টিভি-ওটিটিতে হতাশার বছর

টিভি নাটকের সুসময় আর নেই। টিভি চ্যানেলের চেয়ে ইউটিউবের জন্য নাটক নির্মাণ করতেই এখন বেশি আগ্রহী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো। ইউটিউব ঘিরে যেসব নাটক নির্মিত হয়, তাতে কাজ করতে অভিনয়শিল্পীদেরও আগ্রহ বেশি। কারণ, এসব কাজে বাজেট বেশি থাকে। তারকারা পারিশ্রমিক পান কয়েক গুণ বেশি। শুটিংও হয় তুলনামূলক বড় আয়োজনে। তবে এ বছর ইউটিউবের নাটকও অতটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেশির ভাগ দর্শক মনোযোগী হয়েছেন টকশোর প্রতি। ফলে নাটকের দর্শক এ বছর উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। দর্শকের এই অনাগ্রহের আরেকটি বড় কারণ, নাটকের গল্পের বৈচিত্র্যহীনতা। যেসব নাটক বাংলাদেশে এখন নির্মাণ করা হয়, প্রায় সবই কাছাকাছি গল্পের। অভিনয়-নির্মাণ-গল্প—সবকিছু মিলিয়ে নাটকের মান আরও কমেছে। সব মিলিয়ে যে নাটক একসময় ছিল বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম, তার গুরুত্ব দিন দিন কমছেই।

টিভি চ্যানেল প্রচারিত একক নাটক যেমন আলোচনায় আসেনি, জনপ্রিয় হয়নি কোনো ধারাবাহিক নাটকও। এর বাইরে দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে কোনো বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠানও চোখে পড়েনি। এই খরার মধ্যে কিছুটা হলেও আশা জিইয়ে রেখেছে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’। এটি নিয়ে বরাবরের মতো এ বছরও আগ্রহ ছিল। যেসব নাটক এ বছর দর্শকের পছন্দের তালিকায় ছিল, তার মধ্যে রয়েছে ‘বুক পকেটের গল্প’, ‘তিথিডোর’, ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়’, ‘স্মৃতিস্মারক’, ‘শেষমেশ’, ‘ভিতরে বাহিরে’, ‘সন্ধ্যা ৭টা’, ‘একদিন স্বপ্নের দিন’, ‘তখন যখন’, ‘লাভ লাইন’, ‘শেষ কিছুদিন’, ‘হাজত’, ‘প্রেমকাব্য’, ‘এইদিন সেইদিন’ ইত্যাদি।

টিভি চ্যানেল ও সিনেমা হলের বিকল্প হিসেবে এ দেশে সম্ভাবনাময় হয়ে দেখা দিয়েছিল ওটিটি। নানা জনরার কনটেন্ট দিয়ে কয়েক বছর ধরে আলোচনায় ছিল ওয়েব প্ল্যাটফর্ম। তবে এ মাধ্যমে এ বছর ধস নেমেছে। দেশের সব ওটিটি প্ল্যাটফর্ম মিলিয়ে ২০২৪ সালে ৩৩টি কনটেন্ট প্রচারিত হয়েছে, এর মধ্যে সিরিজ ছিল ১৪টি।

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে এসেছে ‘সিনপাট’, ‘টিকিট’, ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’, ‘মনোগামী’, ‘কালপুরুষ’, ‘বাজি’, ‘ফরগেট মি নট’, ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’, ‘২ষ’ ইত্যাদি। হইচইয়ে প্রচারিত হয়েছে ‘রুমি’, ‘গোলাম মামুন’ ও ‘রঙিলা কিতাব’। বঙ্গতে এসেছে ‘অসময়’, ‘লাভ স্টোরিজ’, ‘ফিমেল ৪’, ‘কলকাতা ডায়েরিজ’, ‘সেকশন ৩০২’, ‘মেসমেট’ ও ‘অপুরুষ’। বিঞ্জ প্রচার করেছে ‘ফ্রেঞ্জি’, ‘মায়া’, ‘টাইগার’ ও ‘আরারাত’। এ ছাড়া দীপ্ত প্লেতে দেখা গেছে ‘ইউএনও স্যার’, ‘মায়া’, ‘পয়জন’, ‘ত্রিভুজ’ ও ‘বিভাবরী’।

তবে হতাশার বিষয়, এত কনটেন্টের ভিড়ে জনপ্রিয় সিনেমা-সিরিজ হাতে গোনা। ব্যাপকভাবে দর্শকের মধ্যে আলোচিত হয়েছে, এমন কনটেন্ট এ বছর নেই বললেই চলে। প্রচার-প্রচারণারও যথেষ্ট ঘাটতি লক্ষ করা গেছে। বেশির ভাগ কনটেন্ট এসেছে কোনো ধরনের প্রচার ছাড়াই। ফলে দর্শকরাও জানতে পারেন না, কোন কনটেন্ট কখন আসছে। সব মিলিয়ে যেসব ঘাটতি রয়েছে দেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্মে, নতুন বছরে সেটার সমাধান হবে—এটাই প্রত্যাশা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

15 − 12 =