
মেঘলা আকাশ ছুঁয়ে নামুক না বিষ্টি,
সবাই জমিয়ে খাবো ছানামুখী মিষ্টি।
এর আগে ছানামুখী মিষ্টি কী খেয়েছো,
মিষ্টি স্বাদ নিয়ে খুব মজা পেয়েছো?
রসে ভরা মন কাড়া মিষ্টি কে বানালো?
এক বুড়ো ময়রায় সব কিছু জানালো।
গল্পের তালে তালে খাওয়া দাওয়া চলছে,
দুলাল মোদক হেসে ইতিহাস বলছে।
ঊনিশশো সাঁইত্রিশ সালে এটা ঘটলো,
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘটনাটা রটলো।
সে শহরে এলো এক মিষ্টির কারিগর,
কলকাতা শহরেই তার আদি বাড়ি-ঘর।
থামো থামো তার নাম ধাম সব জানবে,
লোকটার হাতে জাদু সেই কথা মানবে।
বসে আমাদের পাশে,
দুলাল মোদক হাসে।
শহরের আদর্শ মিষ্টির ভান্ডারে,
আমরা ঘুরতে গিয়ে হঠাৎ পেয়েছি তারে।
দুলাল মোদক বলে সব মন খুলে
আমরা সেসব শুনি খুব দুলে দুলে-
কাশিধামে আসে শ্রী মহাদেব পাঁড়ে,
কয়দিন সকলে প্রাণ মন কাড়ে।
‘ছানামুখী’ মিষ্টির প্রবক্তা সে-ই,
মিষ্টির ইতিহাসে নামটা পাবেই।
তার এক ভাই ছিলো দুর্গা প্রসাদ,
তার নাম কোনোভাবে পড়বে না বাদ।
কাহিনীটা জানবে কী পুরো ছড়া পড়ো,
দুর্গা প্রসাদ ছিলো ব্যবসায়ী বড়ো।
মহাদেব ছিলো তারই বাঁধা কারিগর,
দুই ভাই মিলে মিশে ছিল, অতঃপর।
মারা যান হুট করে দুর্গা প্রসাদ,
মহাদেব হারালেন ছায়া ঢাকা ছাদ।
কলকাতা হলো যেন কষ্টের ‘লেন’,
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে আসলেন।
যেন গত কাল,
আহা সেই ঊনিশশো সাঁইত্রিশ সাল।
মেড্ডার শিবরাম হুট করে এসে,
তার দোকানেই তাকে নিয়ে যান হেসে।
নতুন ঠিকানা পেয়ে মহাদেব পাঁড়ে,
কী গড়লে খাবে লোকে ভেবে বারে বারে।
‘লাল রসগোল্লা’ ও ‘ছানামুখী’ বানান,
সবাইকে এটা খেতে অনুরোধ জানান।
যে-ই খায় তারই মন ভরে যায় শেষে,
দুটো মিষ্টিই লোকে খায় ভালোবেসে।
নাম ডাক হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি,
সেই নামই টিকে আছে নয় বাড়াবাড়ি।
বউটাকে সাথে নিয়ে ভারতের বড় লাট,
এ মিষ্টি খেয়েছেন করে খুব ঠাঁট-বাট।
লেডি ক্যানিংয়ের নাম আছে কারো জানা?
লাল রসগোল্লা তো তার প্রিয় খানা।
পাশাপাশি আরও তার প্রিয় ছানামুখী,
লেডি ক্যানিংয়ের সাথে বড় লাট সুখি।
রেসিপিও বলে দিই কোনো নয় ছয় না,
পাউডার দুধ দিয়ে ‘ছানামুখী’ হয় না।
গাভীদের খাঁটি দুধে ছানামুখী হয়,
স্বাদে গুণে ভরপুর সেটা নিশ্চয়।
আট কেজি দুধ সাথে নিয়ে নিও আগে,
এক কেজি ‘ছানামুখী’ তৈরিতে লাগে।
প্রথমে দুধকে জ্বাল দিয়ে করো ছানা,
ঝরাও ছানার পানি, পানি লাগবে না।
কাপড়ে ছানাকে বেঁধে ঝুলাতেই হবে,
পানি ঝরে যাবে সব ছানাগুলো রবে।
লম্বা প্লেটের মাঝে ছড়াও সে ছানা,
এভাবেই সেটা ঠিক রেখে দেয়া মানা।
শক্ত ছানাকে কাটো চারকোনা করে,
রেখে দাও এক পাশে যত্ন করে।
চুলায় কড়াই দাও তাতে দাও পানি,
চিনি ও এলাচ দিয়ে ফুটাবে তা জানি।
জ্বাল করে চিনি পানি শিরা গড়ে নাও,
চারকোনা ছানাগুলো সে শিরায় দাও।
ছানার টুকরোগুলো শিরাতে ফুটাও,
ফুটানোটা হলে শেষ পাত্রে উঠাও।
ঠান্ডা করতে দিও ছানামুখী হলে,
মুখে দাও টুপ করে যাবে সেটা গলে।
এভাবেই রোজ রোজ হয় ‘ছানামুখী’,
ছেলে বুড়ো সকলেই খেয়ে হয় সুখি।
প্রতি কেজি ‘ছানামুখী’ সাতশত টাকা,
কিনছেন তবু রোজ খালু, মামা, কাকা।
জিআই পণ্য হয়ে ছানামুখী হাসে,
ছানামুখী খেতে সকলেই ভালোবাসে।
লেখাটির পিডিএফে দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ছন্দে ছন্দে