তীব্র দাবদাহে অস্বস্তিতে বাংলাদেশের জনজীবন

সালেক সুফী

স্মরণাতীত সময়ের সর্বোচ্চ দাবদাহে উত্তপ্ত বাংলাদেশ। সারা দেশসহ ঢাকা মহানগরীর জনজীবন বিপর্যস্ত।  মধ্য এপ্রিলের এই সময়ে গড় তাপমাত্রা থাকে ৩২-৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  কিন্তু এবারে এই সময়ে দেশ জুড়ে গড় তাপমাত্রা ৩৭-৩৯ ডিগ্রি। কোথাও কোথাও এই মাত্রা ৪০-৪২ ডিগ্রি।  সঙ্গে আছে আর্দ্রতা।  তীব্র দাবদাহের কারণে শিশু এবং বয়োবৃদ্ধদের মাঝে ডায়েরিয়া সহ নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে।  খেটে খাওয়া মানুষ শ্রমজীবীদের জন্য অভিশাপ হয়ে এসেছে। মধ্যবিত্ত সঞ্চয় ভেঙে চার্জ ফ্যান, এসি কিনছে।

বর্তমান অবস্থা দীর্ঘ স্থায়ী হলে রোগব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হতে পারে। উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। সেচ কাজ এবং পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত অর্থব্যয়ে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কৃষক সমাজ আশা করে বিরূপ প্রকৃতির কারণে উৎপাদন খরচ বায়ের বিষয়টি সরকার ধান চাল সংগ্রহের সময় বিবেচনায় আনবে। এদিকে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে পোল্ট্রি শিল্পেও সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।  অনেক মুরগি হিট স্ট্রোক হয়ে মারা যাচ্ছে।

এবারের এই অতিরিক্ত তাপমাত্রা অনেক ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে। নগরীগুলো অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে বৃক্ষ শূন্য হয়ে পড়েছে। নদ নদী, খাল বিল অবৈধ দখলের কারণে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে।  পরিবেশবিদরা নানা সময়ে সতর্ক করলেও সরকার যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

ঢাকা মহানগরের কথা ধরুন।  ঢাকার চারপাশে বহমান চারটি নদী দখলকারীদের কবল থেকে মুক্ত করার নানা উদ্যোগের ফলাফল হয়েছে সীমিত।  শহরের মাঝ দিয়ে বহমান অধিকাংশ খালগুলো অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। নদী জলাশয় ভরাট করে গায়ে গায়ে লাগানো বহুতল ভবন গড়ে তোলায় স্বাভাবিক বায়ু প্রবাহ বিঘ্নিত হয়েছে।  গ্লাস পরিবেষ্টিত ভবনগুলোর এসিগুলো উষ্ণতা ছড়াচ্ছে।

একই সঙ্গে ঢাকা মহানগরী থেকে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করায় ইকোলজিকাল ব্যালান্স দারুণভাবে বিঘ্নিত।  একসময় ঢাকা ছিল ছায়া সুনিবিড় শান্তির শহর। সেই ঢাকা এখন যান জট, জল জট, বায়ু দূষণ, জল দূষণ, শব্দ দূষণের শীর্ষস্থানীয় নগরী। অসংখ্য দূষণকারী যানবাহন বায়ুদূষণ করছে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে। বর্জ্য ব্যাবস্থাপনা সঠিক ভাবে না হওয়ায় এগুলো থেকেও কার্বন এমিশন হচ্ছে। এগুলোর সম্মিলিত প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা এখন বসবাসের জন্য বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অনুপযোগী শহর।

পানির চাহিদা মেটানোর জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বাড়ায় পানির স্তর নেমে যাওয়ায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।  মাটির নিচে স্থাপিত শতছিন্ন গ্যাস পাইপলাইন থেকে মিথেন এমিশন হচ্ছে।  গ্যাস লিকেজ জনিত কারণে প্রায়শই মারাত্মক অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটছে।  এর সঙ্গে যোগ করুন চলমান বিভিন্ন মেগা প্রকল্প সমূহের কারণে বায়ুদূষণ।

অথচ দেশে কিন্তু অনেক নিয়ম নীতি আছে। আছে অনেক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নাই আইনের প্রয়োগ। রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা চার টার্মের সরকার যদি নগর, মহানগর গুলোর পরিবেশ রক্ষায় সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠাগুলোকে আইনের আওতায় না আনতে পারে তাহলে পরিস্থিতি থেকে সহজে মুক্তি মিলবে না।

আবহাওয়া অধিদপ্তর হিট এলার্ট জারি করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছুটি বাড়িয়েছে।  এগুলো সাময়িক সমাধান। সরকারকে সকল কার্যক্রমে জন সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।  সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এখন থেকে শুরু করে সহনীয় অবস্থা নিশ্চিত করতেও ৩-৫ বছর লেগে যাবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 × 5 =