সালেক সুফী
৬ উইকেটে ব্যাবধানে দাপুটে জয় দিয়েই কাল চট্টগ্রামের সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সফরকারী শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। উভয় দলের ইনিংসের সূচনা সময় ছাড়া গোটা ম্যাচের অবশিষ্ট পুরোটাই ছিল বাংলাদেশের নিরংকুশ নিয়ন্ত্রণে। টস জয় করে রাতের শিশির সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করেই ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সফরকারী দল। পিথুন নিশাঙ্কা (৩৬) ,আভিস্কা ফের্নান্দোর (৩৩) উড়ন্ত সূচনা করেছিল। কিন্তু কালকের ম্যাচে সুযোগ পেয়েই তানজিদ তামিম শুরুতে তিন তিনটি উইকেট তুলে নিলে শ্রীলংকার ইনিংসের তরঙ্গ স্তিমিত হয়ে পরে . কুশল মেন্ডিস ( ৫৯) এবং জানিথ লিয়ানাগে (৬৭) ভালো ব্যাটিং করে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেও তাসকিন,শরিফুল ,মিরাজের বোলিং তোপে ২৫৫ রানে সাঙ্গ হয় লংকান ইনিংস। খেলার ধারা ,উইকেট অনুযায়ী যা ছিল অন্তত ২৫-৩০ রান কম. জবাবে সূচনায় লিটন ,সৌম্য ,হৃদয়ের ব্যার্থতায় একসময় ৫.১ ওভারে মাত্র ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ট্রাজিক হিরো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ উইকেটে এসে অধিনায়ক নাজমুল শান্তর সঙ্গে জুটি বেঁধে প্রতিআক্রমণ করে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৬৯ রান যোগ করে খেলার মোমেন্টাম পাল্টে দেয়। রিয়াদ ৩৭ বলে ৩৭ রান করে ফিরে গেলেও মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিক ( ৭৩*) দলনায়ক শান্তর ( ১২২* ) সঙ্গে ৫ম উইকেট জুটিতে রূপকথার ক্রিকেট উপহার দিয়ে ৬ উইকেটের বিশাল জয় এনে দেয়। ৮ বল হাতে রেখে ২৫৭/৪ করে জয়ের বন্দরে থামে টাইগার বাহিনীর জয়যাত্রা। তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
রমজান মাসে খেলার সূচি আরো একটু চিন্তা করে করা উচিত ছিল। অনেক খেলোয়াড় রোজা রাখে। দর্শক সমর্থকদের ইফতার করতে হয়. একটু বিবেচনা করে খেলা ৩০ মিনিট এগিয়ে আনলে সবার জন্য সুবিধা হয়. হয়তো টেলিভশন সম্প্রচার সময় বিবেচনা করতে হয়েছে। জানিনা কাল কেন টস জয় করে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শ্রীলংকা। উপমহাদেশে এই সময় রাতের শিশির বল ভিজিয়ে বোলারদের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। হয়তো কুশল মেন্ডিজ ভেবেছিলো ৩০০র অধিক রান করে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ করবে। শুরুতে কিন্তু ছন্দে থাকা পাথুন নিশাঙ্কা এবং আভিস্কা ফার্নান্ডো তাসকিন এবং শরিফুলকে আক্রমণ করে সেই পথে ছিল. কিন্তু পরিবর্তিত পেসার তানজিম হাসান সাকিব আক্রমণে এসে দুই ওপেনার এবং সাদিরা সামারাবিক্রামার উইকেট ঝটফট তুলে দিয়ে গতিরুদ্ধ করে সফরকারী দলের ইনিংস। অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস এই অবস্থায় প্রথমে চারিথ আসালংকা এবং পরে জনিথ লিয়ানাগেকে (৬৭) সঙ্গী করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাসকিন ( ৩/৬০) ,শরিফুল ( ৩/৫১) দারুন ভাবে ফায়ার আসে। সঙ্গে কিপ্টে বোলিং করে মেহিদি মিরাজ ( ১/৩৩) . শ্রীলংকা ২৫৫ রানে ইনিংস শেষ করে.
লিটন( ০) , সৌম্য (৩) ,হৃদয় (৩) উবে গেলে বাংলাদেশের টপ অর্ডার কিন্তু শুরুতেই কোনঠাসা হয়ে পরে. ২৩/৩ থেকে শান্তর সঙ্গে বিপদে ত্রাতা হয়ে আবারো ইনিংসের মোড় ঘুরিয়ে দেয় বিশ্বস্থ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। শিশিরে বল ভিজে যাওয়ায় এই সময় লংকান স্পিনারদের বল গ্রিপ করতে অসুবিধা হচ্ছিলো। রিয়াদ আউট হবার পর শান্ত – মুশফিক জুটি রূপকথার ইনিংস উপহার দেয়। অবিচ্ছিন্ন ৫ম উইকেট জুটিতে মাইল ফলক ১৬৫ রান করে ৬ উইকেটের জয় এনে দেয় শান্ত ,মুশফিক। শান্ত ১৩ চার আর ২ ছয়ে ১২৯ বলে অপরাজিত ১২২ রান করে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। বিশস্ত মুশফিক ৮৪ বলে ৭৩ রান করে অপরাজিত ছিল.
বাংলাদেশের অনায়াস জয়ের পরেও কথা থাকে। সৌম্যকে আর কত সুযোগ দেয়া হবে। দলে বিজয় এবং তানজিদ তামিম থাকা সত্ত্বেও ওদের কেন সুযোগ দেয়া হচ্ছে না. লিটনের ব্যাটিং অনেকটা প্রেডিক্টবল হয়ে গাছে। হৃদয় কিন্তু তৃতীয় টি ২০ ম্যাচের মত আউট হয়েছে। বাংলাদেশের মনে হয় লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে সুযোগ দিয়ে বোলিং অপশন বাড়ান উচিত। আমি শান্তর অধিনায়কত্ব প্রশংসা করব। দলের বোলিং সম্পদ পরিমিত ব্যবহার করা , নিখুঁত ফিল্ডিং সাজানো অবশ্যই সবার দৃষ্টি কেড়েছে। আর নিজে উপমধর্মী ব্যাটিং করে ম্যাচ সেরা হয়েছে।