ফেয়ার প্লে – ক্লো ডোমন্ট
‘ফেয়ার প্লে’ ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ফিল্ম। ছবিটি রচনা ও পরিচালনা করেন ক্লো ডোমন্ট। গল্পে এমিলি মেয়ার্স এবং লুক এডমন্ডস একটি কর্পোরেট কোম্পানিতে চাকরি করে। তাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে যা প্রতিষ্ঠানের কেউ জানে না। তবে হুট করে কোম্পানিতে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা চাকরি হারালে এমিলি তার জায়গায় অধিষ্ঠিত হয়, তবে তার যোগ্য ছিলো লুক। যার ফলে এ-ঘটনার পর তাদের মধ্যে শুরু হয় ঝগড়া, বিবাদ, হিংসা, প্রতিহিংসা। যা তাদের কোথায় নিয়ে যায় তা দেখা যাবে ছবিটিতে। এছাড়াও কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে অপরজনের হারাতে কিংবা সফল হওয়ার জন্য কিরূপ অসৎ পথ অবলম্বন করে তা-ও দেখানো হয় ছবিটিতে। ছবিটিতে অভিনয় করেন ফোবি ডাইনেভর, অ্যালডেন ইহরেনরিচ, এডি মার্সান, ধনী সোমারসহ আরও অনেকে।
হাউ টু ব্লিউ আপ অ্যা পাইপলাইন – ড্যানিয়েল গোল্ডহাবার
নাম শুনেই অনেকেই ভাবছেন যে কোনো পাইপলাইনকে উড়িয়ে দেওয়া নিয়েই এই ছবিটি, তবে আপনার ভাবনাটি ভুল এটা কোনো এক্সপ্লোসিভ থ্রিলার ছবি না। ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ইকো থ্রিলার ঘরানার ছবি এটি। ছবিটির সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে সরাসরি পরিবেশ নিয়ে কোনো আলোচনা না করলেও দর্শক হিসেবে আপনার কাছে কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিবে। অসাধারণ এই ছবিটি নির্মাণ করেন ড্যানিয়েল গোল্ডহাবার। কিছু পরিবেশ সচেতন তরুণ একত্রিত হয়েছে একটি গ্যাস পাইপলাইন গুঁড়িয়ে দিতে। মিশন শুরু হওয়ার পর দেখা যায় যারা এই মিশনে অংশগ্রহণ করেছে তারা সকলেই জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়েছে। তবে তারা কী পারবে এফবিআইয়ের প্রতিরোধ উপেক্ষা করে গ্যাস পাইপলাইনটি গুঁড়িয়ে দিতে তা নিয়েই গল্পটি এগোয়। ছবিটিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন আরিয়েলা বেরের, ক্রিস্টিন ফ্রোসেথ, লুকাস গেজ, ফরেস্ট গুডলাক, সাশা লেন সহ আরও অনেকে।
মিসিং – উইল মেরিক ও নিক জনসন
ইন্টারনেটের ব্যবহার যতই বাড়ছে, ক্রমাগত ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে স্ক্রিন লাইফ থ্রিলার সিনেমার সংখ্যা। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে স্ক্রিন লাইফ থ্রিলার সিনেমা কী? মূলত এসব সিনেমার চিত্রনাট্য নির্মিত হয় মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের স্ক্রিন কেন্দ্র করে। এমনি একটি সিনেমা হলো ‘মিসিং’। ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন উইল মেরিক ও নিক জনসন। সিনেমাটিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন স্টর্ম রিড, জোয়াকিম ডি আলমেদা, কেন লিউং, অ্যামি ল্যান্ডেকসহ আরও অনেকে। সিনেমাটির নাম শুনেই বোঝা যায় কেউ হারিয়ে যাওয়া বা নিরুদ্দেশ হওয়া নিয়ে গল্প। গল্পে আঠারো বছর বয়সী জুন এ্যালেন লস এঞ্জেলেসে তার মায়ের সাথে থাকে। তবে একটা সময় তার মা গ্রেস ও তার বয়ফ্রেন্ড কেভেন ছুটি কাটাতে কলোম্বিয়াতে যায়। মায়ের অনুপস্থিতে জুন বন্ধুদের সাথে পার্টি করে তবে কিছুদিন পর সে উপলব্ধি করে তার মা কলোম্বিয়া থেকে ফিরছে না। মায়ের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হলে জুন বুঝতে পারে তার মা হারিয়ে গিয়েছে। এফবিআই তার মায়ের খোঁজ করলেও, জুন ঠিক করে সে ইন্টারনেটের সাহায্য একাই তার মাকে খুঁজবে। জুন কী পারবে তা মায়ের সন্ধান করতে, জানতে হলে দেখতে হবে এই সিনেমাটি।
