তীরে এসে তরী ডোবা খেলায় হৃদয় ভাঙলো আফগানিস্তানের

সালেক সুফী

কাল মঙ্গলবার ছিল সংগ্রামী আফগানিস্থানের বাঁচা মরার লড়াই।  সমীকরণ এমন ছিল খেলায় আফগানিস্তানকে আগে ব্যাটিং করলে জিততে হবে ৮৯ রানে আর পরে ব্যাটিং করলে ৩৭.১ ওভারে।  লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের ব্যাটিং স্বর্গে প্রথম ব্যাটিং করে শ্রীলঙ্কা ২৯১/৮ বিশাল স্কোর গড়েছিল। বীরের মতোই বুক চেতিয়ে লড়াই করেছে আফগানিস্তান। ৩৭.৪ ওভারে যখন শেষ উইকেটটি পতন ঘটে তখন ওদের রান ২৮৯। জয় পরাজয়ের বাবদান মাত্র ২ রানের। হাড্ডা হাড্ডি লড়াইয়ের এই ম্যাচ জয় করে শিরোপাধারী শ্রীলংকার যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায়। হৃদয় ভাঙে আফগানিস্তানের।  বীরের মতোই লড়াই করেই হেরে যায় কাবুলিওয়ালারা।

 

উইকেটে ছিল প্রচুর রান, ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ টস জয় করে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শ্রীলংকা। রোদেলা দিনে রানমুখর উইকেটে কোনো বলার খুব সুবিধা আদায় করতে পারেনি। শ্রীলংকার দলের মিশন ছিল স্বাভাবিক খেলা খেলে রানের পাহাড় গড়ে তোলা। শুরু থেকেই শ্রীলংকান ব্যাটসম্যানরা দ্রুত রান তোলার দিকে মনোযোগী ছিল। করুনারত্নে (৩২) আর নিশংকা (৪১) প্রথম উইকেট জুটিতে ৬৩ রান জুড়ে দেয়ার পর প্রথম আঘাত হানে গুলবদন নায়েব। সঠিক লাইন লেংথে বল করে নায়েব পর পর তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে কিছুটা ঝাকুনি দিয়েছিলো লংকান ব্যাটিং লাইন আপে। চতুর্থ উইকেট জুটিতে চরিথা আসালংকা (৩৬) এবং কুশল মেন্ডিস (৯২) চমৎকার খেলে ১০২ রান জুড়ে দিলে শ্রীলংকা দলের শঙ্কা দূর হয়। উইকেটের অবস্থা অনুযায়ী বোলিং করে আফগানিস্তান শ্রীলংকা ইনিংসকে ২৯১/৮ সীমিত রেখে জয় ধরা ছোয়ার আয়ত্তে রেখেছিলো। আফগানদের হয়ে গুলবদন নায়েব (৪/৬০) ছিল সেরা বোলার।  টুর্নামেন্টে নিষ্প্রভ থাকা রাশিদ খান (২/৬০) কিছুটা অবদান রেখেছিলো।

আফগানিস্তানের টার্গেট নির্ধারিত ছিল ৩৭.১ ওভারে রান তাড়া করে ম্যাচ জয়। এই কাজে যার উপর ছিল অন্যতম প্রধান নির্ভরতা সেই রামানুল্লাহ গুরবাজ মাত্র চার (০৪) কুশল রাজিথার বলে আউট হয়ে হতাশ করলো। ওপর প্রধান ব্যাটসম্যান ইব্রাহিম জাদরানও কাল করেছে মাত্র (০৭) রান। ২৬ রানে ২ উইকেট হারানো আফগানিস্তান গুলবদন নায়েব (২২),  রাহমাত শাহ ( ৪৫) এবং হাসমাতুল্লাহ শাহিদী ( ৫৯) তৃতীয় এবং চতুর্থ  উইকেট জুটির সুবাদে ম্যাচে ফিরে।  কাঙ্খিত হারে আসতে থাকে রান। হাসমাতুল্লাহ শাহিদির সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিজ্ঞ অল রাউন্ডার মোহাম্মদ নবী ঝড়ো গতিতে মাত্র ৩২ বলে ৬৫ রান করে জয়ের স্বপ্ন দেখায় আফগানিস্তানকে। ২৬.১ ওভারে যখন নবি আউট হয়ে যায় তখন আফগানিস্তানের রান ৫ উইকেটে ২০১। কাঙ্খিত জয় তখন দৃষ্টি সীমানায়। চেষ্টার ত্রুটি করেনি করিম জানাত (২২), নাজিবুল্লাহ জাদরান (২৩) এবং রাশিদ খান (২৭*)। কিন্তু জয়ের লক্ষ্যে অবিচল লংকানরা সাধ্যের সবকিছু নিংড়ে দিয়ে ৩৭.৪ ওভারে আফগান দলের ইনিংস যখন সাঙ্গ করে তখন জয় পরাজয়ের ব্যাবধান মাত্র ২ রানের। দুই ম্যাচে দুই জয় নিয়ে গ্রুপ অফ ফোরে পৌঁছায় বর্তমান শিরোপা ধারী দল শ্রীলংকা।  তীরে এসেও তরী ডোবার কষ্ট নিয়েই দেশে ফিরবে আফগান দল।  টুর্নামেন্টে আফগান স্পিনাররা ওদের মান অনুযায়ী বোলিং করতে পারলে পর পর দুটি ম্যাচে ওদের বিরুদ্ধে রানের পাহাড় রচিত হত না। এখানেই হেরেছে ওরা। শ্রীলংকা দলকে বাহবা দিতে হয় প্রথম সারির চার বোলার ছাড়াই জিতেছে ওরা।  আজ লাহোরে বাংলাদেশ পাকিস্তানের খেলা দিয়ে শুরু হবে গ্রুপ অফ ফোরের মুল লড়াই। অন্য দুই দল ভারত আর শ্রীলঙ্কা।  গ্রুপ পর্বের দুই জয় এগিয়ে রাখবে শ্রীলংকা দলকে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twelve − five =