দ. কোরিয়ার রাজনৈতিক সঙ্কটে নোবেলজয়ী হান কাং ‘মর্মাহত’

চলতি বছর সাহিত্যে নোবেলজয়ী দক্ষিণ কোরীয় লেখক হান কাং শুক্রবার বলেছেন, প্রেসিডেন্টের সংক্ষিপ্ত সামরিক শাসন জারির ঘটনার পর তার দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে তিনি গভীরভাবে ‘মর্মাহত।’

হান স্টকহোমে চলতি বছরের পুরস্কার বিতরনের জমকালো অনুষ্ঠান আয়োজনস্থল থেকে এই কথা বলেছেন। তিনি নিজেও এই অনুষ্ঠান থেকে পুরস্কার গ্রহণ করবেন।

তিনি বলেছেন, ‘অনেক কোরীয় নাগরিকের মতো, আমিও গভীরভাবে মর্মাহত। তিনি বলেন,আমি আমার দৃষ্টি সার্বক্ষণিকভাবে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের দিকে নিবন্ধ করে রেখেছি।’

গত মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণকালে অনেকটা আকস্মিকভাবে দেশে সামরিক শাসন জারির ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তখনো সেনাবাহিনী ও হেলিকপ্টার প্রস্তুত ছিল না।

ইউন সুক ইওল বেসামরিক শাসন স্থগিত করে সংসদ সদস্যদের তার জারি করা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ভোটাভুটি থেকে বিরত থাকার ফরমান জারি করেন। কিন্তু তার সামরিক শাসন জারির মুহূর্তের মধ্যে পার্লামেন্ট সদস্যরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। দেশের আপামর জনসাধারণও এসে পার্লামেন্ট ভবন ঘিরে রাখে। ঠিক সেই মুহূর্তে

সেনাবাহিনীর ২৮০ জন সদস্য এসে পার্লামেন্ট ভবনের প্রবেশ মুখে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। সংসদ সদস্যরা ব্যারিকেড ভেঙে পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করে স্পিকারের নেতৃত্বে ভোটাভুটির আয়োজন করে। পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সামরিক শাসনের বিপক্ষে বেশি ভোট পড়ায় স্পিকার সামরিক শাসন রহিত করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক শাসন বাতিল ঘোষণা করা হয়।

দক্ষিণ কোরয়ার পার্লামেন্টে ৩শ’ আসনের মথ্যে উত্তর কোরীয়পন্থী ডেমোক্র্যাটি পাটির জোটগত সদস্য সংখ্যা ১৯০ জন। দলটির সদস্য সংখ্যা ১৭০ জন। সরকারি পিপল পপুলার পার্টির সদস্য সংখ্যা মাত্র ১০৮ জন।

হান বলেছেন, ১৯৭৯-‘৮০ সালে অভ্যুত্থানের মাধমে সামরিক শাসন জারির পর তিনি সেই সময়কার সামরিক শাসনের পরিস্থিতি নিয়ে পর্যাপ্ত পড়ালেখা করেছেন। এমনকি সেই সময়ের মানব সৃষ্ট কর্মকাণ্ডের ওপরও প্রচুর সময় ব্যয় করেছেন।

হান বলেছেন, এখন আমার পরম সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে নিজ চোখে ২০২৪ সালের সামরিক শাসন প্রত্যক্ষ করার।

নোবেল জয়ী হান ১৯৮০ সালে দুই দফা সফল অভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় গোয়াংঝু শহরে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন, সামরিক শাসন জারির পর সেনা সদস্যদের অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীডন ও গণতন্ত্র বিঘ্নিত হওয়ার প্রতিবাদে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলনের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ।

তিনি দেখেছেন কীভাবে ছত্রীসেনারা প্যারাসুটের মাধ্যমে আকাশ থেকে নেমে বিক্ষোভকারীদের ওপর ছুরিকাঘাত, নির্বিচারে বিক্ষুদ্ধ জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে হাজার হাজার লোককে হত্যা করেছিল।

ছোট গল্পকার ও নোবেলজয়ী হান তার ‘দ্য ভেজিটারিয়ান’ বইটির জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এই বইটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘ম্যান বুকার-২০১৬’ সালে পুরস্কার জয়ের মাধ্যমে তাকে বিরাট সফলতা এনে দেয়।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

sixteen + one =