জনপ্রিয় ঢালিউড নায়িকা শাবনূরের জন্মদিন আজ

নব্বইয়ের দশক থেকে এ পর্যন্ত আসা অভিনেত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ঢালিউড নায়িকা হিসেবে এখনো বিবেচনা করা হয় শাবনূরকে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বাংলা চলচ্চিত্রকে তিনি যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন, তা আজীবনই মনে রাখবে এ দেশের সিনেপ্রেমীরা।

নানামাত্রিক চরিত্রে অভিনয় দক্ষতা দেখিয়ে শাবনূর যেভাবে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছেন, এতে তাকে আদর্শ হিসেবে মানেন এই প্রজন্মের অনেক নায়িকা।

বাংলা চলচ্চিত্রের বহু প্রতিভাধর সেই চিত্রনায়িকার আজ জন্মদিন। জীবনের ৪৪টি বসন্ত পেরিয়ে আজ ৪৫ বছরে পা দিলেন শাবনূর। ১৯৭৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর খ্যাতিমান এই নায়িকার জন্ম হয়েছিল যশোরের শার্শা উপজেলায়। তার বাবার নাম শাহজাহান চৌধুরী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে শাবনূর সবচেয়ে বড়। তার ছোট বোনের নাম ঝুমুর, ভাই তমাল।

জন্মদিনে সাধারণত তেমন কোনো আয়োজন রাখেন না শাবনূর। তার ক্যারিয়ারে যখন ভরা জোয়ার, তখনও তাকে সেভাবে ঘটা করে জন্মদিন পালন করতে দেখা যায়নি। বিশেষ এ দিনটিকে সবসময় পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করতেই পছন্দ করেন নায়িকা। এ বছরও তার ব্যতিক্রম না। অস্ট্রেলিয়াতে একমাত্র ছেলে ও ছোট ভাই-বোনদের সঙ্গেই জন্মদিন পালন করবেন তিনি।

কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর যেভাবে শাবনূর হলেন

চলচ্চিত্র জগতের অনেক তারকাই আসল নামের পরিবর্তে ভিন্ন নামে বিনোদন জগতে পরিচিত হন। মান্না, জসিম, সোহেল রানা, রুবেল এবং এ প্রজন্মের শাকিব খান থেকে শুরু করে এ তালিকায় আছে আরও অনেক নাম। চিত্রনায়িকা শাবনূর সে দলেরই একজন। তার আসল নাম শুনলে বেশিরভাগ মানুষই তাকে চিনবেন না। অথচ শাবনূর নামে তিনি দেশব্যাপী সুপরিচিত।

পারিবারিকভাবে শাবনূরের নাম রাখা হয় কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর। পরে স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক এবং তার মেনটর এহতেশাম কাজী শারমিন নাহিদ নূপুরকে বানিয়ে দেন শাবনূর। শাবনূর শব্দের অর্থ হচ্ছে রাতের আলো।

বাংলা চলচ্চিত্রে শাবনূর

১৯৯৩ সালে ‘চাঁদনী রাতে’ ছবির মাধ্যমে পরিচালক এহতেশামের হাত ধরে চলচ্চিত্রে পা রাখেন শাবনূর। প্রথম ছবি ব্যর্থ হলেও প্রয়াত সুপারস্টার নায়ক সালমান শাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে উপহার দেন বেশ কয়েকটি সুপারহিট ও ব্যবসাসফল ছবি। সালমান-শাবনূর জুটিকে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সেরা জুটি হিসেবে এখনো বিবেচনা করা হয়।

সালমান শাহর মৃত্যুর পর নায়ক রিয়াজ, শাকিল খান, ফেরদৌস ও শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন বহু ছবিতে। সেখানেও পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা। অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ একবার ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’, রেকর্ড ১০ বার ‘মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার’ এবং সাতবার ‘বাচসাস পুরস্কার’সহ অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেছেন শাবনূর।

ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবন

২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী অনিক মাহমুদের সঙ্গে শাবনূরের আংটি বদল হয়। ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হয়ে পড়েন শাবনূর। বিয়ের পর ভাই ও বোনদের মতো শাবনূরও স্বামী অনিকের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন এবং সেখানকার নাগরিকত্ব লাভ করেন।

২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর শাবনূর-অনিক জুটির ঘর আলো করে আসে তাদের প্রথম সন্তান পুত্র আইজান নিহান। ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি অনিক মাহমুদের সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বর্তমানে সন্তানকে নিয়ে স্থায়ীভাবে অস্ট্রেলিয়াতেই বসবাস করছেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়ের সুপারহিট এই নায়িকা।

শাবনূর অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা

শাবনূর অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘তুমি আমার’, ‘সুজন সখী’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘হৃদয় আমার’, ‘আসামি বধূ’, ‘মহা মিলন’, ‘বিচার হবে’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘জীবন সংসার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘শেষ ঠিকানা’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘রঙিন উজান ভাটি’, ‘মন মানে না’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘বুক ভরা ভালোবাসা’, ‘ফুল নেব না অশ্রু নেব’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ’, ‘মিলন হবে কতদিনে’, ‘মাটির ফুল’, ‘সবার উপরে প্রেম’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, ‘খেয়া ঘাটের মাঝি’, ‘তুমি বড় ভাগ্যবতী’, ‘নয়ন ভরা জল’, ‘বউ শাশুড়ির যুদ্ধ’, ‘ফুলের মতো বউ’, ‘চার সতীনের ঘর’, ‘বলো না ভালোবাসি’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘ঢাকাইয়া পোলা বরিশালের মাইয়া’ ইত্যাদি।

১০ বার মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার

সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকদের তুমুল ভালোবাসা পেলেও জাতীয় স্বীকৃতি সেভাবে মেলেনি শাবনূরের। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে তিনি কেবল একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। সেটি ২০০৫ সালে ‘দুই নয়নের আলো’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য। তবে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে শাবনূরের প্রাপ্তি অনেক। টানা পাঁচবারসহ মোট দশবার এই পুরস্কার জিতেছেন শাবনূর।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × 3 =