নতুন বাংলাদেশ নিয়ে প্রত্যাশা অনেক: পারশা

অপরাজিতা জামান

পারশা মাহজাবীন পূর্ণি সংগীতশিল্পী হিসেবে বেশ পরিচিত। তিন বছর বয়স থেকে সংগীতের সঙ্গে আছেন। বর্তমানে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে সংগীত অঙ্গনে তার সরব বিচরণ। সমসাময়িকদের মতোই সুরে সুরে পথ চলছিলেন এ গায়িকা। তবে জুলাই মাসে এক অন্য পারশাকে দেখা যায়। তৎকালীন সরকার ছাত্র জনতার উপর নির্দ্বিধায় গুলি চালালে গণহত্যার বিরুদ্ধে তিনি কণ্ঠ তোলেন। ‘চলো ভুলে যাই’ শিরোনামের একটি গান ইউকিলেলে বাজিয়ে ছেড়ে দেন ফেসবুকে। মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সে গান। তারপর থেকেই শ্রোতাদের কাছে আলাদাভাবে উচ্চারিত হচ্ছে এই গায়কের নাম।

মেধা শহীদদের নিয়ে আপনার গান সাহস যুগিয়েছে। এ নিয়ে শুনতে চাই…

আমার জায়গা থেকে যতটুকু পেরেছি করেছি। ইচ্ছা ছিল আরও বেশি করার। কিন্তু পারিনি। পরে হয়তো পারব। এটি নিয়ে খুব বেশি বড়াই করতে চাই না। তবে আমি খুশি। কারণ আমার গান সব শ্রেণির মানুষের মনের কথা হয়ে উঠেছিল। যে যার মতো করে গানটির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছেন।

শিক্ষার্থীদের হয়ে গান করায় কোনো ঝামেলা পড়তে হয়েছিল? 

গানটি খুব ভাইরাল হয়েছিল বলেই হয়তো হুমকি-ধামকি আসেনি। এছাড়া প্রথমত আমি মেয়ে। ফলে একটি বিশেষাধিকার আছে। দ্বিতীয়ত, গোটা দেশের মানুষ আমার সঙ্গে ছিলেন। এ কারণে আমার সঙ্গে কিছু করার আগে হয়তো চিন্তা করেছে। গানটির কোনো প্রচার করিনি। অন্যরা যেভাবে সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন সেভাবেও করিনি। সাদামাটাভাবে প্রকাশ করেছিলাম। যা করার দেশের মানুষ করেছেন। আমি দ্বিতীয়বার শেয়ারও দেইনি। আমার কিছু করতেও পারত না। সেই সাহস আমার পরিবার দিয়েছিল। তারা সবসময় আমার ভালো কাজে যেমন সমর্থন করেন এবারও করেছিলেন।

তারপরও বাবা-মায়ের ভেতরে দুশ্চিন্তা কাজ করে…

বাবা-মা চিন্তা করবেনই। অনেক বেশি চিন্তা করছিলেন তারা। তবে তাদের এতটুকু বিশ্বাস ছিল যে আমি যেটা করছি ভালো করছি। আমার পরিবার ভীষণ সাহসী। ছোটবেলা থেকে এ পর্যন্ত বাবাকে কখনও অন্যায়ের সামনে মাথা নত করতে দেখিনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকবার মানুষকে বাঁচাতে দেখেছি তাকে। আমার পরিবারে তিনজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন। দাদি নিজে তার ছেলেমেয়েদের যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। এরকম সাহসী পরিবার দেখেই হয়তো খুব একটা সমস্যা হয়নি।

নতুন বাংলাদেশ নিয়ে প্রত্যাশা কী?

প্রত্যাশা অনেক। বলে শেষ করা যাবে না। রাতারাতি কিছু পাব না এটাও জানি। তবে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে দেশের। এগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এখান থেকেই উঠে দাঁড়িয়ে ভালো কিছু করতে হবে। না হলে আমরা অনেক পিছিয়ে যাব। এমনিতেই পিছিয়ে গেছি। এটা শিল্পাঙ্গনসহ সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

সামাজিক মাধ্যমে প্রশংসিত হচ্ছেন। কেমন লাগছে?

ভালো লাগছে। অনেক গুণী মানুষ আমার গান শুনেছেন, শেয়ার দিয়েছেন, মন্তব্য করেছেন। এতকিছু আশা করে গানটি প্রকাশ করিনি। অধিকাংশ মানুষ মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন গানটি শুনে তারা কেঁদেছেন। মানুষকে কাঁদাতে পারব চিন্তাই করিনি কখনও। এত তাড়াতাড়ি আমার জীবনে এরকম কিছু ঘটবে ভাবিনি। এটা আমার জন্য বড় কিছু।

এবার কাজের প্রসঙ্গে ফেরা যাক…

এরমধ্যে ‘যদি তুমি আমার হতে’ শিরোনামের একটি মৌলিক গান এসেছে আমার। নিজের কথা ও সুরে। সামনে নাটকেও দেখা যাবে আমাকে। সিনেমা থেকেও প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু অভিনয়ের ক্ষেত্রে পথটা বুঝেশুনে চলতে চাই। অভিনয়ের অনেক কিছুই শেখা বাকি। তিন বছর বয়স থেকে গান করি। কিন্তু অভিনয়ের ক্ষেত্রে একেবারেই নতুন। ফেব্রুয়ারি মাসে আমার অভিষেক। আরেকটু শিখে নামতে চাই। গান, মডেলিং, অভিনয় সবক্ষেত্রেই কাজ করতে চাই।

কোন সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব এসেছিল?

