নখ কামড়ানো উত্তেজনার ম্যাচ জয়ী হয়ে ফাইনালে শ্রীলংকা

সালেক সুফী

শ্রীলংকার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে কাল অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ ২০২৩  শ্রীলংকা -পাকিস্তান ম্যাচটি প্রকৃত অর্থেই ছিল সেমী ফাইনাল। বৃষ্টি বিঘ্নিত হয়ে ম্যাচটি ৪২ ওভারে সীমিত হয়েছিল। ম্যাচটির বেশ অনেকটা অংশ জুড়ে স্থানীয় দল এবং বর্তমান শিরোপাধারী শ্রীলংকা ছিল নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু খেলার শেষ পর্যায়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তান। শেষ ওভারে শেষ বলে নির্ধারিত হলো ম্যাচের ভাগ্য। ২ উইকেটে জয়ী হয়ে শ্রীলংকা পৌঁছে গেলো ফাইনালে। ১৬ম এশিয়া কাপে ১১ বার পৌছালো ফাইনালে শ্রীলংকা। আরো একবার বিশ্ব ক্রিকেট এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারত-পাকিস্তান মহারণ দেখতে বঞ্চিত হলো যেটি চাইছিলো অনেকেই।

কাল টস জয়ী পাকিস্তান ৪২ ওভারে ২৫২/৭ উইকেটে করে একটি মোটামুটি কঠিন টার্গেট ছুড়ে দিয়েছিলো। কিন্তু এবারের আসরে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা শ্রীলংকা কুশল মেন্ডিস (৯১) এবং সামারা বিক্রামার (৪৮) চওড়া বাটে ভর করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিলো। পাকিস্তান কিন্তু হারিস রউফ, নাসিম শাহ আনফিট থাকায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল বোলিং আক্রমণ নিয়েও লড়াই চালিয়েছে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করে। একসময় মেন্ডিস এবং সাদীরার উইকেট ইফতিখার তুলে নিলে ম্যাচে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি ১৪ সেপ্টেম্বরের মাঝ রাত পেরিয়ে যায়। মাঠে উপস্থিত ৩৫ হাজার ক্রিকেট অনুরাগীদের চোখের ভাষা ক্ষনে ক্ষনে বদলে যেতে থাকে। দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় চারিথ আশালংকা।  পাকিস্তানের বোলিং ট্রাম্প শাহীন আফ্রিদি ওর জন্য বরাদ্দ করা শেষ ওভারে দুটি উইকেট নিয়ে ম্যাচে উত্তেজনার বারুদ জ্বালিয়ে দেয়।  সমীকরণ দাড়ায় শেষ ওভারে শ্রীলংকাকে করতে হবে ৮ রান। হাতে দুটি উইকেট। বাবর আজম বল তুলে দেয় এই ম্যাচে অভিষিক্ত জামান খানের হাতে। ছেলেটি কিংবদন্তি মালিঙ্গার মত সিলিংগিং আকশনে বল করে।  খেলাটি ওভারে শেষ বলে গড়ায়।  প্রেসার কুকারের মত চাপে থাকা অবস্থানে বরফ শীতল মনোভাব বজায় রেখে ম্যাচ জয় করে চারিথ আসালংকা। শ্রীলংকা ২ উইকেটে জয়ী হয়ে  ফাইনালে পৌঁছে।

বিশ্ব ভেবেছিলো এবারে হয়তো পাকিস্তান ভারত ফাইনাল খেলবে। কিন্তু প্রকৃতির নির্ধারণ কেউ খন্ডাতে পারে না। বলা যায় টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ধারাবাহিক দলটি যোগ্য হিসাবেই ভারতের মুখোমুখি হবে।

টুর্নামেন্টে পাকিস্তান কিন্তু ধারাবাহিক ছিল না। দুর্বল দুটি দল নেপাল এবং বাংলাদেশকে পাকিস্তান তুলোধুনা করলেও ভারতের সাথে বিপর্যস্ত হয়েছে। ওদের একপেশে বোলিং আক্রমণ ভারতের ব্যাটসম্যানদের কাছে প্রচন্ড মার খেয়েছে। উপরন্তু ওই খেলায় দুই প্রধান বলার হারিস রউফ এবং নাসিম শাহ আনফিট হয়ে পড়ে পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ দুর্বল হয়ে পড়ে। পাকিস্তানের টপ অর্ডার ব্যাটিং সমৰ্থ অনুযায়ী খেলতে পারেনি।  বাবর আজম ছিল নিজের ছায়া মাত্র। কাল পাকিস্তান ৫ জন পরিবর্তীত খেলোয়াড় নিয়ে খেলে। কাল টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ২৫২/৭ করেছিল পাকিস্তান মূলত মোহাম্মদ রিজওয়ান (৮৬*), আব্দুল্লাহ শফিক (৫১) এবং ইফতিখার আহমেদের (৪৭) রানের সুবাদে। বাবর (২৯) ভালো খেলছিল। তরুণ সেন্সেশন দিনুথ ওয়েলাগে ওকে ফ্লাইটে প্রলুব্ধ করে মোক্ষম সময়ে স্টাম্পিং করে বিদায় করে। কাল পাথিরানা ৩/৬৫ এবং কাল খেলা প্রমোদ মাধুসান (২/৫৮) ছিল মূল উইকেট নেয়া বোলার।

বৃষ্টি সংক্ষিপ্ত ম্যাচে শুরুতে কুশল পেরেরার উইকেট হারালেও শ্রীলংকা ব্যাটিংয়ের হাল শক্ত করে ধরে কুশাল মেন্ডিস (৯১) এবং সাদীরা সমারাভিক্রামা (৪৮)। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিলো হেসে খেলেই জয় পাবে শ্রীলংকা। কিন্তু দেয়ালে পিঠ রেখে যুদ্ধ করে পাকিস্তান। চারিথ আসালংকার বীরোচিত ভূমিকার কথা সূচনায় লিখেছি। ম্যাচটি শেষ ওভারের শেষ বলের উত্তেজনায় পৌঁছানোর কৃতিত্ব অবশ্যই পাকিস্তান পেতে পারে। সীমিত সম্পদ নিয়ে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করেই হেরেছে পাকিস্তান।

শুভ কামনা শ্রীলংকা দলের জন্য। ফাইনাল খেলাটিতে তুখোড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আশা করছি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eleven − 7 =