জয় জয়ের জননী

সালেক সুফী: এই মাত্র বাংলার বাঘেরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের গায়ানায় প্রভিডেন্স মাঠে উপর্যুপরি তৃতীয় ওডিআই ম্যাচ ৪ উইকেটে জয়ী হয়ে স্বাগতিক দলকে বাংলাওয়াশ করলো। উপর্যুপরি চতুর্থ ওডিআই  সিরিজ জয়, ধারাবাহিকভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১১ ওডিআই  জয়। ক্রিকেট বিশ্ব আবারো দেখলো অন্তত ওডিআই ফরম্যাটে বাংলাদেশ যে কোনো দলের জন্য আতঙ্কের নাম। নিজেদের দিনে যে কোনো দলের সঙ্গে চোখ রেখেই কথা বলে। রাত জাগা পাখির চোখে আবারো আনন্দ উল্লাস।  সাবাস তামিম দলকে তরঙ্গ বিক্ষুব্ধ সাগরে দক্ষ নাবিক হয়ে সঠিক দিকদর্শনে।

সাবাশ বাংলাদেশের তরুণ বর্তমান প্রজন্মের নাসুম, মেহেদী, সোহানদের।  দক্ষিণ আফ্রিকাকে দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওদের মাঠে হারানোর কৃতিত্ব বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। সাকিব, মুশফিক নেই, সাইফুদ্দিন আসতে পারেনি। ইয়াসির এসেও খেলতে পারেনি। এরপরেও এভাবে সিরিজ জয় বিশাল অর্জন।

সাবাস বাংলাদেশ।  এই বাংলাদেশ জ্বলে পুড়ে ছারখার হলেও মাথা নোয়ায় না। হৃদয়ে গভীরভাবে ধারণ করি জয় জয়ের জননী।  সদ্য শেষ হওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিপর্যস্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রয়োজন ছিল একটি মাত্র জয়ের। টেস্ট সিরিজ ধবল ধোলাই আর টি২০ সিরিজ বিপর্যয়ের পরেও আশার প্রদীপের সলতে নিভু  নিভু জ্বলছিল নিজেদের প্রিয় ওডিআই সিরিজে ব্যাঘ্র বিক্রমে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। প্রতিশ্রুতি মতোই প্রথম দুই ম্যাচ অনায়াসে  জয় করে সিরিজ নিজের করে নিয়েছিল। আজ দেখার ছিল।

আজ নিয়ে পর পর তৃতীয় বার টস জিতলো তামিম। স্পিন সহায়ক উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিং করতে পাঠানো অনুমিত ছিল। দলে বিজয় থাকলে খুশি হতাম। হয়তো তরুণ শান্তকে আশাহত করতে চায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু তারপরেও অভিজ্ঞ বিজয়কে যখন দলে নেওয়া হয়েছে ওকে সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। তাইজুল সুযোগ পেয়েই জাত চিনিয়েছে।  আমি মনে করি, তাইজুল দলের সবচেয়ে আন্ডার রেটেড বোলার। যে উইকেটে স্পিন সহায়তা থাকে সেখানে তাইজুল যে কোনো ফর্মেই উইকেট টেকিং বোলার।

বাংলাদেশের সাঁড়াশি স্পিন আক্রমণের মুখে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং সামর্থ পর্যাপ্ত ছিল না। নিয়মিত বিরতিতে বাংলাদেশ স্পিনার্সরা উইকেট তুলে নিয়েছে। এর মাঝেও নিকোলাস পুরান খেলেছে চ্যাম্পিয়ন ব্যাটসম্যানের মতো।  ওর ৭৩ রান এবং তরুণ কার্টির সঙ্গে ৬৭ রান দলকে লড়াই করার পুঁজি এনে দেয়।  তাইজুলের ৫/২৮, নাসুম ২/৩৯, মুস্তাফিজ ২/২৪ দাঁড়াতেই দিলো না।

তবে এই উইকেটে ১৭৮ চেজ করায় চ্যালেঞ্জ ছিল। এই ধরনের লম্বা সফর শেষে কিছুটা জড়তা আসে। বাংলাদেশ কিন্তু লক্ষের প্রতি অবিচল ছিল। উইকেটে কিন্তু যথেষ্ট টার্ন ছিল।  শান্ত তার উপর রাখা আস্থার প্রতিদান দিতে পারেনি। ১৩ বলে ১ রান করা ইনিংসে জড়তা ছিল। কী ক্ষতি হতো বিজয়কে সুযোগ দিলে। তামিম (৩৪) ছিল স্বীয় ভূমিকায় দেদীপ্যমান। লিটন (৫০)  আবারো প্রমাণ করলো বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান হবার পথে এগিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ওদের যোগাযোগে ৫০ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলো।

কিন্তু সহায়ক উইকেটে ভালো বোলিং করছিলো স্থানীয় তরুণ গুরুকেশ মতি আর আলজারি জোসেফ। ১১৬/৫ উইকেট পতনের পর চাপ হয়েছিল কিছুটা। ধীর-স্থির রিয়াদ ক্রমাগত ভালো খেলতে থাকা সোহানকে সঙ্গী করে ৫ম উইকেটে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে পরিস্থিতি সামাল দেয়। রিয়াদ ২৬ রানে ফিরে গেলেও সোহান (৩২*) এবং মেরাজ ( ১৬*) অবিচ্ছিন্ন ৩২ রান করে জয়ের বন্দরে ভিড়ায় বাংলাদেশের রণতরী।

আমি মনে করি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। বাংলাদেশের অর্জনগুলো সুসংহত করতে হবে। বাংলাদেশ জয়ের মোমেন্টাম ধরে রেখে যদি জিম্বাবুয়েতে আরো একটু গুছিয়ে নিতে পারে এশিয়া কাপ টুর্নামেন্টে সুযোগ পাবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চাপে ফেলতে।

নাসুম, লিটন, সোহান, মেরাজ সিরিজে প্রাপ্তি। ভুলে গেলে চলবে না ওডিআই উইকেটগুলো বাংলাদেশের মতোই ছিল। তবুও বাংলাদেশ যেভাবে ব্যাটিং বোলিং করে নিজেদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে সেটি সব ফরম্যাটে বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা হবে বলেই মনে করি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nineteen − 15 =