ঢাকা ও ব্যাংকক পাঁচটি দ্বিপাক্ষিক নথি স্বাক্ষর করেছে

বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড গতকাল শুক্রবার দুই দেশের মধ্যে ভিসা অব্যাহতি, জ্বালানি সহযোগিতা, পর্যটন এবং শুল্ক ও  মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সংক্রান্ত আলোচনার বিষয়ে পাঁচটি দ্বিপাক্ষিক নথিতে সই করেছে।  ব্যাংককে থাই গভর্নমেন্ট হাউসে (থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর দুই নেতার উপস্থিতিতে একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং একটি লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) স্বাক্ষরিত হয়েছে। খবর বাসস।

নথিগুলোর মধ্যে রয়েছে অফিসিয়াল পাসপোর্ট হোল্ডারদের জন্য ভিসা ছাড় সংক্রান্ত চুক্তি, জ্বালানি সহযোগিতা, শুল্ক বিষয়ে সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহায়তা এবং পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক এবং ২০২৪ সালের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা সংক্রান্ত লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই)।

জ্বালানি সহযোগিতা ও পর্যটন সহযোগিতার বিষয়ে দুটি সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভিসা অব্যাহতি  সংক্রান্ত চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এলওআই নথিতে সই করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এবং শুল্ক বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা সংক্রান্ত আরেকটি এমওইউতে সাক্ষর করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দ্বিপাক্ষিক নথিতে স্বাক্ষর করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুই পক্ষ ২০২৪ সালের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে এবং দুই দেশ এ বিষয়ে একটি লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) স্বাক্ষর করেছে।

তিনি বলেন, দুই দেশ থাই ও বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের মধ্যে সহজ যোগাযোগের সুবিধার্থে অফিসিয়াল পাসপোর্টহোল্ডারদের জন্য ভিসা ছাড় সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে জ্বালানি সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, থাই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে সুফল লাভের লক্ষ্যে শুল্ক বিষয়ে সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহায়তা  বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং সর্বোত্তম পর্যটন অনুশীলন থেকে সুফল পেতে পর্যটন ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে থাই প্রধানমন্ত্রী বলেন, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশ একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) জন্য একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, লেটার অফ ইন্টেন্ট আলোচনার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে।

তিনি বলেন, অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অব্যাহতির চুক্তি থাই ও বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের আরও বেশি সফর বিনিময়ের জন্য সুবিধা দিবে। জ্বালানি সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক দুই দেশের সত্যিকারের সম্ভাবনা বাস্তবে রূপদান  করতে সাহায্য করবে।

এছাড়া, শুল্ক বিষয়ে সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহায়তার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক কার্যকরভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং চোরাচালান বিরোধী অভিযান পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সাক্ষরের ফলে উভয় দেশ পর্যটন ক্ষেত্রে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং সেরা অনুশীলন বিনিময় করার  সুযোগ পাবে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভর্নমেন্ট হাউসে পৌঁছালে সেখানে থাই কুহ ফাহ ভবনের সামনের লাল গালিচা বিছানো লনে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। তিনি এ সময় সেখানে থাই সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দলের দেওয়া গার্ড অব অনার পরিদর্শন করেন।

স্রেথা থাভিসিন তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের শেখ হাসিনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। শেখ হাসিনা গভর্নমেন্ট হাউসের অতিথি বইতে স্বাক্ষর করেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে একটি আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন।

মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেওয়ার আগে শেখ হাসিনা গভর্নমেন্ট হাউসে একটি থাই হস্তশিল্প প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিল তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।

থাই প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে গত ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সরকারি সফরে এখানে আসেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 × five =