দুই শহর ভিন্ন রূপে

সালেক সুফী

একই পৃথিবী, একই আকাশ, একই সূর্য। আমি আছি এখন অস্ট্রেলিয়ার সূর্যোদয় স্টেট কুইন্সল্যান্ড। শরৎকাল শেষে শীত আসছে। প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সাজে।  আমার জীবনসঙ্গী বাংলাদেশে ঢাকায় উত্তরায়। দীর্ঘদিন পর পারিবারিক জরুরি কাজে বাংলাদেশে। আমি আছি দক্ষিণ গোলার্ধের প্রায় প্রান্ত সীমায়। রোজী দক্ষিণ এশিয়ায়। লোগান সিটি কুইন্সল্যান্ডে এখন আরামদায়ক শরৎকাল, ঢাকা পুড়ছে তীব্র দাবদাহে।

আমি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কোনোভাবেই বাংলাদেশের তুলনা করবো না। তবে বাংলাদেশে এবার গ্রীষ্মকালে যে প্রচণ্ড গরম এর পেছনে বৈষয়িক আবহাওয়া পরিবর্তন ছাড়াও পাপের পরিণতি বলতেও দ্বিধা নেই। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, নদী, জলাধার ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে ঢাকা মহানগরীকে কংক্রিটের বস্তি বানানো  হয়েছে। সীমিত সড়কগুলোতে অসংখ্য পরিবেশ দূষণকারী যানবাহন নির্বিচারে উষ্ণতা বাড়াচ্ছে। একসময়ের ছায়া সুনিবিড় শান্তির মহানগর ঢাকা এখন জ্বলন্ত কড়াইয়ের মতো জ্বলছে।

এই যে ঢাকা মহানগরীতে স্বাভাবিক বায়ু চলাচল রুদ্ধ করে অসংখ্য কাচ ঘেরা বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলো, নদী-জলাধার জবর দখল করা হলো, পরিবেশের কথা বিবেচনা না করে উন্নয়নের মহাযজ্ঞের নামে মহানগরকে বসবাসের অযোগ্য করা হলো, দায় দায়িত্ব কে নিবে? একটি বিদেশি সংস্থা পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত একজন বাংলাদেশি নারীকে হিট অফিসার হিসেবে নিয়োগ  দিয়েছে। তিনি ৫২ বছরের পাপ মোচন করার জন্য কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু তাকে নানা ভাবে সমালোচনা করছে নির্বোধ মানুষগুলো।

আমি অস্ট্রেলিয়ায় অবকাঠামো নির্মাণ কাজে সম্পৃক্ত থেকে দেখেছি এখানে একটি গাছ কাটতে হলে কত ধরনের অনুমতি লাগে। নিতান্ত অপরিহার্য হলে একটির পরিবর্তে ৪টি গাছ লাগাতে হয়। বাংলাদেশে কাজ করার সময় আমি নিজেও আমার সকল কর্মস্থলে অসংখ্য ফলজ, বনজ এবং ভেষজ গাছ লাগিয়েছি।

কিন্তু বনখেকো, নদীখেকো মানুষগুলো অক্সিজেন ফ্যাক্টরিগুলো ধ্বংস করে প্রিয় ঢাকা মহানগরীকে গ্যাস চেম্বার বানিয়ে ফেলেছে। আমার নিজের শহর ফরিদপুর। দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি খুলনায়। ইদানিং পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মিত হওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়নের জানালা দরজা খুলে গেছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর বদৌলতে উত্তরবঙ্গ আগে থেকেই সংযুক্ত।

আমি আশা করবো উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়ন যেন সবুজ উন্নয়ন হয়।  পরিবেশ ধ্বংসের মতো পাপ করে যেন সবুজ শ্যামল বাংলাদেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া না হয়। স্কুল জীবন থেকেই যেন শিশুদের পরিবেশ সচেতন করে গড়ে তোলা হয়।

শান্তির লোগান সিটি থেকে শীঘ্রই আসবো বাংলাদেশে আমার সঙ্গে ইনশাল্লাহ আসবে বর্ষাকাল অচিরেই। এখানে সকাল হয় পাখির ডাকে। চারিদিকে সবুজ বৃক্ষের সমারোহ।  চাইলেই যেতে পারি প্রশান্ত সাগর পাড়ে।  চিন্তাই করতে ভুলে গেছি বিদ্যুৎ জ্বালানি ঘাটতির কথা। কিন্তু বাংলাদেশ তথা ঢাকা কত ভিন্ন। তবুও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সহকর্মীদের ধন্যবাদ দিব তীব্র দাবদাহের সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েনি। এ ধারা অব্যাহত থাক প্রার্থনা করি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × 5 =