সালেক সুফী: সদ্যসমাপ্ত এন্টিগা টেস্ট পরাজয় নিয়ে বাংলাদেশ ২২ বছরের টেস্ট ক্রিকেট খেলা সময়ে ১৩২ টেস্টে ৯৯ পরাজয় বরণ করলো। জানিনা পরের টেস্ট পরাজিত হয়ে বাংলাদেশ ১০০ম পরাজয় বরণ করে নেবে কি না। কাকতলীয় হলেও সত্যি ২২ বছরেও টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ আদু ভাইয়ের মতো শিশুশ্রেণির ছাত্র। বাংলাদেশ নাকি শিখেই চলেছে। এই ধরনের শিক্ষায় কি ‘শিক্ষা’ পাচ্ছে বাংলাদেশ?
এন্টিগা টেস্টে উইকেটে কিছু ঘাস ছিল। উইকেটে লাটারল মুভমেন্ট হবে জানাই ছিল। এই উইকেটে কেমার রোচের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে ৪৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিলো বাংলাদেশ। এবারেও সেই রোচ ঘাতকের ভূমিকায়। সাকিবের ৫১ রান আলাদা করলে প্রথম ইনিংসের ১০৩ রানে বাকি থাকে ৫২ রান। ৬ জন ফিরলেন শূন্য রানে। তামিম করেছিল ২৯। বাকি ২৩ রান করেছে ৯ জন ব্যাটসম্যান।
একই উইকেটে মাটি কামড়ানো নীতি নিয়ে ব্যাটিং করলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ পাঁচ পাঁচটি ক্যাচ ফেলে দিলো। তবুও বোলারদের কৃতিত্বে ২৬৫ রানে সীমিত করতে পেরেছিলো বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসেও একই অবস্থা বাংলাদেশের ১০৯ রানে নেই ৬ উইকেট। দেয়ালে পিঠ রেখে সংগ্রাম করে সাকিব (৬৩) এবং সোহান (৬৪) জুটির ১২৩ রানে ভর করে চূড়ান্ত বিপর্যয় রোধ হলো। খালেদের (৩/১৪) ঘূর্ণি ঝড়ে কিছু সময়ের জন্য চেপে ধরা গিয়েছিলো স্বাগতিক দলকে।
কি শিক্ষা পেলো বাংলাদেশ? স্থানীয় শিক্ষকদের উপেক্ষা করে বহুমূল্যের বিদেশি প্রশিক্ষক আনা হচ্ছে। এই প্রশিক্ষকদের কাজ মূল্যায়নের দক্ষতা আছে কি বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন কর্মকর্তাদের? কেন সাকিব, মুশফিক, তামিমদের স্থানীয় গুরুদের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে? ভারত, পাকিস্তান স্থানীয় প্রশিক্ষকদের জাতীয় পর্যায়ে ব্যবহার করা হলেও বাংলাদেশ কেন পারছে না বা করছে না?
বলা হয় সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত পেসি, বাউন্সি উইকেটে বা সিমিং কন্ডিশনে খেলতে পারে না বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান। দুই এক বছরের জন্য অজুহাত গ্রহণযোগ্য। কিন্তু ২২ বছর পর এটি কেন চলবে? ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না ? কেন বাংলাদেশে এই ধরনের উইকেটে খেলানোর ব্যবস্থা করা হয় না?
দক্ষিণ আফ্রিকায় ওই দেশের দ্বিতীয় সারির দলের সঙ্গে দুটি টেস্টে শোচনীয় পরাজয়ে দেখা গেলো ধীর, গ্রিপিং, ঘূর্ণি উইকেটে আনাড়ির মতো ধসে গেলো বাংলাদেশ। কেন এই ধরনের উইকেটে নিয়মিত খেলা বাংলাদেশকে এই অজুহাত মানতে হবে?
দেশের মাটিতে দুটি টেস্ট খেললো বাংলাদেশ সমান শক্তির শ্রীলংকা দলের সঙ্গে। দেখা গেলো বাংলাদেশের ব্যাটিং টপলেস, বটমলেস । মুড়ি মুড়কির মতো ভেঙে যাচ্ছে বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেট অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের জন্য সবচেয়ে উপযোগী ফরমেট। স্থানীয় ক্রিকেটে কিছু অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ক্রমাগত পারফরমেন্স করলেও ওদের জন্য জাতীয় দলে খেলার দরজা রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কিছু খেলোয়াড় ক্রমাগত ব্যর্থ হলেও ওদের খেলানো হচ্ছে কাদের স্বার্থ রক্ষায়?
যে দলের ব্যাটসম্যানরা দেশে বা বিদেশে খেলায় পর পর দুই টেস্টে ৬ জন শূন্য রানে আউট হয়, তাদের টেস্ট খেলার যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলা যায়। অধিনায়ক সাকিব বলেছেন, বাংলাদেশ অধিকাংশ ব্যাটসম্যানের স্কিল নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। তাহলে কি শিখাচ্ছেন নামি দামি বিদেশি প্রশিক্ষকরা?
পরিবেশ বলি বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিকল্প না থাকা নির্বাচকদের বিষয়ে। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু কোনোদিন টেস্ট খেলেননি। অপর নির্বাচক হাবিবুল বাসার সুমন নিজেই ভারতের বিদ্রোহী আইসিএল ফ্যাঞ্চাইজ খেলে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। অভিযোগ আছে উনি কিছু খেলোয়াড়ের দলে ফেরার দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেট সহ অধিকাংশ ফরম্যাটে ক্রমাগত তলানিতে দ্রুত ধাবমান বাংলাদেশ। কেন ব্যর্থ নির্বাচকদের বিকল্প খুঁজে পাওয়া যায় না বাংলাদেশে?
দুঃখ হয় বাংলাদেশের সাধারণ ক্রিকেট সমর্থকরা লজ্জিত হলেও লজ্জা হয় না লজ্জাহীন বিসিবির। দল নায়ক সাকিব সুস্পষ্ট বলেছেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ খেলোয়াড়দের টেস্ট ম্যাচ খেলার মতো দক্ষতা নেই। টেস্ট ক্রিকেটে অন্তত দুই বছরের জন্য মাহমুদুল্লাহকে ফিরিয়ে আনা যায় না? ইমরুল কায়েস, এনামুল হক বিজয়, নাইমুল ইসলাম কেন ব্রাত্য হয়ে আছে? কেন অন্তত ২-৩ ভেনুতে দুই তিনটি সবুজ ঘাসের বাউন্সি উইকেট করা যাবে না? কেন কোচিং স্টাফে দেশি কোচদের সম্পৃক্ত করা যাবে না?