সালেক সুফী
সাদা বলে দুই ফরম্যাটের সিরিজে জয় পরাজয় মিশ্র সাফল্যের পর এবার শুরু হবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। সবাই জানে টেস্ট ক্রিকেটে তুলনামূলক ভাবে বাংলাদেশ এখনো পায়ের নিচে স্থায়ী মাটি খুঁজে পায়নি। ওডিআই ক্রিকেটে অনেকটা নিয়মিত সাফল্য এবং ইদানিং টি২০ ক্রিকেটেও বাংলাদেশ জয় পেতে শুরু করলেও মানসম্পন্ন দীর্ঘ ভার্সনের স্থানীয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট না থাকায় টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্য সীমিত।
তবুও বাংলাদেশ এখন স্পিন নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের পেস বোলারদের আবির্ভাবে ভারসাম্যপূর্ণ বোলিং আক্রমণ গড়তে থাকায় পরিবর্তনের সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে প্রাক্তন কৃতি ক্রিকেটার গাজী আশরাফ লিপু প্রধান নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব দায়িত্ব নেওেয়ার পর ইতিমধ্যেই মেধাভিত্তিক স্কোয়াড নির্বাচনের শুভ ইঙ্গিত মিলছে।
ঢাকার বাইরে এই প্রথমবারের মতো সিলেট এবং চট্টগ্রামে টেস্ট দুটি অনুষ্ঠিত হবে। আশা করা যায় সাদা বলের সিরিজ দুটির মতো না হলেও অপেক্ষাকৃত স্পোর্টিং উইকেট থাকবে। সেখানে পেস স্পিন দুই ধরনের বোলারদের জন্য হয়তো কিছু থাকবে। নিজেদের প্রয়োগ করে খেললে ব্যাটসম্যানদের সুযোগ থাকবে ভালো করার। ইতিমধ্যে সিলেট জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম টেস্টের জন্য দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা আগেই স্কোয়াড ঘোষণা দিয়েছে।
টেস্ট স্কোয়াড
বাংলাদেশ: নাজমুল হাসান শান্ত (অধিনায়ক), জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, লিটন কুমার দাস, মোমিনুল হক সৌরভ, মুশফিকুর রহিম, শাহাদাত হোসাইন দিপু, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, মুশফিক হাসান এবং নাহিদ রানা।
শ্রীলংকা: ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (অধিনায়ক), কুশল মেন্ডিস (সহ অধিনায়ক), দিমুথ করুনারত্নে, নিশান মধুশাঙ্কা, এঞ্জেলো ম্যাথিউস, দীনেশ চান্দিমাল, সাদীরা সমারাবিক্রমা, কামিন্দু মেন্ডিস, লাহিরু উদারা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, প্রবাথ জয়াসুরিয়া, রমেশ মেন্ডিস, নিশান পেরিস, কাশুন রাজিথা, বিশ্ব ফার্নান্দো, লাহিরু কুমারা এবং চামিকা গুনাসেকরা।
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ মোটামুটি সেটলড দল। সব ফরম্যাটে স্থায়ী অধিনায়ক হিসাবে নাজমুল শান্ত দায়িত্ব পালন করবে। ব্যাটসম্যান হিসেবে মূল দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অধিনায়ক হিসাবেও সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিতে শুরু করেছে শান্ত। রিএক্টিভ না হয়ে প্রো একটিভ দেখা যাচ্ছে। যদিও এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে উথাল পাথাল শ্বাপদসংকুল পিচ্ছিল পথে।
দলে জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান জয় এবং সাদমান ইসলাম তিন জন নিয়মিত ওপেনার আছে। টেস্টে লিটন কুমার দাস মিডল অর্ডারে খেলে থাকে। ওডিআই স্কোয়াড থেকে বাদ পড়ার দুইদিন পরে দলে ফিরেছে লিটন। টেস্টে মুশফিক উইকেটের পেছনে দাঁড়াবে না, লিটনকে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। দলে কিন্তু তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানের মতো অটো চয়েস খেলোয়াড় নেই।
