দুবাইয়ে পথে এমভি আবদুল্লাহ, পাহারা দিচ্ছে স্পেন-ইতালি

সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হবার পর এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা জাতীয় পতাকা নিয়ে জাহাজের ডেকে উল্লাসে মেতেছেন। তাদের পাশে রয়েছেন স্প্যানিশ নৌবাহিনীর নৌসেনারা। বর্তমানে আবদুল্লাহকে নিরাপত্তা দিয়ে দুবাইয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ইতালিয়ান নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ।

রোববার দুপুর ১২টায় জাহাজের মালিক কোম্পানি কেএসআরএমের আগ্রাবাদের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত জানান, সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আনা হচ্ছে। জাহাজটি আগামী ১৯-২০ এপ্রিল দুবাই পৌঁছাবে। এরপর জাহাজটিকে সরাসরি চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হবে। তবে মুক্তিপণের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

তিনি বলেন, ‘জাহাজে জলদস্যু ছিল ৬৫ জন। শনিবার মধ্যরাতে বোটে করে তারা চলে যায়। জাহাজটি এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসছে। দুবাইয়ে নোঙর করার পর জাহাজের নাবিকরা ফ্লাইটে বা জাহাজে যেভাবে ইচ্ছা দেশে ফিরতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিদেশি যুদ্ধজাহাজ ফোর্সফুলি জাহাজটি উদ্ধারে যেতে চেয়েছিল। আমাদের সরকার কুইক রেসপন্স করেছে। সাংবাদিকরা সহযোগিতা করেছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে কেএসআরএম-এর সিইও মেহেরুল করিম বলেন, ‘জাহাজ দখলে নেওয়ার পর আমরা লোকেশন ট্রেস করতে থাকি। যোগাযোগ শুরুর পর প্রতিদিনই কথা হচ্ছিল। নাবিকরা কেমন আছে, কত তাড়াতাড়ি দস্যুরা জাহাজ ছেড়ে যাবে ইত্যাদি কথা হতো।’

তিনি আরও জানান, ‘দুই দিন আগে আমাদের দাবি ছিল, তাই প্রত্যেক নাবিকের ভিডিও নিয়েছি। মুক্তিপণের প্রতিটি কাজ আইনগতভাবে করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে করা হয়েছে। কত ডলার সে বিষয়টি আমরা নানা কারণে বলতে পারছি না। ইউএসএ, ইউকে, সোমালিয়া, কেনিয়ার নিয়ম মানতে হয়েছে।’

এদিকে, বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এবং জিম্মি ২৩ নাবিককে ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণের বিনিময়ে সোমালিয়ার জলদস্যুরা মুক্তি দিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৫৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

দুই সোমালি জলদস্যুর বরাতে রোববার এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এর আগে, মুক্তিপণ দিয়ে সোমালিয়ায় জিম্মি নাবিক ও জাহাজ মুক্ত করা হয়েছে, এমন তথ্য সঠিক নয় বলে জানিয়েছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কয়লা বোঝাই এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাইয়ের পর উদ্ধারের ঘটনায় আর্মড গার্ড না থাকাকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি জানান, জলদস্যুদের কাছে খবর ছিলো জাহাজে কোনো আর্মড গার্ড নেই। সেই সুযোগেই তারা জাহাজটি আটক করে। ২০২১ সাল পর্যন্ত ওই জাহাজে সশস্ত্র গার্ড ছিলো। যদি এখনও আর্মড গার্ড থাকতো তাহলে হয়তো জলদস্যুরা এমন দুঃসাহস দেখাতো না বলেও উল্লেখ করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী।

গত মার্চে মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে সোমালি জলদস্যুদের শিকারে পরিণত হয় বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। জিম্মি করা হয় এর ২৩ নাবিককেও। সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে ঘটে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

19 − six =