তোরা সব জয়ধ্বনি কর

সালেক সুফী

বাঙালির গৌরব উজ্জ্বল বিজয়ের মাস ডিসেম্বর।  বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন জুড়ে বিশ্বকাপ ফুটবল বন্দনা। আসছে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। এমনি মাহেন্দ্রক্ষণকে সামনে রেখে টিম টাইগার্স বাংলাদেশ ক্রিকেটের অভয়ারণ্য শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পরাক্রমশালী ভারত দলকে পর পর দুই ম্যাচে পরাজিত করে ওডিআই সিরিজ জিতে জাতিকে আনন্দ সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে। প্রথম খেলায় মেহেদী মিরাজ মুস্তাফিজের শেষ উইকেট বীরত্বে ১ উইকেটের জয়, দ্বিতীয় ম্যাচে মিরাজ মাহমুদুল্লার সপ্তম উইকেটে ১৪৮ রানের মাইল ফলক জুটির সুবাদে ২৭১/৭ রানের বিশাল স্কোর। আর তার পর দলের সমন্বিত বীরোচিত বোলিং ফিল্ডিংয়ে ৫ রানে জয় হকচকিয়ে দেয় আত্মম্ভরী ভারত দলকে।

তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ সিরিজ জিতে নেয় রয়াল বেঙ্গল বাহিনী। মনে আছে ২০১৫ বিশ্বকাপে এমসিজি বিড়ম্বনার পর এমএস ধোনির ভারত দলকে ২-১ ব্যাবধানে হারিয়েছিল মাশরাফির দল।  এবারেও টি২০ বিশ্বকাপে এডিলেড বিতর্কের পর বাংলাদেশের জয় প্রকৃতির প্রতিশোধ কি না কে বলবে? বৃষ্টিভেজা আউট ফিল্ডে জোর করে খেলিয়ে হারানো হয়েছিল বাংলাদেশকে বললে বাড়িয়ে বলা হবে না।

আইসিসি র‌্যাংকিংয়ে কার কোথায় অবস্থান মুখ্য নয়।  বাংলাদেশ ভারত দ্বৈরত ইদানিং উষ্ণতা ছড়ায় বিভিন্ন ফরম্যাটে। সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হয়. অনেক ক্ষেত্রেই বিতর্কিত সিদ্ধান্তে তীরে এসে তরি ডুবে বাংলাদেশের।  আমি নিজে উপস্থিত থেকে দেখেছি ২০১৫ এমসিজিতে কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তে হারানো হয়েছিল বাংলাদেশকে আইসিসি বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে।

প্রথম ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ১ উইকেটে ম্যাচ জয় বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছিলো। টস জয় করে ব্যাটিং নেওয়ায় মুন্সিয়ানা ছিল। কিন্তু টপ অর্ডার মিডল অর্ডার বিপর্যয়ের পর ( ৬৯/৬ ) কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ।

ওই সেই মেহেদী মিরাজ নিজ গুণেই যার ব্যাটিং করা উচিত টপ অর্ডারে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংস খেলে বর্ষীয়ান মাহমুদুল্লার সঙ্গে ৭ ম উইকেটে ১৪৮ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে পতনের কালো গহ্বর থেকে উঁচিয়ে দিয়েছিলো। ৬৯/৬ উইকেট থেকে ২৭১/৭ কস্মিনকালেও কল্পনা করা যায়নি। মিরাজ বার বার নিজেকে প্রমাণ করেও কেন টপ অর্ডারে ব্যাটিং করার সুযোগ পায় না প্রশ্ন করেই যাবো। অবহেলিত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কথা কি বলবো।

২৭১/৭ উইকেট পুঁজি নিয়ে ব্যাঘ্র বিক্রমেই লড়েছে বাংলাদেশ।  অসম বাউন্স উইকেটে।  এবাদত সঠিক লেংথ লাইন রেখে বোলিং, মুস্তাফিজের ধীর কার্যকর কাটার কাঁটা হয়ে বিঁধছিলো ভারতের সর্ব অঙ্গে। রোহিত, ধাওয়ান ছিটকে যাওয়ার পর লড়াই করেছিল স্রেস আয়ার (৮২) আর এক্সার প্যাটেল ( ৫৬)।

সারাক্ষণ ভালো বোলিং আর তুখোড় ফিল্ডিং করতে থাকা বাংলাদেশ বিজয় নেশায় চেপে ধরেছিলো ভারতকে। শুরুতে আহত রোহিত শেষ দিকে ফিরে এসে মারকাটারি ব্যাটিং করে পাশার দান প্রায় উল্টে দিয়েছিলো ২৮ বলে অপরাজিত ৫১ রান করে।  কিন্তু মুস্তাফিজের শেষ ওভার থেকে জয় ছিনিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। আরো একটি শ্বাসরোধী ম্যাচটি ৫ রানে জয়, সিরিজ জয়।

বিজয়ের মাসে টাইগার বাহিনী উপহার দিলো বীরের জাতি বাংলাদেশকে। যেন প্রকৃতির প্রতিশোধ দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব। ক্রিকেট জীবনের গোধূলি বেলায় দাঁড়িয়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী মিরাজকে বলতেই পারে ‘তোমার হলো শুরু আমার হলো সারা।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × 3 =