সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এবারের বিজয় দিবস উদযাপনে গুরুত্ব পাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে বলা হয়েছে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও উদারবাদী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আঘাত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর রাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ। সোমবার (১২ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস ২০২২ উদযাপন নিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এই অবস্থান তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান রোধ ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এবারের বিজয় উৎসব এবং আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে ‘সম্প্রীতির সংগ্রাম’ কর্মসূচি পালন করবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতারা বলেন, ‘স্পর্ধায় তাড়াব ধেয়ে আসা কালো’ স্লোগানে ১৩-১৬ ডিসেম্বর রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও রবীন্দ্র সরোবরসহ ৯টি মঞ্চে এবারের বিজয় উৎসব হবে। কোনও কোনও মঞ্চে এরপরও অনুষ্ঠান হবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ১৩ ডিসেম্বর বিকাল চারটায় উৎসব উদ্বোধন করবেন বরেণ্য নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার।
উদ্বোধন পর্বে সভাপতিত্ব করবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, স্বাগত বক্তৃতা করবেন সাধারণ সম্পাদক মো. আহকাম উল্লাহ। কর্মসূচিতে থাকছে শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, এক মিনিট নীরবতা পালন, জাতীয় সংগীত ও মুক্তিযুদ্ধের গান, বিজয়ের আবৃত্তি এবং নৃত্যের সাথে বেলুন উড্ডয়ন। দ্বিতীয় পর্বে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার: ১৩-১৬ ডিসেম্বর; ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চ: ১৪-১৬ ডিসেম্বর; রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ: ১৪-১৬ ডিসেম্বর; মিরপুর ৬ নম্বর মুকুল ফৌজ মাঠ: ১৫-১৬ ডিসেম্বর; দনিয়া মাসুদ মঞ্চ: ১৪-১৬ ডিসেম্বর; ভিক্টোরিয়া পার্ক: ১৯-২০ ডিসেম্বর; মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনি মাঠ: ১৬ ডিসেম্বর; উত্তরা বঙ্গবন্ধু মঞ্চ: ১৫ ডিসেম্বর এবং পূর্বাচল জয় বাংলা স্কয়ার: ১৬ ডিসেম্বর।
এছাড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহযোগিতায় বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন, ১৭ ডিসেম্বর বেনাপোল ও যশোর এবং ২৩ ডিসেম্বর ঢাকার গুলশানে বিচারপতি শাহাবুদ্দিন পার্কে বিজয় উৎসব উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। ১৫০টির বেশি সংগঠনের ৩ হাজার ৫শ’র বেশি শিল্পী এবারের বিজয় উৎসবে অংশ নেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নাজুক বিশ্ব পরিস্থিতিতে পুরো জাতি যেমন ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার কথা ছিল, তা না করে আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে কোনও কোনও রাজনৈতিক মহল পরিস্থিতির সকল দায় এককভাবে সরকারের ওপর চাপিয়ে দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা এবং রাজনৈতিক ফায়দা লাভে তৎপর হয়েছে। এ অবস্থা কাম্য নয়।’
জোটের সাধারণ সম্পাদক মো. আহকাম উল্লাহ বলেন, ‘একাত্তরের ঘাতক-দালাল, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী, ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতার হত্যাকারী এবং ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলাকারী- সবাই একই বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি। তাদের সাথে কোনও আপস করা চলবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য পাঠ করেন জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। প্রশ্নোত্তর পর্বে আলোচনা করেন সিনিয়র সহসভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ ও ঝুনা চৌধুরী। আরও ছিলেন আহমেদ গিয়াস, আজহারুল হক আজাদ প্রমুখ।