নতুন চাকরিতে যোগদানের আগে

এ টি এম মোসলেহ উদ্দিন জাবেদ

নতুন চাকরিতে জয়েন করবার আগে বা ওই প্রতিষ্ঠানে জয়েন করবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত নেবার আগে অনেকেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। আগের জায়গাতে থেকে যাবেন কি না অথবা অফার পাওয়া প্রতিষ্ঠানটিতে জয়েন করা ঠিক হবে কি না এসব নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন।

আপনার সিদ্ধান্তটি নিতে সাহায্য করবে কতগুলো কম্পারেটিভ এনালাইসিস। যা আপনার জন্য সহায়ক হতে পারে।

আপনি কি নিশ্চিত যে আপনার বর্তমান প্রতিষ্ঠানটিকে সত্যিই ছাড়তে আপনি স্থিরচিত্ত কি না অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি ছাড়বার মতো সত্যিই যথেষ্ট কারণ আপনার আছে কি না। আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নেবেন না। একটি জব তখনি ছাড়বেন যখন সেটা ছাড়বার পেছনে আপনার ক্যারিয়ারের স্বার্থ থাকবে। আপনি যদি কোনো গ্রিভেন্সের কারণে নতুন জবে যেতে চান, তবে একবার হলেও নিরপেক্ষভাবে ভেবে নিন, সত্যিই ওই গ্রিভেন্স ক্ষমার অযোগ্য কি না।

নতুন প্রতিষ্ঠানটিতে গেলে আপনার বর্তমান জবটির তুলনায় কোন কোন ফ্যাসিলিটিতে কেমন পরিবর্তন হবে এবং তার কতগুলো আপনার জন্য পজেটিভ বা কত পার্সেন্ট পজিটিভ সেটা ভাবুন। প্রয়োজনে একটি চেকলিস্ট করে নিন।

নতুন চাকরির কি কি ফ্যাসিলিটি ক্রসম্যাচ করবেন দেখুন: বেতন, বোনাস (কতবার ও কত হারে), মোবাইল অ্যালাউন্স, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পদ্ধতি ও হার, প্রমোশনের টাইমলাইন, কর্মঘণ্টা, লাঞ্চ ফ্যাসিলিটি, ট্রান্সপোর্ট ফ্যাসিলিটি, লিখিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ও জব কন্ডিশন, টার্মিনেশন পলিসি, সার্ভিস বেনিফিট, ছুটির সংখ্যা ও দিন, সিপিএফ, মেডিকেল ইন্সুরেন্স, জব ডেসক্রিপশন ইত্যাদি।

যে বসের আন্ডারে কাজ করবেন তিনি কেমন বস, সেটা জানার চেষ্টা করুন। বেতনের অঙ্কে বিশাল রেইজ হলেও বাজে বসের সাথে কাজ করার বিড়ম্বনা ওটাকে জিরোতে পরিণত করতে পারে। কোম্পানির সার্বিক কর্মপরিবেশ ও অফিস কালচার কেমন সেটা বিবেচনায় রাখুন।

কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা এবং গ্রোথ রেট পারলে খোঁজ নিন। নড়বড়ে আর্থিক অবস্থার কোম্পানিতে বেশি টাকার চেয়ে বড় কোম্পানিতে তুলনামূলক কম স্যালারি বেশি ভালো।

যদি একদম পারিবারিক ব্যবসায় কোম্পানি হয় তবে পারলে টপ ম্যানেজমেন্টের প্যাটার্ন সম্পর্কে জেনে নিন। হতে পারে আপনি তাদের সাথে একদমই ম্যাচ করতে না পেরে নতুন দারুন চাকরিও ছাড়তে বাধ্য হতে পারেন।

নতুন জবে আপনার স্যালারি কত পার্সেন্ট বাড়বে সেটা ভেবে নেবেন। ৩০-৪০% হলো অ্যাভারেজ রেইজ রেট। পাশাপাশি স্যালারির সাথে আপনি আরো যেসব ফ্রিঞ্জ বেনিফিট পাচ্ছেন সেগুলোর আর্থিক মূল্যের বিপরীতে ওখানে যা যা পাবেন তার কম্পারেটিভ এনালাইসিস করুন।

নিয়মিত স্যালারি পেমেন্ট হয় কি না জেনে নিন।

কোন পজিশনে বর্তমানে আছেন আর ওখানে কোন পজিশনে যাবেন সেটা ভাবুন। শুধু যে ইকুয়্যাল বা উপরের পজিশনে যাওয়াটাই হতে হবে তা নয়। প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ভ্যালুর উপরে ভিত্তি করে পজিশনে বা র‌্যাংকে আপ-ডাউন নিয়ে ভাবতে পারেন।

নতুন কর্মস্থলে গেলে সবগুলো প্রাপ্য বিষয়ের সাথে বর্তমানের পার্থক্যটা কতটা বেশি সেটা অবশ্যই বিবেচনায় আনবেন। মনে রাখবেন, একটি সেটেলড জবের স্ট্যাবিলিটি কস্ট নামে একটা বিষয় আছে যেটা টাকার অঙ্কে কনভার্ট করলে সেটার মূল্য কম না। নতুন জবে নতুন বসের সাথে নতুন পরিবেশে নতুন চ্যালেঞ্জে মানিয়ে নেবার বিপরীতে বর্তমান জবে ওগুলোতে দারুন কমফোর্টে থাকার বা হাতের তালুর মতো চেনা থাকার প্রাপ্তিটুকুরও মূল্য আছে। তার বিপরীতে আপনি কতটা বেশি পাবেন নতুন স্থানে সেটা ভেবে নেবেন। আর এই সবকিছুই নির্ভর করবে আপনার কম্পারেটিভ চয়েসের ওপর।

এনালিসিস করুন, নিরপেক্ষভাবে লজিক নির্ধারন করুন, আর তারপর যেটি সিদ্ধান্ত নেবেন সেটিতে স্থির হোন। এতটুকু করতে পারেন, আপনার এনালাইসিস নিয়ে একজন ক্যারিয়ার এক্সপার্ট বা সিনিয়র এইচআর প্রোফেশনালের পরামর্শ নিতে পারেন। তবে যাই করবেন, ভেবে করবেন। করে ভাববেন না।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: নিবন্ধ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

ten − five =