টেস্ট অঙ্গনের তলানিতে ধাবমান বাংলাদেশ

সালেক সুফী

টেস্ট ক্রিকেটের কুলিন পরিবারের নিচের সারির দুই দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর বাংলাদেশের মল্লযুদ্ধের প্রথম টেস্ট ২০১ রানের বিশাল ব্যাবধানে হেরে তলানির পথে বাংলাদেশ। যে ভাবে খেলছে অনেকটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় আরো একটি সিরিজ ধবল ধোলাই শুধু সময়ের অপেক্ষা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস ৪৫০/৯ ডিক্লেয়ার করার পর বাংলাদেশ যে ২৬৯/৯ করে ফলো অন এড়াতে পেরেছে সেটি বড় অর্জন।বলতে পারেন চতুর্থ সকালের ভেজা পরিবেশে বল করার সিদ্ধান্ত নেয়াটাও মুন্সিয়ানা ছিল. তাসকিনের তুখোড় বোলিং (৬/৫৪) বাংলাদেশের টার্গেট ভদ্র গোছের রেখেছিলো। দুই দলের ক্যাচ ছেড়ে দেয়ার মহড়ার কথা নাই বা বলি, যে উইকেটে বাংলাদেশ দল প্রতিপক্ষকে ১৫২ রানে গুটিয়ে দিবে সেখানে বাংলাদেশ ১৩২ রান বা ১৪০ করবে এটাই এখন টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের স্বাভাবিক পরিণতি। আমি বাংলাদেশ ২০১ রানে হেরে যাওয়ায়  বিস্মিত হই নি বর্তমান দলের সামর্থ নেই পেস অথবা স্পিন কোন ধরণের বোলিং সহায়ক উইকেটে কোন দলের বিরুদ্ধে ব্যাটিং করে  জয় করার। খেলোয়াড়দের সামর্থ ,নিবেদনের ঘাটতি আছেই ,সেই সঙ্গে দেশের লংগার ভার্সন ঘরোয়া ক্রিকেট অবকাঠামো আদৌ ম্যান সম্পন্ন ক্রিকেট খেলার উপযোগী  নয়.পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় এখন সুদূরের সুখস্মৃতি।

সদ্য সমাপ্ত এন্টিগা টেস্টে সুসময় এসে ছিল. ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে ভালো করে ২২৮ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিন সকালে সেখান থেকে ওদের স্কোর ছিল ৭/২৬১. এর পর সেখান থেকে খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।  ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৫০/৯ উইকেট করার পরেই মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে পরে বাংলাদেশ। তবুও বাংলাদেশ ২৬৯/৯ করে ফলো অন এড়িয়ে মুখ রক্ষা করেছে মোমিনুল ,জাকের আলী কিছুটা দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে অর্ধশত রান করায়।  ওদের দুইজন অথবা অন্তত একজন ইনিংসটা তিন অংকে নিয়ে যেতে পারলে বাংলাদেশ হয়তো ভালো অবস্থানে যেতে পারতো। বাংলাদেশের বর্তমান বাটসমেনদের যে সামর্থ নেই উইকেটে দীর্ঘ সময় টিকে থাকার।  বাংলাদেশ ইনিংসে মোমিনুল (৫০) ,জাকের আলী (৫০) , লিটন (৪০) .তাইজুল (২৫) ,মেহেদী মিরাজ (২৩) উইকেটে স্থিতু হয়েও উইকেট বিলিয়ে দিয়েছে নিজেদের ক্রিকেট চরিত্র হীনতার কারণে.

পিছিয়ে থেকে ইনিংস ডিক্লেয়ার করা  সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল. সকালের ভেজা পরিবেশ ভালো মত ব্যবহার করেছে তাসকিন সহ বাংলাদেশ বোলিং  ইউনিট.কিছু ক্যাচ  না ফস্কালে হয়ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে ১২০-১৩০ গুটিয়ে যেত।  যাই হোক বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়িয়েছিল ৩৩৩।  অফুরন্ত সময় হাতে ছিল. কিন্তু যা ছিল না বাংলাদেশের কঠিন হয়ে ওঠা উইকেটে টিকে থাকা।  ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফিল্ডাররা অনেক ক্যাচ ফেলে দেয়ার পরেও বাংলাদেশ ইনিংস সাঙ্গ হয়েছে ১৩২ রানে। পরাজয়ের ব্যাবধান ২০১ রানের।  ৯ দলের টেস্ট রাংকিংয়ে বাংলাদেশ এখন তলানিতে। সৌভাগ্য আফগানিস্তানকে এখনো তালিকায় নেয়া হয় নি. দলের যে অবস্থা এখন দ্বিতীয় টেস্টে সম্মানজনক পরাজয় হবে কিনা নিশ্চিত করা বলা যাচ্ছে না.

দেখুন বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হারের পর ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে পাকিস্তান। নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে ধবল ধোলাইয়ের পর ভারত অস্ট্রেলিয়াকে পার্থ টেস্টে উড়িয়ে দিলো। যাদের ক্রিকেট সংস্কৃতি আছে ওরা ঘুরে দাঁড়ায় আমাদের নাই তাই আমরা পারি না. এই সহজ সমীকরণ মেনে নিয়ে আমাদের শেষ থেকে শুরু করা সমীচীন হবে. আমূল পাল্টে ফেলতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেটের খোল নলচে।  পরিকল্পনা এবং অপেরেশনে আনতে  হবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। অংশীজনদের সম্পৃক্ত করে ক্রিকেট সংগঠন ঢেলে সাজাতে হবে.

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

20 − 12 =