টি২০ সিরিজে জয়ের ধারা কী অব্যাহত থাকবে?

সালেক সুফী: বীরপ্রসবা চট্টগ্রামের সাগরিকায় আজ থেকে শুরু হচ্ছে  বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড টি২০ সিরিজ। তিন ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের স্পোর্টিং উইকেটে।  টি২০ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে সম্প্রতি টি২০ সিরিজে ৩-০ ম্যাচ জিতে ধবল ধোলাই উপহার দিয়ে বাংলাদেশ এখন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে। নানা মাইলফলক গড়া সমাপ্ত বৃষ্টিবিঘ্নিত ওডিআই সিরিজেও সহজেই ২-০ হারিয়েছে আয়ারল্যান্ড দলকে। সেখান থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমিকরা স্বপ্ন দেখতেই পারে আরো একটি সিরিজ সহজেই জিতে নেওয়ার।

ইংল্যান্ড সিরিজের সঙ্গে পার্থক্য হলো প্রথম ম্যাচ সাগরিকায় জয়ের পর পরবর্তী ম্যাচ দুটি হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুর্গম দুর্গ মীরপুর শেরেবাংলায়। এবারের তিনটি খেলাই কিন্তু শুষ্ক, স্পোর্টিং সাগরিকায়।  আয়ারল্যান্ড কিন্তু বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর সম্প্রতি টি২০ ক্রিকেটে ভালো খেলছে। ওডিআই সিরিজে ধবল ধোলাইয়ের পর স্বভাবতই ওদের মাঝে প্রতিজ্ঞা থাকবে নিজেদের সবকিছু নিয়ে অর্জনের। বাংলাদেশের তাই আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ  নাই। বদলে যাওয়া ক্রিকেট দর্শনে তাই খেলতেই হবে ভয়-ডরহীন আক্রমণাত্মক ক্রিকেট।

স্কোয়াড: বাংলাদেশ: সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস, রনি তালুকদার, নাজমুল হাসান শান্ত, তাওহীদ  রিদয়, শামীম হোসাইন, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, রিশাদ হোসাইন এবং জাকের আলী অনিক।

সবাই জানে টি২০ স্কোয়াডে বিভিন্ন কারণে নেই তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ। নিজেদের  প্রমাণ করতে বার্থ হওয়ার কারণে ছেঁটে ফেলা হয়েছে আফিফা হোসেন আর নুরুল হাসান সোহানকে। বিপিএল ২০২৩ এবং স্থানীয় ক্রিকেটে ভালো খেলে দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে জাকের আলী অনিক। দলের ব্যবস্থাপনার চাহিদায় দলে নেওয়া হয়েছে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসাইনকে।  ফিরিয়ে আনা হয়েছে পেসার শরিফুল ইসলামকে। আমি পরিবর্তনগুলোকে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতেই বিবেচনা করি।

বাংলাদেশ সম্প্রতি মেহেদী মিরাজের চৌকষ ভূমিকা এবং পেস বোলারদের উন্নত আগ্রাসী ভূমিকার কারণে ৬ জন স্পেশালিস্ট বোলার নিয়ে খেলছে। জানিনা প্রথম খেলায় আজ সেই ধারা অব্যাহত থাকবে কি না। তবে সাকিব অবশ্যই ভিন্নধারার বিচক্ষণ অধিনায়ক।  প্লেয়িং ইলেভেন, টস পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ম্যাচ পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তনে মুন্সিয়ানা থাকবে।

লিটন, রনি ধীরে ধীরে কার্যকরী ওপেনার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজে সংক্ষিপ্ত অথচ কার্যকরী আক্রমণাত্মক ইতিবাচক ইনিংস খেলেছে দলে ফিরে আসা রনি। অন্যদিকে লিটন আছে নিজের ছন্দে। তিন নাম্বার পজিশনে নাজমুল শান্ত এখন পরিণত।  এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারবাহিক ব্যাটসম্যান শান্ত। অথচ এই লিটন, শান্তকে নিয়ে কত কথা বলেছেন কিছু ধৈর্য্যহীন মিডিয়া। দুইজন ওদের উপর করা বিনিয়োগ সুদে মূলে পরিশোধ করছে।

৪ নম্বর পজিশনে ব্যাটিং করা অনেকটা ম্যাচ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। দ্রুত উইকেট পড়ে গেলে সাকিব হয়তো নিজে আসবে ইনিংসকে স্থায়িত্ব দিতে।  অন্যদিকে ভালো সূচনা হলে নবীন তাওহীদ হৃদয় এই পজিশনে হবে আদর্শ খেলোয়াড়। হৃদয়ের ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে সে লম্বা রেসের ঘোড়া। হাতে আছে বিচিত্র আক্রমণাত্মক স্ট্রোকস, আছে সাহস, দৃঢ়তা। এখন প্রশ্ন হলো ৬ নাম্বার পজিশনে কে খেলবে? আমি মেহেদী মিরাজকে খেলানোর সুপারিশ রাখবো।

তুখোড় অফ স্পিনার মেহেদির ব্যাটিং স্বরূপে ফিরে  আশা সম্প্রতি সময়ের বড় অর্জন। মিরাজের সাফল্য কিন্তু বাংলাদেশকে অনুপ্রাণিত করে একজন কম ব্যাটসম্যান নিয়ে দল সাজানোর। অনেক দিন থেকেই শামীম পাটোয়ারীকে ফিনিশার হিসাবে ভাবা হচ্ছে।  এবার ওকে সুযোগ দেওয়া যায়। দলে নেওয়া হয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেট ভালো খেলা জাকের হাসানকে। জাকের মূলত টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।  সিরিজে কোনো একটা ম্যাচে টপ অর্ডারের কাউকে বিশ্রাম দিয়ে ওকে যাচাই করা যেতে পারে।

এখন প্রশ্ন নাসুমকে খেলানো হবে, না কি রিশাদকে সুযোগ দেওয়া হবে। আমি প্রথম ম্যাচে নাসুমকে খেলানোর সুপারিশ করবো। সিরিজ জয় নিশ্চিত হবার পর রিশাদকে যাচাই করা যেতে পারে। এর পর তাসকিন, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজ/শরিফুলকে নিয়ে সাজানো হতে পারে পেস আক্রমণ। অবশ্য উইকেট, আকাশের অবস্থা সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে জয়সম্ভবা একাদশ নির্বাচন করবে টিম ম্যানেজমেন্ট। বাংলাদেশের জয় ছাড়া বিকল্প দেখছি না। যদিও এই ফরম্যাটে আয়ারল্যান্ড ভালো দল।  তবে বাংলাদেশ এখন জয়ের ধারায়।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

17 − 15 =