লংলেগস – ওসগুড পারকিন্স
একই সাথে যদি হরর এবং সিরিয়াল কিলিংয়ের স্বাদ নিতে চান তবে ‘লংলেগস’ সিনেমাটি আপনার জন্য। ২০২৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি পরিচালনা করেন ওসগুড পারকিন্স। এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন মাইকা মনরো, ব্লেয়ার আন্ডারউড, অ্যালিসিয়া উইট, নিকোলাস কেজসহ আরও অনেকে। সিনেমাটি নির্মিত হয় ৯০ এর দশকে একটি গল্পকে ঘিরে। এফবিআই এজেন্ট লি হার্কার রহস্যজনক একটি কেস পান, যাতে অনেকগুলো হত্যাকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় পিতা তার পরিবারে সকল সদস্যদের খুন করে নিজে আত্মহত্যা করেন। তবে অবাক করা বিষয় হলো যেসব স্থানে এই ঘটনা ঘটে সেই স্থানে শয়তানের চিহ্ন সংবলিত একটি চিঠি পাওয়া যায় এবং প্রত্যেকটি পরিবারে নয় বছর বয়সী একজন বাচ্চা পাওয়া যায়, যার জন্মদিন চৌদ্দ তারিখে। এই কেস সমাধান করতে লি হারিয়ে যান রহস্যের এক গোলকধাঁধায়, তবে রহস্য সমাধানের শেষে পর্যায়ে থাকে বড় এক চমক, সেই চমক কী তা জানতে হলে দেখতে হবে সিনেমাটি।
এক্সহুমা – জাং জায়ে হিউন
২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি আয় করা কোরিয়ার হরর সিনেমা ‘এক্সহুমা’। এই সিনেমায় কোরিয়ান লোককথা, ইতিহাস, অভিশাপ ও ভৌতিক আবহের মিশেল পাবেন। সিনেমাটি রচনা ও পরিচালনা করেন জাং জায়ে-হিউন। সিনেমাটিতে অভিনয় করেন চোই মিন-সিক, কিম গো-ইউন, ইয়ো হে-জিন, লি ডো-হিউনসহ আরও অনেকে। গল্পে একদল আধ্যাত্মিক মানুষ একজন বাচ্চাকে অভিশাপ থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করে। তবে সিনেমাটি সামনে যত আগায় বিভিন্ন অংশ ভাগ হতে থাকে তবে ক্লাইমেক্সের শেষ অংশে সকল ঘটনা মিলিত হয় এক বিন্দুতে। প্রাচীন লোকগল্পের আধুনিক উপস্থাপন সিনেমাটিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
বার্লিন – অতুল সবরওয়াল
অনেকেই বলে বলিউড ইন্ডাস্ট্রি উপভোগ্য থ্রিলার সিনেমা বানাতে ভুলে গেছে, তবে বার্লিন সিনেমাটি সেসব কথার উপযুক্ত জবাব। ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি পরিচালনা করেন অতুল সবরওয়াল। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন রাহুল বোস, অপশক্তি খুরানা, ইশ্বক সিং, অনুপ্রিয়া গোয়েঙ্কা কবির বেদীসহ আরও অনেকে। সিনেমাটির পটভূমি ১৯৯৩ সাল, যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভারত ভ্রমণে আসবেন তার এক সপ্তাহ আগে আটক হয় অশোক নামক একজন বিদেশি গোয়েন্দা। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে অশোক বলতে এবং শুনতে পারে না। তবে ভারতে অবস্থানরত অবস্থা এই গোয়েন্দাকে প্রেসিডেন্ট হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়। সাংকেতিক ভাষা জানে এমন একজন শিক্ষক পোস্কিন ভার্মাকে নিয়োগ দেয় তারা। তবে পোস্কিন যখন সেই গোয়েন্দার পরিকল্পনা জানতে পারে, বের হতে থাকে অপরাধের এক চমকপ্রদ তথ্য। তবে গোয়েন্দা সংস্থার এই অনুসন্ধানের জালে ফেঁসে যেতে হয় পোস্কিন ভার্মাকে। পোস্কিন কী পারবে এই জাল থেকে বের হতে।
দ্য রয়েল হোটেল – কিটি গ্রিন