‘জংলি’ ছবিটি আমার করার কথা ছিল। কিন্তু দ্বিধায় ছিলাম। ভাবছিলাম, আর একটু শিখে করা উচিত। এ কারণেই এগোইনি। ছবি সংশ্লিষ্টরাও আমার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছেন। সিনেমার ক্ষেত্রে বলব, এটি আমার জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটি অঙ্গন। মানুষ আমাকে কীভাবে নেবে সেই ব্যাপারটাও থাকে। তাই আরেকটু শিখে নামতে চাই। কেননা যাই করব ভালোভাবে করব।

শুনলাম আপনার গান বেহাত হয়ে গিয়েছিল…

হ্যাঁ। গানটিতে আমি কোনো কপিরাইট রাখিনি। সবাই যেন নিজেদের মতো করে ছড়িয়ে দিতে পারে সে কারণে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। সেখানেই সমস্যাটা হয়েছে। কেউ একজন আমার নিজের গানে কপিরাইট ক্লেইম দিয়ে দিয়েছেন।

অন্য একজন কপিরাইট ক্লেইম করলে, কেমন লেগেছে?

এর আগেও কয়েকবার আমার সাথে এরকম হয়েছে। তবে এবার বেশ অবাক হয়েছি। কেননা গানটি সবার জন্য করছি। চাইলে অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনতে পারতাম। কিন্তু সেটা করিনি। কেননা গানটির পেছনে একটি মহৎ উদ্দেশ্য ছিল।

এখন কি ফিরে পেয়েছেন গানটি?

হ্যাঁ এখন সমস্যার সমাধান হয়েছে।

গানটি নতুনভাবে আনছেন শুনলাম…

হ্যাঁ জুলাই বিপ্লবের গানটির স্টুডিও ভার্সন আনছি। ওটা তো শুধুমাত্র একটি বাদ্যযন্ত্র ধরে গেয়েছিলাম। বেশকিছু ভুল ভ্রান্তি ছিল। সে কারণেই গানটির স্টুডিও ভার্সন করতে চাচ্ছি। সেখানে ওই ভুল ভ্রান্তিগুলোর সংশোধনী থাকবে। এরইমধ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি শেষ। শিগগিরই গানটি আসবে।

আপনার গল্পটা জানতে চাচ্ছিলাম…

সংগীতের সঙ্গে আমার সখ্যতা শুরু তিন বছর বয়সে। তারপর থেকেই গান করতাম। তবে বাবা মায়ের ইচ্ছা ছিল গানটা যেন শিখার মতো শিখি। সে কারণেই নিয়মিত হওয়া। তবে এতদূর যে আসা হবে সেরকম কোনো স্বপ্ন ছিল না। এখন অবশ্য উল্টো হয়েছে। গান ছাড়া আমি থাকতেই পারি না।

জুলাই বিপ্লবের গানের পেছনের গল্পটা…

রাত দুইটার সময় গানটি লিখি। খুব দুঃখ থেকে লিখেছিলাম। আমার মনে হয় মাত্র দেড় মিনিটের গানে যা যা বলতে চেয়েছি তার প্রতিটি লাইন মানুষ নিজের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পেরেছিল। তবে যতটা সাড়া পেয়েছি সেটা দেখে মনে হয়েছে আগে যদি জানতাম সবাই এভাবে লুফে নেবে তাহলে আরেকটু ভালো করে আরও একটু বড় করে গানটির লিখতাম।

প্রতিবাদী গান নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ছিল?

প্রতিবাদী গান আগে থেকেই ভালো লাগে আমার। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের গানগুলো শুনতাম। জাগরণের গানের অনেকগুলো সিডি বাবা আমাকে এনে দিয়েছিলেন। গানগুলো নিয়মিত শোনা হতো। তখন থেকেই দেশের গান লেখার ইচ্ছা ছিল। তবে সময় সুযোগ হয়ে ওঠেনি। কিন্তু যখন দেখলাম দেশের এই পরিস্থিতিতে সবাই প্রতিবাদ করছে, কথা বলা শুরু করেছে তখনই গানটি আমার মাথায় এলো।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি নিয়ে? গান নাকি অভিনয়?

অবশ্যই গান নিয়ে। কেননা এটি আমার ভালোবাসা। ছোটবেলা থেকে করছি। তবে অভিনয়ের প্রতি যদি ভালোবাসাটা তৈরি হয় তাহলে সেখানেও নিয়মিত দেখা যাবে। মূলত গান অভিনয় দুটো নিয়েই থাকতে চাই।

প্রতিবাদী গান নিয়ে পরিকল্পনা আছে কী? 

হ্যাঁ আছে। যেহেতু আমার গান মানুষ ভালোবেসেছে। আমার থেকে প্রতিবাদী গান তারা শুনেছে। ওই জায়গা থেকে আমি আশাবাদী। ভবিষ্যতে সব তো কিছু করতে চাই। এছাড়া আমি কবীর সুমন, নচিকেতা চক্রবর্তী, মৌসুমী ভৌমিকের গানগুলো শুনি। ইচ্ছা আছে ওইরকম কিছু করার।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: আলাপচারিতা

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × 2 =