তিন লাখ টাকার চা’য়ে চুমুক দিয়ে ঘুম ভাঙে যার

নীলাঞ্জনা নীলা: এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তালিকায় রয়েছেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি। শূন্য থেকে এশিয়ার শীর্ষ ধনী পরিবারে পরিণত হয়েছেন আম্বানি পরিবার। মুকেশ আম্বানির পাশাপাশি তার সহধর্মিনী নীতা আম্বানিও আলোচনায় থাকেন তার অদ্ভুত সব শখ আর বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে পত্রিকার পাতায় হরহামেশাই আলোচনার জন্ম দেন তিনি। কিন্তু মুকেশ আম্বানিকে বিয়ে করার আগে তার জীবন ছিল অন্য দশটা অতি সাধারণ ভারতীয় নারীর মতো।

মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৬৩ সালে জন্ম হয় নীতার। পরিবারে সংস্কৃতি চর্চা ছিল। নীতা আম্বানির মায়ের নাচ দেখে নাচের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। ছোটবেলা থেকে নাচের প্রতি আগ্রহ দেখে তার মা তাকে ভারতনাট্যমে ভর্তি করে দেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৭। আম্বানি পরিবারের বউ হয়ে আসার পরেও তিনি নাচচর্চা চালিয়ে যান। মুকেশ আম্বানি তার নাচ খুব ভালোবাসেন এবং সবসময় উৎসাহ দেন। ছেলেমেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান, পূজা কিংবা পারিবারিক যেকোনো আয়োজনে নীতা আম্বানিকে নাচ পরিবেশন করতে দেখা যায়।

বিয়ের আগে নীতা আম্বানি একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, তার বেতন ছিল মাত্র ৮০০ টাকা! তিনি মানুষকে শেখাতে ভালোবাসতেন। ফলে তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি বিয়ের পরেও বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন। আম্বানি পরিবার এতে আপত্তি করেনি। আম্বানি পরিবারে বউ হয়ে তার আসবার ঘটনাটি বেশ মজার।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ পরিবেশনের জন্য প্রায়ই নীতা আম্বানির ডাক পড়তো। এমনই এক নাচের অনুষ্ঠানে তাকে প্রথম দেখেন মুকেশ আম্বানির পিতা ধীরুভাই আম্বানি। প্রথম দেখাতেই তিনি নীতা আম্বানিকে নিজের পুত্রবধূ হিসেবে পছন্দ করে ফেলেন। অনুষ্ঠান শেষে তিনি নীতা আম্বানির বাড়ির নাম্বার জোগাড় করেন এবং পরদিন সকালেই তাকে ফোন করেন। ফোন নীতা আম্বানি নিজেই ধরেন। পরিচয় জানতে চাইলে মুকেশ আম্বানির পিতা যখন বলেন, ‘আমি ধীরুভাই আম্বানি’ তখন নীতা আম্বানি রেগে ফোন কেটে দেন। তিনি ভাবেন, ধীরুভাই আম্বানির মতো প্রতাবশালী ব্যক্তি তার বাড়িতে কেন ফোন করবেন? নিশ্চয়ই কেউ মজা করছে! আবার ফোন বেজে উঠে এবং এবারো একই কথা বললেন, ‘আমি ধীরুভাই আম্বানি’। নীতা আম্বানি আরো রেগে গিয়ে বলেন, ‘আচ্ছা! তাহলে আমি রানী এলিজাবেথ।’ একপর্যায়ে গিয়ে তিনি নিশ্চিত হলেন, ফোনের ওপ্রান্তে আসলেই ধীরুভাই আম্বানি!

