ট্রেন্ড এখন স্পিড আপ গানের

অবসরে ইনস্টাগ্রাম স্ক্রল করছেন। হঠাৎ একটি রিলে চেনা গানের লাইন কানে এল। কিন্তু তার টেম্পো অচেনা। সুরের গতি যেন পুরোটাই বদলে গেছে। বুলেট ট্রেনের স্পিডে ছুটছে লয়। এরই পোশাকি নাম ‘স্পিড আপ’। এটাই এখন ট্রেন্ড। এ রকম গানে রিল বানালে বাড়ছে ভিউ, মুহূর্তে ভাইরালও হয়ে যাচ্ছে। মূলত টিকটকে শুরু হয়েছিল এই ট্রেন্ড, সেখানে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা জনপ্রিয় গানের গতি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দেন। তারপর সেই সব গানে নাচেন, কিংবা অন্য কোনো কনটেন্টে ব্যবহার করেন।

অবাক করার বিষয় হলো, এই স্পিড আপ ভার্সনের সুবাদে অখ্যাত গানও মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। যেমন ব্রিটিশ গায়িকা রায়ির ‘এসকেপিজম’ গানটির স্পিড আপ ভার্সন প্রকাশ করেন একজন ক্রিয়েটর, অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে যায় গানটি। তার কল্যাণে ইউকের অফিশিয়াল সিঙ্গেল চার্টে প্রথমবারের জন্য শীর্ষে উঠে আসেন রায়ি। ঘটনাটি ঘটে মূল গানটি প্রকাশের মাস তিনেক পর।

স্পিড আপ হালের ট্রেন্ড হলেও এটা কিন্তু নতুন কিছু নয়। এ শতাব্দীর শুরুতে নরওয়ের ডিজে ডুয়ো গানের গতি বাড়িয়ে অ্যালবাম প্রকাশ করেন। তারপর বহু পথ পেরিয়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে স্পিড আপ। বিশেষজ্ঞদের মত, নানা কারণে মানুষের মধ্যে তাড়াহুড়ো বেড়েছে। তার প্রভাবে স্পিড আপের জনপ্রিয়তা পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। এমনকি গান ছাড়াও পডকাস্ট কিংবা সিনেমার গতিও বাড়িয়ে দেখার প্রবণতা বেড়েছে। সমীক্ষা বলছে, আমেরিকার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখন পডকাস্ট স্পিড আপ করে শুনছেন। আর গানের টেম্পো বাড়িয়ে শুনছেন প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ।

আমেরিকান শিল্পী সামার ওয়াকার তাঁর ২০১৮ সালে রিলিজ হওয়া অ্যালবাম ‘দ্য লাস্ট ডে অব সামার’-এর সম্পূর্ণ স্পিড আপ ভার্সন প্রকাশ করেন বছরখানেক আগে। অ্যালবামের গানগুলো টিকটকের ডান্স ট্রেন্ডে পরিণত হয়। অনেক ক্রিয়েটর এই অ্যালবামের তালে তাল মিলিয়ে নেচেছেন। এ ছাড়া জনপ্রিয় শিল্পী বিলি আইলিশও নিজের গানের স্লো এবং স্পিড আপ ভার্সন প্রকাশ করেছেন। সাবরিনা কার্পেন্টারও ‘প্লিজ প্লিজ প্লিজ’ ও ‘এসপ্রেসো’র মতো গানগুলো স্পিড আপ করেছেন।

এই স্রোতের দিকে গা ভাসিয়ে না দিলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হবে। কোনো শিল্পী না করতে চাইলে তাঁর জায়গায় অন্য কেউ স্পিড আপ ভার্সন সামনে আনবেন। তা হয়ে উঠতে পারে ট্রেন্ডিং। এই আশঙ্কা থেকে বিদেশের একাধিক জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী নিজেদের গানের স্পিড আপ ভার্সন সামনে আনছেন।

তবে এই ট্রেন্ডকে চিরন্তন হিসেবে মেনে নিতে নারাজ বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, অল্প সময়ের মনোরঞ্জনের খোরাক হতে পারে গানের স্পিড আপ ভার্সন। তবে এই ধরনের সংগীত সারা দিন শোনা সম্ভব নয়। তাই স্পিড আপের বানের তোড়ে সুস্থ, স্বাভাবিক, শ্রুতিমধুর গান হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সুদূর ভবিষ্যতে নেই বলে মনে করছেন অনেকে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

11 + fifteen =