জলবায়ু তহবিলে ৩০০ বিলিয়ন ডলার থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১১.৩ বিলিয়ন

আফরোজা আখতার পারভীন: বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে কাজগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অর্থ পাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ২০১০ সালে উন্নত দেশগুলো ২০২০ থেকে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন প্রর্যন্ত প্রকৃত অর্থে দিয়েছে মাত্র ১১.৩ বিলিয়ন ডলার। যদিও এখন এই তহবিলে থাকার কথা ৩০০ বিলিয়ন ডলার। বিসিপিসিএল-ইপি ক্লাইমেট টকসের আলোচনায় উপরের কথাগুলো বলেছেন মনজুরুল হান্নান খান।

বিসিপিসিএল-ইপি ক্লাইমেট টকস-এর অতিথি হয়ে নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মনজুরুল হান্নান খান বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে এবারের কপ হবে একটু ভিন্নধর্মী। বিশ্ব এখনও কোভিড মুক্ত হয়নি। সেইসঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা মারাত্মক ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নেওয়া কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হবে। ফলাফল আসাও কঠিন হয়ে পড়বে। তবে আশা করা যায়, কিছু বিষয় মীমাংসা করা যাবে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর দাবী অনুযায়ী অভিযোজন এবং লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে ফলপ্রসূ সিদ্ধান্তে আসার সক্রিয় চেষ্টা থাকবে। যেমন, গত দুদিন আগে ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের দেশে ব্যাপক ক্ষতি হলো। কপ২৬-এ এ বিষয়ে মতানৈক্য ছিল, দ্রুততার সঙ্গে এ ধরনের দুর্যোগে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ওয়ারশ মেকানিজনের মাধ্যমে লস এন্ড ড্যামেজ তহবিলে অর্থ পাওয়ার কথা। কিন্তু এটা নিয়ে করিগরি আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত তহবিল গঠন করা যায়নি।

তিনি বলেন, এখনও গ্লোবাল এডাপটেশনের সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়নি। এডাপটশনে ১০% অর্থও পাওয়া যায় না। অথচ ৫০% অর্থ পাওয়ার কথা। যেখানে ৩০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিলে থাকার কথা সেখানে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ১১.৩ বিলয়ন ডলার আছে।

বাংলাদেশ ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড’ থেকে এ যাবত ৫টি প্রকল্প পেয়েছে। প্রকল্পে প্রাপ্ত অর্থের ১১০ মিলিয়ন ডলার অনুদান আর ২৫০ মিলিয়ন ডলার হলো ঋণ। স্বল্পোন্নত এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তার মতে, কপ২৭-এর ভবিষ্যত নির্ভর করবে উন্নত দেশগুলোর উপর। কপের মূল ভিত্তি হলো, উন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অনুন্নত দেশগুলোকে আর্থিক, প্রযুক্তি হস্তান্তর, দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান করবে। কিন্তু এ বিষয়ে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সাম্প্রতিক কালে জাপান ভারতকে চোখের চিকিৎসায় অর্থ সহায়তা করে তা জলবায়ু সহায়তার অন্তর্ভুক্ত করেছে। ফলে ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ তৎপরতা মোটেই আগায়নি।

মনজুরুল হান্নান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এটা সবাই মেনে নিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় রয়েছে। এবার একমত হওয়া প্রয়োজন, ‘গ্লোবাল গোল এডাপটেশন ফাইন্যান্স’র সংজ্ঞা নির্ধারণে। এটি না হলে অর্থ সহায়তার বিষয়টি সুরাহা হবে না। তাছাড়া অর্থ সহায়তা ঋণ হলে তা ‘সফট লোন’ হওয়া উচিত। হতে পারে ৪০ বছরের জন্য এবং কম সুদ হারে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর দাখিল করা এনডিসি বাস্তবায়নের জন্য ওএডিসির হিসাবে আগামী ৫ বছরে ৯৩.৭ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এনডিসি বাস্তবায়নের তহবিল কোথায়? বর্তমানে প্রয়োজন মিটিগেশন আর এডাপটেশন তহবিল আলাদা করা। সেইসাথে স্বচ্ছতা আনাও জরুরি। তহবিলের পরিমাণ নির্ধারিত হলে সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ সম্ভব।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, পরিবর্তিত পরিস্তিতিতেও কপ২৭ নিয়ে সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। গত সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মন্ত্রী পর্যায়ের সভায় জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তারা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। তারা বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অর্থ সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। এলডিসি এবং জি৭৭+ চায়না দেশগুলো ইইউকে দূত হিসেবে কাজে লাগাতে পারে।

তার পরামর্শ, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে অর্থ পাওয়া বাংলাদেশের জন্য বেশ কঠিন। কারণ প্রকল্প তৈরির জন্য বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের লোকবল ভাড়া করে প্রকল্প তৈরি করানোর কোনো বিকল্প নেই। কেননা পদ্ধতি জটিল করে রাখা হয়েছে। এনডিসিতে প্রতিশ্রুত শর্তমুক্ত গ্রিন হাইজ গ্যাস দূষণ যে পরিমান নিয়ন্ত্রণ করার কথা তার চেয়ে বেশি করেছে। এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার আমরা কয়লা ব্যবহার করতেই পারি। এখন শর্তযুক্ত এনডিসি বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প তৈরি করে দ্রুত দাখিল করতে হবে।

তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, প্রগ্রেসিভ এনডিসি না করলে শতকের শেষে তাপমাত্রা ২.৪ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে যদি সব সময় ৩৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকে তাহলে মানুষ রক্ষা পাবে না। তাই বড় দূষণকারী দেশগুলোর যদি নেট জিরো পলিসি না থাকে হাহলে ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না। এটার জন্য উন্নত দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two + 3 =