২০২৩ সালে নির্মিত হয় ‘দ্য রয়েল হোটেল’ সিনেমাটি যা রচনা ও পরিচালনা করেন কিটি গ্রিন। সিনেমাটি পিট গ্লিসনের বই হোটেল কুলগার্ডিয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়। সিনেমাটিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন জুলিয়া গার্নার, জেসিকা হেনউইক, টবি ওয়ালেস, হুগো বিনসহ আরও অনেকে। গল্পে দুই আমেরিকান বান্ধবী হামা ও ইলিফ আস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণে যায়, সেসময় অতিরিক্ত খরচ করার ফলে তাদের সব টাকা শেষ হয়ে যায়। তারা সিদ্ধান্ত নেয় কাজ করে অর্থ সংগ্রহ করে তারা নিজেদের দেশে ফিরে যাবে। তবে তারা যেহেতু অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক নয় তাই কেউ তাদের চাকরি দিতে চায় না, কিন্তু হটাৎ তাদের একটি বার সেন্টারে কাজ করার সুযোগ হয়। বার সেন্টারের ক্রেতারা তাদেরকে সেক্সুয়ালি এবিউজ করে। ফলে তারা চাকরি ছাড়তে চায় কিন্তু তা করতে পারে না। এই ফাঁদ থেকে তারা কিভাবে বের হয় তা নিয়েই সিনেমার গল্প।
সায়তান – বিকাশ বহল
২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল মুক্তি পায় সুপার ন্যাচারাল হরর সিনেমা ‘সায়তান’। ৫০ কোটি বাজেটের সিনেমাটি ইতিমধ্যে ২০০ কোটির অধিক আয় করে। সিনেমাটি পরিচালনা করেন বিকাশ বহল। এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন অজয় দেবগন, আর মাধবন, জ্যোথিকা,জানকি বদিওয়ালা, অঙ্গদ রাজসহ আরও অনেকে। গল্প শুরু হয় কবির নামক এক চার্টার অ্যাকাউন্টেন্ট ও পরিবার নিয়ে। কবির তার স্ত্রী জ্যোতি এবং সন্তান ধ্রুব ও জানভিকে নিয়ে ছুটিতে তাদের গ্রামের ফার্মহাউজে যায়। সেখানে তাদের সাথে দেখা হয় ভিনরাজ নামক একজন ব্যক্তির সঙ্গে। কথা বলতে বলতে ভিনরাজ জানভিকে একটি লাড্ডু খেতে দেয়, লাড্ডু খাওয়ার পর জানভি ও তার পরিবারে জীবনে নেমে আসে অভিশাপ। সেই লাড্ডুতে ছিল বশীকরণ মন্ত্র যার ফলে ভিনরাজ জানভিকে তার ইচ্ছামতো ব্যবহার করে। এর মাশুল জানভির পরিবারকে কিভাবে দিতে হবে তা জানতে হলে দেখতে হবে সিনেমাটি।
মাহারাজা – নিথিলান স্বামীনাথন
২০২৪ সালে ভারত মেতেছিল সাউথ ইন্ডিয়ান সিনেমা মাহারাজাকে নিয়ে। ভারতে এই বছরে ব্যবসায় সফল সিনেমার মধ্যে এটি একটি। সিনেমাটি রচনা ও পরিচালনা করেন নিথিলান স্বামীনাথন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন বিজয় সেতুপতি, অনুরাগ কাশ্যপ, মমতা মোহনদাস, নটরাজন সুব্রামানিয়ামসহ আরও অনেকে। গল্পে তুবড়ে যাওয়া ডাস্টবিন (যার নাম নাকি লক্ষ্মী) হারিয়ে গিয়েছে বলে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে নিরীহ এক প্রৌঢ। স্বাভাবিক ভাবেই এমন অভিযোগ শুনে অফিসাররাও থ। এর জন্য কেউ থানায় আসে নাকি? কিন্তু প্রৌঢ়ের প্রবল আর্জি, প্রয়োজনে সে পাঁচ, পাঁচ কেন সাত লক্ষ টাকাও খরচ করতে রাজি! কেন? কী আছে ওই ডাস্টবিনে? নাকি এর আড়ালে রয়েছে অন্য কিছু? তা নিয়েই চলতে থাকে সিনেমাটির গল্প। দু’জন বাবার মানসিক টানাপোড়েন, সন্তানের প্রতি ভালোবাসা, তাদের ভালো রাখার জন্য শেষ পর্যন্ত লড়া সবই দেখা যাবে সিনেমাটিতে।
দ্য কিলার – ডেভিট ফিন্চার
থ্রিলার সিনেমার গুরু ডেভিট ফিন্চার প্রায় এক দশক পর তার নতুন সিনেমা নিয়ে আসেন। ২০২৩ সালে মুক্তি পায় তার আরেক একশন থ্রিলার সিনেমা ‘দ্যা কিলার’। ডেভিট ফিন্চার সাইকোলজিকাল থ্রিলারের জন্য বিখ্যাত হলেও এই ছবিতে তিনি একশনকে বেশি প্রাধান্য দেন। সিনেমাটিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন মাইকেল ফাসবেন্ডার, আরলিস হাওয়ার্ড, চার্লস পার্নেল, কেরি ও’ম্যালি, সালা বাকের, সোফি শার্লট, টিল্ডা সুইন্টনসহ আরও অনেকে। গল্পটি শুরু হয় একজন ভাড়াটে খুনিকে দিয়ে। টাকার বিনিময়ে সে যে কাউকে হত্যা করতে দ্বিধা করে না, তবে তাদের মধ্যেও থাকে মন। তাদেরও কষ্ট হয়, কেন ভাড়াটে খুনিকে এই কাজ করতে হয়, কারা এর পেছনে কারা আছে তা নিয়েই গল্পটি।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: সিনেমালজি