সিনেমা বানানোর জন্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানসহ নানাজনের পেছনে ছুটেও কোনো লাভ হয়নি নির্মাতা আব্দুল্লাহ আল ফাহিমের। কেউ ভরসা করতে পারছিলেন না, আবার কেউ সিনেমা বানানোর বাজেট দিতে রাজি নন। অভিনয়শিল্পীদের কাছেও গুরুত্ব পাচ্ছিলেন না। সব মিলিয়ে একবুক অভিমান নিয়ে দেড় বছর আগে সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা করতে ইতালিতে পাড়ি জমান তিনি। সেখানে যাওয়ার পর বদলে যায় দৃশ্যপট। দেশে যে নির্মাতা ছিলেন উপেক্ষিত, তিনিই বানিয়ে ফেললেন জার্মান ভাষার সিনেমা। নাম ‘কিলার’। সিনেমাটি জার্মান ভাষার পাশাপাশি দেখা যাবে ইংরেজি ভাষায়।
বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও ফিকশন নির্মাণ করেছেন আব্দুল্লাহ আল ফাহিম। তবে ইতালি গিয়ে নিজের নামের আগে যোগ করেছেন জন। জানালেন, সেখানকার সংস্কৃতি ও মানুষের সঙ্গে সহজে মিশে যাওয়ার জন্যই এটা করেছেন তিনি। জন আব্দুল্লাহ আল ফাহিম নামেই নির্মাণ করেছেন প্রথম সিনেমা কিলার। সিনেমায় কাজ করেছেন ২৯ দেশের শিল্পী-কলাকুশলী। নির্মাতা জানালেন, শিগগির বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হবে কিলার।
জার্মানির বার্লিন শহরের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে কিলার। সাতজন বন্ধু একসঙ্গে থাকলেও কেউ কারও প্রতি সন্তুষ্ট নয়। সামনাসামনি ভালো ব্যবহার করলেও একে অপরকে হত্যা করতে চায় তারা। হঠাৎ তাদের একজনের মৃত্যু হয়। সেই মৃত্যুরহস্য বের করতে তদন্তে নামে পুলিশ, তদন্তে নামে তার বাকি বন্ধুরা। কিলারের মুখ্য কয়েকটি চরিত্র অভিনয় করেছেন জার্মান অভিনেতা ডেনিয়েল মুলার, ডেভিড নুমান, ইতালিয়ান অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা লুইস প্রমুখ।
আব্দুল্লাহ আল ফাহিম বলেন, ‘ইতালির ইউনিভার্সিটি অব মিলানে ফিল্ম অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগে মেক্সিকো, জার্মান, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ৯৬ জন শিক্ষার্থী আছেন। তাঁদের সঙ্গে আমার সিনেমা নির্মাণের স্বপ্নের কথা শেয়ার করলে তাঁরা আমাকে সাহস দেন। তাঁদের মাধ্যমেই জার্মান প্রযোজক মি. বেলের সঙ্গে আমার পরিচয়। গল্প শুনে তিনি জানালেন, সিনেমাটি প্রযোজনা করবেন। আমি কাজ শুরু করলাম।’
জার্মান ভাষায় সিনেমা নির্মাণের বিষয়ে নির্মাতা বলেন, ‘গল্প চূড়ান্ত করার পর জার্মান অভিনেতা ডেনিয়েল মুলার, ডেভিড নুমানের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তাঁদের লুক দেখেই মনে হয়েছে, আমার সিনেমার চরিত্রের জন্য তাঁরা পারফেক্ট। দুজনের সঙ্গে গল্প শেয়ার করলে তাঁরা রাজি হন। কিন্তু শর্ত দেন, সিনেমাটি বানাতে হবে জার্মান ভাষায়। আমি জার্মান ভাষা শিখতে শুরু করি। তবে সিনেমার চিত্রনাট্যটি ইংরেজিতেই করেছি। জার্মান ভাষায় রূপান্তর করেছেন আমার এক টিমমেট। ইতিমধ্যে সিনেমার কাজ শেষ করেছি। শিগগির বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জমা দেওয়া হবে। কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি প্রদর্শনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরপর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হবে।’
নির্মাতা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে নিজ দেশেও সিনেমা বানাতে চান তিনি।