দেশে গবেষণার ফল, মাস্ক কোভিড সংক্রমণ নিশ্চিত ভাবে ঠেকায়

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক কতটা ভালো ফল দেয়, তার প্রমাণ এসেছে বাংলাদেশে পরিচালিত একটি সমীক্ষায়।আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, করোনাভাইরাস মহামারীর শুরু থেকে মাস্ক ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে বড় পরিসরের সমীক্ষা বিশ্বে এটাই প্রথম।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইয়েল স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট’ এর জেসন অ্যাবালাক এবং মুশফিক মোবারক পরিচালিত ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাস্কের ব্যবহার কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ‘অনেকটাই’ কমিয়েছে।তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাস্ক পরার জন্য সচেতনতামূলক প্রচারের কারণে উপসর্গযুক্ত সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনা গেছে, বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে।

ইয়েল ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশের ৬০০ গ্রামের ৩ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ এই জরিপে অংশ নিয়েছেন।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলে, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দল ‘ইনোভেশন্স ফর পোভার্টি অ্যাকশন অ্যান্ড স্কলার্স’ এর সঙ্গে সমন্বিতভাবে সমীক্ষাটি পরিচালনা করেন মোবারক ও অ্যাবালাক।

এই গবেষণা চালানো হয় গ্রামগুলেকে দুই ভাগে ভাগ করে। এক ভাগে ছিল ১ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ, যাদের মাস্ক পরাতে উৎসাহ দেওয়া হয় গতবছর নভেম্বর থেকে। স্থানীয় নেতৃত্বের সমর্থন এবং এলাকা ঘুরে পর্যবেক্ষণ দলের প্রচারসহ ‘সমন্বিত’ চার ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয় সচেতনতা বাড়ানোর জন্য। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের এ অংশকে বলা হচ্ছে ‘টার্গেটেড গ্রুপ’।

আর অন্য অংশে ‘কন্ট্রোল গ্রুপে’ অন্য গ্রামগুলোর ১ লাখ ৬৩ হাজার বাসিন্দাকে কেবল পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখা হয়। কোনো ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম সেখানে চালানো হয়নি।

গত এপ্রিলে এ সমীক্ষার প্রথব পর্বের ফলাফলে দেখা যায়, ‘সমন্বিত’ উদ্যোগের ফলে টার্গেটেড গ্রুপের গ্রামগুলোতে মাস্ক ব্যবহার বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়েছে, যেখানে ‘কন্ট্রোল গ্রুপে’ গ্রামগুলোতে মাস্ক ব্যবহারের হার ১৩ শতাংশ।

সমীক্ষার দ্বিতীয় পর্বে ‘টার্গেটেড’ এবং ‘কন্ট্রোল’ গ্রামগুলোতে কোভিড-১৯ উপসর্গের বিষয়ে জরিপ চালিয়েছেন গবেষকরা। যাদের উপসর্গ ছিল, তাদের রক্তের নমুনা চাওয়া হয়েছে এবং কোভিড- ১৯ এর অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়েছে।

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, মাস্ক পরার প্রচার চালানো হয়েছে এমন ‘টার্গেটেড’ গ্রামগুলোতে উপসর্গযুক্ত সক্রমণ শনাক্ত হয়েছে কন্ট্রোল গ্রুপের গ্রামগুলোর চেয়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ কম।

যে সব গ্রামে কাপড়ের মাস্কের পরিবর্তে সার্জিক্যাল মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে সেখানে আরও ভালো ফল পাওয়া গেছে।ওইসব এলাকায় সংক্রমণের হার ছিল সার্বিকভাবে কন্ট্রোল গ্রুপের চেয়ে ১১ শতাংশ কম। ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে সেটা ২৩ শতাংশ কম আর ৬০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে তা ৩৫ শতাংশ কম।

গবেষকরা বলছেন, মাত্র ৪২ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরার ফলেই সংক্রমণের মাত্রা এতোটা কমে এসেছে। বিশ্বব্যাপী মাস্ক পরার কার্যকারিতা এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হতে পারে।

মুশফিক মোবারক বলেন,  “মাস্কের ব্যবহার কীভাবে বাড়ানো যায় সেজন্য আমরা যেভাবে একটি মডেল দাঁড় করেছি, ওই একই দল এখন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মানুষের কাছে টিকা পৌঁছানোর শেষ ধাপের একটি কার্যকর মডেল তৈরির চেষ্টা করছে।”

বিডিনিউজ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × 4 =