সালেক সুফী
বিজয়ের মাসে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দাপটের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে টি ২০ সিরিজে ধবল ধোলাই করে জাতিকে আবারো বিশ্ব সভায় গৌরবান্বিত করলো। কিংস্টন আরান ডেল স্টেডিয়ামে জয়ের নেশায় উদ্দীপ্ত বাংলাদেশ প্রথম ব্যাটিং করে প্রচন্ড বিক্রমে করেছিল ১৮৯/৭। তুখোড় ফর্মে থাকা বাংলাদেশ বোলিং ইউনিটের মোকাবেলায় বিপর্যস্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০৯ গুটিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ৮০ রানে ম্যাচ জিতে সিরিজে ধবল ধোলাই নিশ্চিত করে। দুবারের টি ২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং বর্তমানে আইসিসি টি ২০ রাঙ্কিং ৪ নম্বরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাথে বাংলাদেশ দল এর আগে টি ২০ সিরিজে জয় দূরের কথা একটি ম্যাচও জয় করতে পারেনি। অথচ এবারের তরুণ দলটি (পঞ্চ পাণ্ডবের কেউ ছিল না) দাপুটে ক্রিকেট খেলে সিরিজ জয় করে ক্রিকেট বিশ্বে বিস্ময় জাগিয়েছে। প্রথম ম্যাচে ১৪৭ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪০ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৭ রানে জিতেছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ১২৯/৭ করেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১০২ রানে গুটিয়ে দিয়ে ২৭ রানে জয় নিয়ে সিরিজ জয় করেছিল। আজ কিন্তু শুরু থেকে শেষ অবদি প্রচন্ড দাপুটে ক্রিকেট খেলে একচেটিয়া জয় তুলে ক্যারিবিয়ান দ্বীপ পূঞ্জে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের হুঙ্কার তুলে।
তরুণ এই দলে টপ অর্ডার এবং লেট্ অর্ডারে কয়েকজন নবীন পাওয়ার হিটার (শামীম পাটোয়ারী, জাকের আলী, পারভেজ ইমন, তানজিদ তামিম ) বিকশিত হচ্ছে। এই মুহূর্তে সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলিং ইউনিট সম্ভবত বিশ্বের অন্যতম সেরা। তাসকিন, হাসান মাহমুদ, তানজিদ তামিমের সঙ্গে আছে মাহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন। দলের মাঝে হার না মানা মনোভাব গড়ে উঠেছে। পরিবর্তিত টীম ব্যাবস্থাপনার পরশ পাথরের ছোয়ায় যেন জেগে উঠেছে বাংলাদেশ।
প্রথম দুই ম্যাচে জয়ের পর আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ আজ দাপুটে ক্রিকেট খেলবে অনুমান করেছিলাম। আজ আবার দারুন ফর্মে থাকা সৌম্য সরকার আহত হয়ে ম্যাচ ফিট না থাকায় প্রথম সুযোগ পেয়ে প্রতিভাবান পারভেজ ইমন উড়ন্ত সূচনা দেয়। ২১ বলে ৩৯ রানের ইনিংস ইঙ্গিত দিয়েছিলো আজ বাংলাদেশ বড় স্কোর করবে। নিদারুন রান খরায় ভুগতে থাকা অধিনায়ক লিটন ভালো শুরু করেও ইনিংসটা বড় করতে পারেনি। তানজিদ তামিমের ব্যাট আজ হাসেনি। মেহেদী মিরাজ আস্থার সাথে খেলে ২৩ বলে ২৯ রান করে ফিরে যাবার পর পর দুটি রান আউটে বাংলাদেশ ইনিংস থমকে দাঁড়ায়। কিন্তু পরিবর্তিত অদম্য বাংলাদেশের জাকের আলী ৪২ বলে অপরাজিত ৭২ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে বাংলাদেশের রান ১৮৯/৭ স্বাগতিক দলের ধরা ছোয়ার বাইরে নিয়ে যায়। আলজারি জোসেফের শেষ ওভারেই তিনটি প্রচন্ড ছক্কা সহ আসে ২৩ রান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং করতে এসে উজ্জীবিত বাংলাদেশের উন্নত বোলিং আক্রমণের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। তাসকিন, হাসান মাহমুদ পেস আক্রমণ আর রিশাদ, মাহেদীর স্পিন আক্রমণের মোকাবেলায় ১০৯ রানেই গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরাজয়ের ব্যাবধান বিশাল ৮০ রানের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ভালো খেলে টেস্ট সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করে বাংলাদেশ। ওডিআই সিরিজে অন্তত প্রথম এবং শেষ ম্যাচে জয়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ০-৩ হেরে সিরিজে ধবল ধোলাই হবার পর টি ২০ সিরিজে ধবল ধোলাই করে নতুন মাইল ফলক অর্জন করে বাংলাদেশ।
ক্রিকেট বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে দেখেছে কিভাবে জয়ের নেশায় কৃতকল্প তরুণ একটি দল ফ্রাঞ্চাইজ ক্রিকেটে ফেরিওয়ালাদের নিজেদের মাঠে নাস্তানাবুদ করে সিরিজ জিতে নিয়েছে। আফসোস একটাই দলের অধিনায়ক এবং অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাস রান খরা থেকে মুক্তি পায়নি।
বিজয়ী তরুণ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে প্রানঢালা অভিনন্দন। ভালো লাগছে দারুন বোলিং, তুখোড় ফিল্ডিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটসম্যানরাও জেগে উঠছে পরিবর্তিত কোচিং স্টাফের জাদুর পরশে। কঠিন ম্যাচ লড়াই করে জিততে শিখেছে বাংলাদেশ।