মিডল অর্ডার সামাল দিতে হবে টেস্ট বিশেষজ্ঞ মোমিনুল হক, মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম এবং অপেক্ষাকৃত নবীন শাহাদাত হোসেন দিপুকে। আশা করা যায় ক্ষণিকের বিরতি শেষে লাল বলে নতুন সংস্করণে নিজেকে ফিরে পাবে লিটন। মেহেদী মিরাজ এমনকি তাইজুল ব্যাট হাতে ফেলনা না। শক্তিশালী শ্রীলংকা দলের ভারসাম্যপূর্ণ বোলিং আক্রমণের মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের সেরা নিবেদন করতে হবে। মুস্তাফিজ টেস্ট খেলে না। চাপ মুক্ত রাখার জন্য প্রথম টেস্ট স্কোয়াডে রাখা হয়নি তাসকিনকে। এবাদত এখনো ইনজুরি থেকে ফিরেনি।
এমন অবস্থায় শরিফুলকে পেস আক্রমণ নেতৃত্ব দিতে হবে। সঙ্গে থাকবে সিলেটের ছেলে সৈয়দ খালেদ আহমেদ। আমি মুশফিক হাসান এবং নাহিদ রানার স্কোয়াড সংযোজন শুভ লক্ষণ মনে করি। স্থানীয় ক্রিকেটে নিয়মিত সফল এই দুই জন। নাহিদ রানা এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সব চেয়ে দ্রুত গতির বলার। সুযোগ থাকলে ওকে দলে নেওয়ার ঝুঁকি নিতে পারে বাংলাদেশ।
অবশ্য সবকিছুই উইকেট, দলীয় ভারসাম্যের উপর নির্ভর করবে। তথাপি স্কোয়াডে থেকে ড্রেসিং রুম শেয়ার করবে নিজেদের শাণিত করবে মুশফিক হাসান এবং নাহিদ রানা। স্পিন আক্রমণের দায়িত্ব থাকবে যথারীতি তাইজুল ইসলাম এবং মেহেদি হাসান মিরাজের উপর। নাঈম হাসান একাদশে থাকবে কি থাকবে না নির্ভর করবে উইকেট এবং পরিস্থিতির উপর। আমি মনে করি বর্তমান মুহূর্তে সেরা দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। হয়তো পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্বিতীয় টেস্টে কিছু পরিবর্তন হতেও পারে।
সফরকারী দল কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে অনেক শক্তিশালী, তদুপুরি সিরিজটি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভুক্ত থাকায় ওরা জয়ের জন্য মরিয়া থাকবে। দলে আছে দিমুথ করুনারত্নে, কুশল মেন্ডিস, এঞ্জেলা ম্যাথিউস, দীনেশ চান্দিমালের মতো পোড়খাওয়া উঁচুমানের ব্যাটসম্যান। ইদানিং বিকশিত সাদীর সমারাভিক্রামা ক্রমাগত ভরসাস্থল হয়ে উঠছে।
কামিন্দু মেন্ডিস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, ওয়েনিন্দু হাসারাঙ্গা চৌকষ খেলোড়ার হিসেবে ব্যাটিং গভীরতা দিবে। নবীন প্রবাথ জয়াসুরিয়ার সুযোগ আছে নিজেকে প্রমাণ করার। লাহিরু কুমারা শ্রীলংকান পেস আক্রমণ নেতৃত্ব দিবে। সঙ্গে থাকবে নিশান মধুসংকা। এঞ্জেলো মাথিউজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। তবে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, রমেশ মেন্ডিস এবং ধনঞ্জয়া ডি সিলভা সমন্বয়ে গড়া স্পিন আক্রমণ বাংলাদেশকে সতর্কতার সঙ্গে সামাল দিতে হবে।
সবশেষে বলবো শেয়ানে শেয়ানে লড়াই হবে। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি লড়াই ছাড়া ছেড়ে দিবে না। ইদানিং যেকোনো ফরম্যাটে শ্রীলংকা-বাংলাদেশ লড়াই এশেজের মতো বা ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথের মতো সৌরভ ছড়াচ্ছে।
সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক