প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা
জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করা ও বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে জাপানের টোকিওতে আজ (৩০ মে) অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার।’ অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
গুরুত্বপূর্ণ এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বাংলাদেশ ও জাপানের ঐতিহাসিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে চলমান সংস্কার কার্যক্রম থেকে কার্যকর ফল অর্জনের ব্যাপারে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। ড. ইউনূস মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগের (এমআইডিআই) গুরুত্বের ওপর জোর দেন; পাশাপাশি, বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর হিসেবে মাতারবাড়ী বন্দর বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য সুযোগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে আঞ্চলিক সংযোগ সুবিধা উন্নত করবে বলে উল্লেখ করেন।
টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাস, জাপানের মিনিস্ট্রি অব ইকোনোমি, ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমইটিআই) ও জাপান-বাংলাদেশ কমিটি ফর কমার্শিয়াল অ্যান্ড ইকোনোমিক কো-অপারেশনের (জেবিসিসিইসি) সহযোগিতায় সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করা হয় । এ আয়োজনে জাপানের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ ও সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীসহ শতাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।
প্রধান উপদেষ্টা ছাড়া অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী ও এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ । জাপানের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন এমইটিই’র পার্লামেন্টারি ভাইস-মিনিস্টার শিনজি তাকেউচি ও জেবিসিসিইসি’র চেয়ারম্যান ফুমিয়া কোকুবু। আয়োজকদের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন জেট্রোর চেয়ারম্যান ও সিইও নোরিহিকো ইশিগুরো এবং জাইকার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শোহেই হারা।
অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে নতুন জাপানি বিনিয়োগের ঘোষণাও দেওয়া হয়। গ্যাস মিটার সংযোজনের জন্য বাংলাদেশে প্রথমবারের মত কারখানা স্থাপন করবে ওনোডা আইএনসি.। একইসাথে, বাংলাদেশ ন্যাক্সিস কো. লিমিটেড পোশাক শিল্পের সহায়ক উপকরণ তৈরির জন্য একটি নতুন কারখানা স্থাপন করবে। উভয় প্রতিষ্ঠানই আড়াইহাজারে জাইকার অর্থায়ন ও সহযোগিতায় গড়ে ওঠা বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (বিএসইজেড) তাদের কারখানা নির্মাণ করবে।
এছাড়া, গ্ল্যাফিট আইএনসি, মুসাশি সেইমিতসু ইন্ডাস্ট্রি কো. লিমিটেড ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভবিষ্যতে একটি ইলেকট্রিক সাইকেল উৎপাদন কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্বের উদ্যোগসমূহের ঘোষণা জাপান থেকে বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আরও ত্বরান্বিত করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের ব্যবসায়িক খাতের সম্ভাবনার প্রতি জাপানি ব্যবসায়ী মহলের আস্থা ও চলমান সংস্কারের ফলপ্রসু বাস্তবায়নের প্রতি জাপানের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের আশাবাদের স্পষ্ট প্রতিফলন।
জেট্রোর চেয়ারম্যান ও সিইও নোরিহিকো ইশিগুরো বলেন, “বাংলাদেশে ইতোমধ্যে তিন শ’র বেশি জাপানি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর মাধ্যমেই বোঝা যায় তারা বাংলাদেশের প্রতি জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলো অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ সরকার জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলোর মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে এবং অর্থনৈতিক সংস্কার, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি ও আকর্ষণীয় প্রণোদনার মাধ্যমে তাদের অবদানকে স্বীকৃতি প্রদান করবে।”
জাইকার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শোহেই হারা সমাপনী বক্তব্যে বলেন, “বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে নীতিগত সংস্কার, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সমক্ষমতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নে জাইকা সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”