টপ-বটম লেস বাংলাদেশের শোচনীয় সিরিজ পরাজয়

সালেক সুফী

বিশ্বকাপ হাত ছোয়া দুরুত্বে। নিউ জিল্যান্ড বিশ্বকাপ স্কোয়াডের অধিকাংশ মূল খেলোয়াড়দের বিশ্রামে রেখে কিছুটা খর্ব শক্তির দল পাঠিয়েছিল বাংলাদেশে।  তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজটির প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টি গিলে ফেলে। একতরফা দ্বিতীয় ম্যাচে ৮৬ রানের জয় পায় নিউ জিল্যান্ড। আর তৃতীয় ম্যাচে টপ লেস বটম লেস বাংলাদেশকে ৭ উইকেটের বিশাল ব্যাবধানে বিদ্ধস্ত করে মধুর প্রতিশোধ নেয় ব্ল্যাক ক্যাপস/কিউই বাহিনী।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্বে থাকা বাংলাদেশ একটি হতাশ বিবর্ণ দল নিয়ে খেলতে যাবে বিশ্বকাপ।  আনফিট থাকায় সেই দলে থাকবে না সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল।  সিরিজে (১-০) পিছিয়ে থাকার পর কাল ছিল বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে সমতা আনার মিশন। প্রথমে ব্যাটিং করে মাত্র ৩৩.৫ ওভারে ১৭১ গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।  সেই রান তাড়া করে অনায়েসে ৩৪.৫ ওভারে ১৭৫/৩ করে নিউ জিল্যান্ড। ৭ উইকেটের বিশাল ম্যাচ জয়। ২-০ ব্যাবধানে সিরিজ জয়। প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টি বিঘ্নিত না হলে হতে পারতো ধবল ধোলাই।

টস জয় করে মেঘে ঢাকা আকাশের নিচে কেন প্রথমে ব্যাটিং সিদ্ধান্ত নিলো অন্তর্বর্তীকালীন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত সেই জানে। সবাই জানে বাংলাদেশের এখন প্রধান সমস্যা টপ অর্ডার ব্যাটিং। কাল আবার তামিম, লিটন কেউ ছিল না। নিউ জিল্যান্ড বোল্ট এবং ফার্গুসনের সঙ্গে ফিরিয়ে এনেছিল এডাম মিলনেকে।  আর তাতেই হুড়মুড় করে ধসে পড়লো টপ অর্ডার।  ৮ রানে ২ উইকেট, ৩৮ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর শান্ত-মুশফিক ৫৩ রানের একটি জুটি গড়েছিল।

দুর্ভাগ্য মুশফিকের ফার্গুসনের একটি দুরন্ত গতির ইনসুইং বল ব্যাটের ভেতরের দিকের কানায় লেগে উইকেট ভেঙে দিলো। পানি পানের বিরতির পর হয়তো কিছুটা মনসংযোগ হারিয়েছিল মুশফিক। শান্ত খেলছিল সাবলীল সাচ্ছন্দে।  মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ শান্তর সঙ্গে ৪৯ রানের জুটি গড়ার পর মিলনের আরো একটি ভালো বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়ে বিদায় নেওয়ার পর তাসের ঘরের মতোই ঝরে পরে বাংলাদেশ ইনিংস।

শেষ ৫ উইকেট পড়ে যায় মাত্র ১৫ রানে। মিলনে ৪/৩৪, বোল্ট ২/১৮ দখল করে বেঙ্গল টাইগার বধে মুখ্য ভূমিকা রাখে। অধিনায়ক শান্ত ৮৪ বলে ৭৬ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস খেলে বাংলাদেশি অধিনায়কের অভিষেকে আমিনুল ইসলামের মাইলফলক ভেঙে দিলো। মাহমুদুল্লাহ ২১ রানের সংক্ষিপ্ত ইনিংসে চতুর্থ বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসাবে ৫০০০ ওডিআই রানের মাইল ফলক অর্জন করল।

কাকতলীয় ভাবে নিউ জিল্যান্ড ব্যাটিংয়ের সময় মেঘ কেটে যায়। শরিফুল, হাসান মাহমুদ ভালো বোলিং করলেও ছন্দে থাকা উইল ইয়ং (৭০) এন্ড হেনরি নিকোলস (৫০) সহজেই নিউ জিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে জয়ী করে। সামান্য পুঁজি নিয়ে নাটকীয় কিছু করা ছিল বাংলাদেশ বোলারদের সাধ্যের বাইরে।  টপ লেস, বটম লেস ব্যাটিং নিয়ে বাংলাদেশ এখন একটি হতাশ দলের প্রতিচ্ছবি।

এশিয়া কাপের ব্যর্থ মিশনের পর অনেকেই ভেবেছিল তামিম, মাহমুদুল্লাহ ফিরে আসলে ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।  নাটের গুরু হেড কোচ হাতুরাসিংহে  দল ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশ ফিরলেন দেরিতে। দেশে থেকেও খেলার প্রয়োজন বোধ করলো না অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। চেয়ে চেয়ে দেখলো দলের আত্মসমর্পন।

৭৫% ফিট তামিমকে নিয়ে বিশ্বকাপ আসরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক না বেঠিক সেই প্রসঙ্গে ভিন্ন ভাবে লিখবো। কিন্তু লিটন যখন অনিশ্চিত ফর্মে, তানজিদ তামিম বা অন্য কেউ যখন ওপেনিং জুটিতে সফল না তখন বাংলাদেশ কাদের ভরসায় বিশ্বকাপের মতো কঠিন মিশনে ঝুঁকি নিলো? মাহমুদুল্লাহকে ফিরিয়ে নিয়ে শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে।

বলবো বাংলাদেশের মিশন ব্যর্থ হলেও নিউ জিল্যান্ড কিন্তু যথেষ্ট অর্জন  করেছে। উইল ইয়ং, হেনরি নিকলস, টম ব্ল্যান্ডেল ভালো ব্যাটিং করেছে।  ইশ সোধি, ট্রেন্ট বোল্ট, এডাম মিলনে ভালো বোলিং করলো, দলটি দক্ষিণ এশিয়ার পরিবেশ, উইকেটের সঙ্গে ধাতস্থ হলো। সিরিজ জয় করে মধুর প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গেলো।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

19 − two =