দেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে: ফাওজুল কবির

সারাদেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সক্রিয় ভূমিকা পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। খবর বাসস।

আজ সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত অধিবেশন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

এসির ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফাওজুল কবির বলেন, বাসাবাড়ি, মার্কেটসহ সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এসি চালানো যাবে না। ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এসি চালানো হলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দিষ্ট টিম কাজ করবে।

উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে একটি ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা পেয়েছে। বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাওয়ার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য পরিশোধে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও আমরা আসন্ন রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছি।

উপদেষ্টা বলেন, শীতকালে আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ৯ হাজার মেগাওয়াট। গ্রীষ্মে সেই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭-১৮ হাজার মেগাওয়াট। এই যে চাহিদাটা বেড়ে যাওয়া তার অন্যতম দু’টো কারণ হচ্ছে সেচ ও এসির ব্যবহার। সেচ যেহেতু খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাই তাকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবো। কিন্তু এসির যে ব্যবহার, এটা যদি পরিমিত আকারে ব্যবহার করা যায়, তাহলে কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।

তিনি বলেন, কুলিং লোড কমাতে আমরা ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছি। ধর্ম উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছি, তিনি যেন প্রত্যেকটা মসজিদে তারাবির সময় এসি ২৫ ডিগ্রিতে ব্যবহারের নির্দেশনা দেন। সচিবালয়সহ সরকারি-বেসরকারি অফিসেও এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করা হবে। এসি ব্যবহারের এ নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করতে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি টিম কাজ করবে। কোথাও ব্যত্যয় ঘটলে ক্ষেত্রবিশেষে বিদ্যুৎ বিচ্ছেদও করা হতে পারে।

গ্যাস সংকটের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে কূপ খনন করা হচ্ছে। যেখান থেকে অল্প-অল্প করে উৎপাদন বাড়ছে। এ ছাড়া গ্যাসের অবৈধ যে সব সংযোগ রয়েছে, সেগুলো বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। এতেও কিন্তু ২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে। তা ছাড়া এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে যথেষ্ট বৈদেশিক মুদ্রার সহায়তা যেন পাই, সে বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকও করা হয়েছে। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কিন্তু সক্ষমতার অভাব নেই, অভাব হলো জ্বালানির।

তিনি বলেন, বর্তমানে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কেনা হয়। সেক্ষেত্রে কয়লা, গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে কি পরিমাণে, কত দামে বিদ্যুৎ কেনা হবে, সে বিষয়ে একটি মানদণ্ড ঠিক করা হবে। সবমিলিয়ে আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে একটি সাসটেইনেবল পর্যায়ে নিয়ে আসতে চাই।

সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ সম্পর্কিত বিষয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, সাতক্ষীরা-শ্যামনগর রাস্তা মেরামত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলা হতে লংগদু উপজেলায় সংযোগ সড়ক নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এছাড়াও লালমনিরহাট-বুড়িমারী সড়ক সরলীকরণের বিষয়ে এবং সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা জোরদারকরণের বিষয়ে এবং মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া ইউনিয়ন এবং ইমামপুর ইউনিয়নের মধ্যে ৬০০ মিটার নৌপথে ফেরির স্থলে সেতু নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা হতে লক্ষ্মীপুর রেল যোগাযোগ স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে রেলের জমি উদ্ধার ও ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্তকরণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান উপদেষ্টা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × 4 =