টি২০ বিশ্বকাপ: দারুন ভারসাম্যপূর্ণ দল নিয়ে  শিরোপা অর্জনের অন্যতম ফেভারিট ভারত 

সালেক সুফী

চরম ভারত বিদ্বেষীরাও দ্বিধাহীন ভাবেই স্বীকার করবে বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটে সকল ফরম্যাটেই পরাশক্তি ভারত। তবুও কিন্তু টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, ওডিআই, টি২০ বিশ্বকাপে প্রতিবার ফেভারিটদের তালিকায় থাকলেও শিরোপার দেখা পায়নি ভারত। কেউ মানতে দ্বিধা করবে না আইপিএল বিশ্ব ক্রিকেটের খোল নলচে পাল্টে দিয়েছে। ক্রিকেটের সঙ্গে বলিউডকে সম্পৃক্ত করে বিনোদনের পর্যায়ে উন্নীত এ সংক্ষিপ্ত ভার্সন টিকে। বিশ্বের সব দেশের সেরা টি২০ খেলোয়াড়দের পদচারণায় আইপিএল এখনো বিশ্বের যে কোনো বৈষয়িক টুর্নামেন্টের মতো আকর্ষণীয়। ভারতে এখন বিশ্বমানের ম্যাচজয়ী এতো ক্রিকেটারের সমাহার যে চাইলেই প্রায় দুইটি সমশক্তির বিশ্বমানের দল গড়তে পারবে ভারত। এহেন ভারত কিন্তু এবারের টি২০ বিশ্বকাপ জয়েরও অন্যতম ফেভারিট দল।

সক্ষিপ্ত ভার্শনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ যখন প্রুডেনটিয়াল ট্রফি নাম ১৯৭৫ সালে ক্রিকেট জননীর দেশ ইংল্যান্ডে শুরু হয় তখন ভারত কিন্তু এই ফরম্যাটে ছিল নাদান। ১৯৭৫, ১৯৭৯ হালে পানি পায়নি। ১৯৮৩ সালে কপিল দেবের নেতৃত্বে ভারত তখনকার বিশ্বত্রাস সর্বজয়ী ইংল্যান্ড দলকে লর্ডসে হারিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। সবাই জানে বিশাল ভারতে ক্রিকেটকে ভারত পূজা করে।  নানা ধরনের বিশ্বমানের ঘরোয়া ক্রিকেট ভারতের ক্রিকেটকে করেছে সমৃদ্ধ। দেশে এবং বিদেশে দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারত এখন শীর্ষস্থানীয় দল।

ভারতীয় স্কোয়াড: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), হার্দিক পান্ডিয়া (সহ অধিনায়ক), ইয়াসাবি জশোয়াল, বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, আকসার প্যাটেল, রবীন্দ্র জাদেজা, শিবাম দুবে, রিশাভ প্যান্ট, সানজু স্যামসং, আর্শদীপ সিংহ, জাসপ্রিত বুমরা, কুলদীপ যাদব, মোহাম্মদ সিরাজ, চাহাল।

আমার মনে হয় না টি২০ ফরম্যাটের জন্য উপযোগী বিধ্বংসী বোলিং, শক্তিশালী পেস আক্রমণ বা ম্যাচজয়ী বহুমাত্রিক স্পিন আক্রমণের এতো বিচিত্র সমাহার আর কোনো দলের আছে। এমনিতেই এবারের আইপিএলে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অন্তত ৩০ জন খেলোয়াড় থেকে ম্যাচ, উইকেট, পরিবেশ পরিস্থিতি এবং প্রতিদ্বন্দ্বী বিবেচনায় ১৫ জনের স্কোয়াড বেছে নিতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। হয়ত রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলির শেষ টি২০ বিশ্বকাপ। ম্যানেজার হিসাবেও রাহুল দ্রাবিড়ের শেষ টুর্নামেন্ট। ভক্ত অনুরাগীদের প্রত্যাশা রোহিত যেন অন্তত একটি বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ পায়।

দলের ম্যাচজয়ী তিন যুগ সৃষ্টিকারী প্রতিভা রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলী, জাসপ্রিত বুমরা একক নৈপুণ্যে দলকে যে কোনো ম্যাচে জয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম। সেই সঙ্গে হার্দিক পান্ডিয়া, সূর্যকুমার যাদব, রিসাব পান্ট নিজেদের দিনে বিধ্বংসী। এবার আইপিএলে কিন্তু ইয়াশাবি জশোয়াল এবং সানজু স্যামসন তুখোড় ফর্মে ছিল। রবীন্দ্র জাদেজার চৌকষ ভূমিকা এবং কুলদীপ যাদবের উইকেট নেওয়ার সহজাত দক্ষতা দলের আক্রমণকে ক্ষুরধার করবে। ভারত জেনেশুনেই শক্তিশালী স্পিন আক্রমণ বেছে নিয়েছে। আমেরিকার ড্রপ ইন পিচ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ধীর, ঘূর্ণি পিচগুলোর বিবেচনায় দুই এমনকি তিন স্পিনার নিয়েও খেলতে পারে ভারত।

ভারতকে গ্রুপ বি তে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান, ইউরোপের দেশ আয়ারল্যান্ড, স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার সঙ্গে খেলতে হবে। পাকিস্তান-ভারত ক্রিকেট যুদ্ধ নিয়ে ক্রিকেট বিশ্ব টালমাতাল। এই স্নায়ুক্ষয়ী যুদ্ধে জয় পরাজয় নিশ্চিত করে বলতে পারা অসম্ভব। বিশ্ব আসরে ভারত এগিয়ে থাকলেও পাকিস্তান কিন্তু তুখোড় দল। আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ডের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে পাকিস্তান কিন্তু ভালো প্রস্তুত।

অন্যদিকে আইপিএল শেষে ভারতের প্রস্তুতির একমাত্র ম্যাচ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অনুশীলন। এই গ্রুপে আয়ারল্যান্ড একটি দলের জন্য মাথা ব্যাথার কারণ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার খুব একটা সুযোগ দেখি না। ভারত পাকিস্তান সবার ধারণা সহজেই গ্রুপ অফ এইটে যাবে। সেখানেই হবে আসল যুদ্ধ। যে কোনো দল যেকোনো দলকে হারিয়ে দিতে পারবে নিজেদের দিনে। কিন্তু ১৫ জন উঁচু মানের ফর্মে থাকা ভারতীয় যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছে বলাই যায়। ফিল্ডিয়ের ক্ষেত্রেও যে এই দল পিছিয়ে আছে বলা যাবে না।

কিন্তু অতীত ইতিহাস থেকে দেখা গেছে তুখোড় দল নিয়েও ভারত ট্রফি জয় এমনকি ফাইনালে পৌঁছতে পারেনি। যদি এমন হয় সব সমীকরণ পেরিয়ে ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল খেললো তাহলে তো সোনায় সোহাগা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nineteen − 3 =