পারিবারিক ভাবে কথা হওয়ার পর মুকেশ আম্বানি ও নীতা আম্বানি একবার গাড়ি করে ঘুরতে বের হয়েছিলেন। মুকেশ ও নীতা মুম্বাইয়ের পেদার রোড থেকে গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন, গাড়ি একটি সিগন্যালে থামল। গাড়ি থামার পর মুকেশ জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?’ এই সময়ে সিগন্যাল সবুজ ছিল, প্রচুর যানবাহন হর্ন বাজাতে শুরু করল, নীতা আম্বানিকে গাড়ি চালাতে বলেন। মুকেশ জানান, উত্তর পেলেই তিনি গাড়ি চালাবেন। এসময় নীতা বলেন, হ্যাঁ! তিনি তাকে বিয়ে করতে রাজি। এরপরেই মুকেশ আম্বানি গাড়ি চালানো শুরু করলেন।

বিয়ের কিছুদিন পরেই সাধারণ নীতার লাইফস্টাইলে আসে আমূল পরিবর্তন। তার রয়েল লাইফস্টাইল সবার নজর কেড়ে নেয়। সুন্দরী তিনি বিয়ের আগে থেকেই ছিলেন। কিন্তু পোশাক থেকে শুরু করে সবকিছুতে অপার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার মতো বদলে যান। তিনি পত্রিকার শিরোনামে এসেছেন বহুবার। জন্ম নিয়েছে নতুন নতুন শখের, ঘুম থেকে উঠেই যেন শুরু হয় একটা বিলাসিতায় ভরা জীবন।

নীতা আম্বানি সকালে চোখ মেলেই পান করেন তিন লক্ষ টাকার চা! তিনি যে চা পান করেন তা অন্য সাধারণ চা নয়। এটি জাপানি ব্র্যান্ড নোরিতেকের চা। নরিতেক থেকে তিনি জাপানের প্রাচীনতম ব্যান্ডের ২২ ক্যারেট সোনা ও প্লাটিনাম খচিত ক্রকারি সেট কিনেছিলেন যেটির দামও প্রায় দেড় কোটি টাকা। নীতা আম্বানির শখের মধ্যে অন্যতম জাপানের এই প্রাচীন ব্র্যান্ডের চা। বলা হয়, এই চা দীর্ঘদিন যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে। সব টক্সিন বের করে সারাদিন শরীর সতেজ রাখে। নীতা আম্বানির একদিনের চায়ের খরচ সাধারণ মানুষের সারা জীবনের চায়ের খরচের চেয়েও বেশি।

বিশ্বের সবচেয়ে দামী ব্রান্ডের পানি পান করেন নীতা আম্বানি। ৭৫০ মিলি পানির বোতলের দাম প্রায় ৬০ হাজার ডলার। এই পানির নাম ‘অ্যাকোয়া ডি ক্রিস্টালো ট্রিবিউটো আ মদিগ্লিয়ানি’ যা আসে ফ্রান্স এবং ফিজি থেকে। দাবি করা হয়, এই পানীয় জল স্বর্ণভস্ম মিশ্রিত। ৫ গ্রাম স্বর্ণভস্ম থাকে এতে। যা মানবদেহের জন্য উপকারী।

নীতা আম্বানির পোশাকের কালেকশন দেখলে যে কেউ ভিমরি খেতে পারেন। মুকেশ আম্বানির বিলাসবহুল বাড়ির কয়েকতলা অবধি ভর্তি শুধু নীতা আম্বানির পোশাক দিয়ে। প্রতিটি আয়োজনে নীতা আম্বানির পোশাক নিয়ে সবার বিশেষ আগ্রহ থাকে। ছেলের বিয়ের সময় নীতা যে শাড়ি পরেছিলেন তার দাম প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা! পৃথিবীবিখ্যাত সব ডিজাইনারদের দিয়ে তিনি তার পোশাক ডিজাইন করান। নীতা আম্বানির বেশিরভাগ পোশাকেই সোনা কিংবা হীরা বসানো থাকে। সেই সব পোশাকের দাম প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি।

