নতুন উচ্চতায় বাংলাদেশ ক্রিকেট

সালেক সুফী

আইস ক্রিম প্রণোদিত ওয়ালটন বাংলাদেশ আফগানিস্তান টেস্ট ম্যাচ রেকর্ড ৫৪৭ রানে জিতে নিয়ে দুই দেশের মধ্যে খেলা আগের টেস্ট ম্যাচ হারের মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে বাংলাদেশ। দুই দলের খেলোয়াড়দের মাঝে মান এবং অভিজ্ঞতায় বিস্তর ব্যাবধান ছিল। অজানা কারণে আফগানিস্তান অভিজ্ঞ মানসম্পন্ন খেলোয়াড়দের বিশ্রামে রেখে দুর্বল দল নিয়ে টেস্ট খেলেছে।

বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভারসাম্যপূর্ণ বোলিং আক্রমণের উপর ভরসা রেখে উইকেটের সম্পূর্ণ চরিত্র বদলে দিয়েছিলো কিউরেটর।  এহেন উইকেটে বাংলাদেশ বোলাররা বিধ্বংসী রূপ নিলেও প্রথম ইনিংসে অভিষিক্ত নিঝাত মাসুদ ছাড়া অন্য আফগান বোলার এলোমেলো বোলিং করেছে।  ফলশ্রুতি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা তুলোধুনা করেছে আফগান বোলিং।

দুই ইনিংসে ৩৮২ এবং ৪২৫/৪ উইকেট স্কোর করে আকাশ ছোয়া টার্গেট ছুড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত ১৪৬ এবং ১২৪ জোড়া শত রান করে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখেছে। কাকতলীয় বিষয় হলো আফগান দল প্রথম ইনিংসে সবাই মিলে শান্তর সমান ১৪৬ রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে করতে পেরেছে ১১৫।  ফলাফল রেকর্ড ব্যাবধান ৫৪৬ রানে পরাজয়।

সবুজ ঘাসের শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পেস, বাউন্স মুভমেন্ট সবই ছিল। টস জয়ী আফগানিস্তান বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। অভিষিক্ত পেসার নিঝাত টেস্ট জীবনের প্রথম বলে জাকির হাসানকে ফিরিয়ে দারুন সূচনা  করেছিল। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট অনভিজ্ঞ আফগান বোলিং উইকেটের মেজাজ অনুযায়ী বোলিং করতে বার্থ হয়।

অবশ্য এই টেস্টে সংহারী মূর্তিতে আবির্ভূত নাজমুল হোসেন শান্ত সবকিছু এলোমেলো করে দেয়।  প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশ ৩৬২/৫ স্কোর করে চালকের আসনে পৌঁছে যায়। এই টেস্টে আফগান দলের যা কিছু অর্জন তা ছিল দ্বিতীয় দিন সকালে।  বাংলাদেশের শেষ পাঁচ উইকেট ৯ রানে তুলে নিয়ে আফগানিস্তান খেলায় ফিরেছিল।  কিন্তু বাংলাদেশ পেস, স্পিন ভারসাম্য আক্রমণ দিয়ে আফগানদের নাকানি চুবানি খাইয়ে ১৪৬ অল আউট করে।  এবাদত, শরিফুল, তাইজুল, মেহেদী মিরাজের মানের বোলিং খেলতে আফগান ব্যাটসম্যানদের আনাড়ি মনে হয়েছে।

হয়তো প্রথম ইনিংসে  শেষ দিকে ব্যাটিং ধস দেখে টিম থিঙ্ক ট্যাংক ফলো অন না প্রয়োগ করে ব্যাটসম্যানদের এই উইকেটে ব্যাটিং অনুশীলন করার সুযোগ করে দেয়।  প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও দর্শনীয় ব্যাটিং করে শান্ত টেস্টে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করে ১২৬ রান করে মোমিনুল হকের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসাবে একই টেস্টে দুই ইনিংসে শত রানের গৌরব অর্জন করে। এই ইনিংসে বেশ কিছু দিন পরে মোমিনুল নিজের মূর্তিতে সক্রিয় হয়ে নিজের ১২তম শত রান করে।

হয়তো দুর্ভাগ্য জনক ভাবে  ৭১ রান করা জাকির হাসান রান আউট না হলে শত রান করতে পারতো।  প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে বার্থ লিটন দাস অপরাজিত ৬৬ রান করে। প্রশ্ন আসতে পারে বাংলাদেশ কেন আরো আগে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে ম্যাচটি আগেই শেষ করেনি। যুক্তি আসছে অনেক। একটি মাত্র টেস্ট।  সুযোগ অবারিত। ভিন্ন মেজাজের উইকেটে ব্যাটসম্যানদের মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

আর ৪২৪/৫ বিশাল স্কোর করে ৬৬২ রানের আকাশ ছোয়া টার্গেট ছুড়ে দিয়ে একবিংশ শতাব্দীর রেকর্ড বাবধান ৫৪৬ রানের জয় তুলে নিয়েছে। তাসকিন,  শরিফুল, এবাদত সংহারী রূপ নিয়ে বোলিং করেছে।  গোটা দল উজ্জীবিত বোলিং করেছে।

সব চেয়ে ভালো লেগেছে শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেটের চরিত্র পাল্টে ফেলানোর সিদ্ধান্ত।  জেগে উঠছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন প্রজন্ম।  যেভাবে ব্যাটিং করেছে শান্ত, জয়, জাকির। যেভাবে বোলিং করেছে তাসকিন, এবাদত,  শরিফুল বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটেও ক্রমাগত জয় আশা করতেই পারে। বিশেষ করে সাকিব, তামিম ছাড়াই এভাবে টেস্ট জয় নিঃসন্দেহে বাংলাদেশকে নিজেদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। এখন বিরতি জুলাই মাসে ওডিআই এবং টি২০ খেলতে আসবে ভিন্ন মাত্রার আফগান দল।  প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। বিজয়ী দলকে প্রাণঢালা অভিনন্দন।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

17 − 4 =