টেল-এন্ডারে দৃঢ়তায় প্রথম দিন ৩শ’ ছাড়ালো বাংলাদেশ

ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের হাফ-সেঞ্চুরি ও শেষ দুই ব্যাটারের দৃঢ়তায় নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনই ৩শ’ রান ছাড়িয়েছে  বাংলাদেশ। প্রথম দিন শেষে ৮৫ ওভারে ৯ উইকেটে ৩১০ রান করেছে টাইগাররা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৬ রান করেন জয়। দলীয় ২৯০ রানে নবম ব্যাটারকে হারানোর পর শেষ উইকেট জুটিতে অবিচ্ছিন্ন ২০ রান যোগ করে বাংলাদেশের রান ৩শ পার করেন তাইজুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম। তাইজুল ৮ ও শরিফুল ১৩ রানে অপরাজিত আছেন। আলো স্বল্পতার কারনে দিনের খেলা ৫ ওভার বাকী ছিলো।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ইনজুরিতে এই টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শান্ত। দেশের ১৩তম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে পথচলা শুরু হলো শান্তর।

বাংলাদেশকে ভালো সূচনা এনে দিতে নিউ জিল্যান্ডের বোলারদের সাবধানে খেলতে শুরু করেন দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসান। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে জাকিরের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের লেগ বিফোরের রিভিউ ব্যর্থ হয়। প্রথম ১০ ওভারে ২৭ রান তুলে উইকেটে সেট হয়ে যান জয়-জাকির।

১৩তম ওভারে জয়-জাকিরের জুটি ভাঙেন নিউজিল্যান্ড স্পিনার আজাজ প্যাটেল। কাট শট খেলতে গিয়ে ভুল টাইমিংয়ে বোল্ড হন জাকির। ৪১ বল খেলে ১টি চারে ১২ রান করেন তিনি। জয়ের সাথে উদ্বোধনী জুটিতে ৭৫ বলে ৩৯ রান যোগ করেন জাকির।

জাকিরের বিদায়ে উইকেটে এসে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের উপর চড়াও হন শান্ত। প্যাটেলকে ছক্কা মেরে রানের খাতা খুলেন টাইগার দলনেতা। এরপর প্যাটেলকে আরও ২টি করে চার-ছক্কা মারেন তিনি।

স্বাচ্ছেন্দ্যে খেলতে থাকা শান্তকে ফেরাতে ২৩তম ওভারে অকেশনাল স্পিনার গ্লেন ফিলিপসকে আক্রমনে আনে নিউজিল্যান্ড। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথমবারের মত বল করতে এসে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই শান্তকে শিকার করেন ফিলিপস। ক্রিজ ছেড়ে ছক্কা মারতে গিয়ে মিড অনে কেন উইলিয়ামসনকে ক্যাচ দেন ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৫ বলে ৩৭ রান করা শান্ত। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৭১ বলে ৫৩ রান যোগ করেন জয়-শান্ত।

শান্ত ফেরার ১৬ বল পর মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। প্রথম সেশনে ২ উইকেটে ১০৪ রান করে টাইগাররা। ৪২ রান নিয়ে বিরতিতে যান জয়।

বিরতির পর টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে ৯৩ বল খেলেন জয়। চার নম্বরে নামা মোমিনুল হককে নিয়ে রানের চাকা ঘুড়াতে থাকেন জয়। ৪১তম ওভারে প্যাটেলের বলে মিচেলের হাতে জীবন পান ৬৪ রানে থাকা জয়।

হাফ-সেঞ্চুরি পেরিয়ে সেঞ্চুরির পথে হাঁটচ্ছিলো জয়-মোমিনুলের জুটি। কিন্তু ইনিংসের ৫৩তম ওভারে ফিলিপসের বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেলকে ক্যাচ দেন ৪টি চারে ৭৮ বলে ৩৭ রান করা মোমিনুল। জয়ের সাথে ১৭১ বলে ৮৮ রানের জুটি গড়েন মোমিনুল।

মোমিনুল ফেরার পরের ওভারে সাজঘরে ফিরেন টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পথে থাকা জয়। স্পিনার ইশ সোধির বলে স্লিপে ড্যারিল মিচেলকে ক্যাচ দেন তিনি। ১১টি চারে ১৬৬ বলে ৮৬ রানের ইনিংস খেলেন জয়।

চা-বিরতির ঠিক আগ মুর্হূতে ৫ বল ও ৪ রানের ব্যবধানে বিদায় নেন মোমিনুল-জয়। এরপর দ্বিতীয় সেশনের বাকী ৯ বল বিপদ ছাড়া পার করে দেন ক্রিজে দুই নতুন ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও অভিষেক হওয়া শাহাদাত হোসেন। ৪ উইকেটে ১৮৫ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

বিরতি থেকে ফিরে ৫৮তম ওভারে ২শ স্পর্শ করে বাংলাদেশ। এরপরই উইকেট বিলিয়ে দেন মুশফিক। ক্রিজ ছেড়ে প্যাটেলের বলে মারতে গিয়ে মিড অফে উইলিয়ামসনকে ক্যাচ দেন  ২২ বলে ১২ রান করা  মুশফিক। শাহাদাতের সাথে পঞ্চম উইকেটে ২৬ রান যোগ করেন মুশি।

পরের দুই উইকেট জুটিও বড় স্কোর গড়তে পারেনি। শাহাদাত ও মেহেদি হাসান মিরাজ ২৩ এবং শাহাদাত ও উইকেট নুরুল হাসান ২৮ রান যোগ করেন। ৩টি চারে ২৪ রান করা শাহাদাতকে এবং ৫টি চারে ২৯ রান করা নুরল শিকার হন ফিলিপসের।  পেসার কাইল জেমনিসন ২টি চারে ২০ রান করা মিরাজকে ফিরিয়ে দিলে ২৭৬ রানে অষ্টম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

দলীয় ২৯০ রানে নবম ব্যাটার হিসেবে নাইমকে তুলেন নেন জেমিসন। এতে ৩শর নিচে গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ উইকেটে ১৯ বলে অবিচ্ছিন্ন ২০ রান তুলে বাংলাদেশের স্কোর ৩শ পার করেন তাইজুল ও শরিফুল।

আলো স্বল্পতার কাছে ৫ ওভার আগেই দিনের খেলা শেষ হয়। নাইম ১৬ রানে থামলেও, তাইজুল ৮ ও শরিফুল ১৩ রানে অপরাজিত আছেন।

নিউ জিল্যান্ডের ফিলিপস ৫৩ রানে ৪ উইকেট নেন। জেমিসন-প্যাটেল ২টি করে এবং সোধি ১টি উইকেট নেন।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

7 − six =