সালেক সুফী: ভারতের দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ফুটবল দল মালেতে দেখছে রক্ত সাধ পাওয়া রয়েল বেঙ্গল টাইগারের হিংস্র থাবা। সাফ ফুটবল টুর্নামেন্টে যোজন যোজন এগিয়ে ভারত। ৭ বার হয়েছে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র একবার। ফিফা রাংকিংয়ে ভারত ১০৭, বাংলাদেশ ১৮৯। এইতো কিছদিন আগেও বাংলাদেশ দোহায় হেরেছে ২-০ গোলে, বিশ্ব কাপ এবং এশিয়া কাপের কোয়ালিফিকেশন খেলায়। পাঁচ জাতির এবারের টুর্নামেন্টেও ফেভরিট ভারত। কিন্তু কাল প্রথমার্ধে সুযোগ সন্ধানী তুখোড় ভারতীয় গোলদাতা সুনীল ছেত্রীর গোলে প্রথমার্ধে (০-১) গোলে এগিয়ে থাকা ভারতকে দ্বিতীয়ার্ধে ১০ জন নিয়েও নাচিয়েছে আহত বাঘের মতোই ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ। লড়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো “দাবায় রাখতে পারব না” মানসিকতায়। ঠিক যেমন দেখতাম ১৯৭০, ১৯৮০ বাংলাদেশ ফুটবলে তারই যেন প্রতিচ্ছবি। দেশে এবং প্রবাসে থাকা ১৮ কোটি বাংলাদেশির হৃদয় মন জয় করেছে বাংলাদেশ দল। দুই খেলায় ৪ পয়েন্টস নিয়ে বাংলাদেশ এখন শীর্ষে। এখন থেকে ফাইনাল খেলা এমনকি শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখাও এখন অসম্ভব কিছু হয়তো নয়।
অথচ এবারে বাংলাদেশ সাফ ফুটবলে কি করবে, অনেকের মতো আমার সন্দেহ ছিল।এমনিতেই বাংলাদেশ পাঁচ জাতির এই টুর্নামেন্টে শুধুমাত্র পাকিস্তানের উপরে।তদুপুরি বেশ কিছু দিন যাবত বাংলাদেশ ফুটবলের আকাল চলছিল। বিশ্ব কাপ এবং এশিয়া কাপ ভারত, কাতার, উজবেকিস্তান, আফগানিস্তানের কোয়ালিফাইং গ্রপে সবার শেষে শেষ করেছে। সাফ ফুটবলের জন্য প্রস্তুতি ম্যাচে এইতো সেদিন প্যালেস্টাইন এবং কিজিস্তানের নিকট হেরেছে পাঁচ পাঁচ গোলে।হেড কোচ জেমি ডেকে বাদ দিয়ে বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচকে জাতীয় দলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাড়াহুড়ো করে। অথচ দুটি ম্যাচে দেখলাম পাল্টাতে শুরু করেছে জাতীয় দল।
কাল দেখলাম প্রথমার্ধে ক্ষণিকের ভুলে সেই সুনীল ছেত্রীর সুযোগসন্ধানী গোলে পিছিয়ে পড়েও আতংকিত হলো না বাংলাদেশ। শেয়ানে শেয়ানে লড়াই করলো প্রথম অর্ধে। গোল পেতে পারতো যদি বাংলাদেশ দলে অভিজ্ঞ ফরওয়ার্ড থাকতো। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সুনীলকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখলো বিশ্বনাথ। ১০ জনের দল নিয়েও তেতে উঠলো বাংলাদেশ। তপু, তারিক মিলন মোহনায় দুর্ভেদ্য বাংলাদেশ রক্ষণ ভাগ। গুটিয়ে না যাওয়া বাংলাদেশ বার বার ঝাঁপিয়ে পড়লো চিতার ক্ষিপ্রতা নিয়ে।৭৪ মিনিটে মিললো কর্নার। জামাল ভূঁইয়ার করা কর্নারে সাদের মাথার ফ্লিক অরক্ষিত থাকা সদ্য কৈশোর পেরুনো ইয়াসিন আরাফাত হেড করে পৌঁছে দিলো ভারতীয় জালে। ১-১ সমতা বাকি। বাকি সময় শত চেষ্টা করেও ভারত পারলো না জয় ছিনিয়ে নিতে। মাঝ মাঠেও ওদের জমিদারি করার জন্য একটুও জমি ছেড়ে দেয়নি বাংলাদেশ। একজন কম নিয়েও অস্কার ব্রুজন শিষ্যরা রুখে দিয়ে প্রমাণ করলো “কখনও বলোনা মোর যাবো” দর্শনে যারা চলে তারা অপ্রতিরোধ্য।
সাবাশ বাংলাদেশ।এই বাংলাদেশ আমাদের জননী।