বিশেষ অনুষ্ঠানে ট্রাডিশনাল শাড়ি কিংবা লেহেঙ্গা পরে থাকেন নীতা আম্বানী। যা তাকে সবার চেয়ে আলাদা করে তোলে। সবচেয়ে বেশি কারুকার্য করা থাকে তার ব্লাউজে। নীতা আম্বানির আরেক শখের জিনিস হলো ব্যাগ। কুমিরের চামড়া দিয়ে তৈরি তার তিন কোটি টাকার ব্যাগ নিয়ে বেশ হইচই পড়ে গিয়েছিল। ২০১৭ সালে এই ব্যাগটি ব্রিটেনে ‘ক্রিস্টিজ’-এ নিলামে উঠেছিল। তার কালেকশনে রয়েছে পৃথিবীর দামি সব ব্যাগ। নীতা আম্বানিকে কখনো এক ব্যাগ দ্বিতীয়বার ব্যবহার করতে দেখা যায় না। তার সংগ্রহে রয়েছে বুলগারি, র‌্যাডো, গুচ্চি, কেলভিন ক্লেইন, ফসিলের মতো বিশ্বের সেরা প্রস্তুতকারক সংস্থার ঘড়ি। শাড়ি কিংবা ওয়েস্টার্ন তিনি যাই পরুন না কেন তার হাতে একটা ঘড়ি সবসময় লক্ষ্য করা যায়। তার কালেকশনে এক হাজারের বেশি ঘড়ি রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, নীতা আম্বানির লিপস্টিকের দামে নাকি গোটা একটা ফ্ল্যাট কেনা যায়। ভারতের কোনো প্রসাধনী তিনি ব্যবহার করেন না। নীতার ব্যবহার করা সব প্রসাধন সামগ্রী আসে বিদেশ থেকে। বিশ্বের সবচেয়ে দামি লিপস্টিক ব্যবহার করেন বলেও শোনা যায়। তার সংগ্রহে আছে বিদেশের নামী সংস্থার তৈরি সব লিপস্টিক। নীতা যে লিপস্টিক ব্যবহার করেন তার দাম প্রায় ৪০ লাখ টাকা!
নীতা আম্বানি সম্প্রতি একটি গাড়ি কিনে সবাইকে অবাক করে দেন। গাড়িটি প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড অডি। মডেলের নাম অডি এ ৯ চ্যামেলিয়ন। গাড়িটি বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানির একটি বিশেষ সংস্করণ। গোটা বিশ্বজুড়ে এই গাড়ির মাত্র কয়েকটি ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। ভারতে এই গাড়ি পাওয়া যায় না। গাড়িটি বিশেষ ভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হয়েছে। গাড়িটির দাম প্রায় ৯০ কোটি টাকা!

বিয়ের আগে নীতা আম্বানির ওজন ছিল ৪৭ কেজি। প্রথম সন্তান জন্মের পর তার ওজন হয়ে যায় প্রায় ৯০ কেজি। তিনি নিজের চেষ্টায় আবারো ওজন কমিয়ে ফিট হয়ে যান। ওজন কমানোর সময় বেশি করে ফল, শাকসবজি ও বাদাম খেতেন। এছাড়া নিয়মিত নাচ করতেন যা ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করতো। নীতা বরাবর ঘরে তৈরি খাবারকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কিছুদিন আগে তার এক শখ হইচই ফেলে দেয়। নীতা আম্বানি বিশ্বের সবচেয়ে দামি রোবট কিনেছেন। যার একমাত্র কাজ হচ্ছে কোনো কিছু করতে বলামাত্র মুহূর্তের মধ্যেই তা করে ফেলে। নীতা আম্বানি এই গুণের জন্য রোবটটি কিনেছেন। আম্বানি পরিবারের বউ হবার পর থেকেই এমন সব অদ্ভুত শখ পূরণ করে যাচ্ছেন নীতা আম্বানি। রূপ ও শখের পাশাপাশি নীতা আম্বানি কিন্তু স্বামীর ব্যবসার কাজেও বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া নীতা আম্বানি আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের মালকিন। তাই বলা যায় নীতা আম্বানি রূপ ও গুণ দুইয়েরই অধিকারী।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: আরশী

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × five =