ময়ূরাক্ষী সেন
পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে দেখা যায় কিছু পুরানো বাড়ি। শুধু পুরান ঢাকা কেন যে কোনো এলাকায় গেলেই দেখা যায় এমন বাড়ি। পুরানো বাড়িতে থাকা নিয়ে হীনমন্যতা রয়েছে অনেকেরই। কিন্তু সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা গেলে যে কোনো পুরানো বাড়িকে করে তোলা সম্ভব অনেক বেশি নান্দনিক। এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন পুরানো বাড়িগুলো কিন্তু ইতিহাসের সাক্ষী। পুরান ঢাকার বাড়িগুলো প্রায় কয়েকশো বছর আগের। যেখানে এখনো বসবাস করছে বংশধররা। তাই নিজের বাসস্থানটি যদি হয়ে থাকে পুরানো তাহলে আক্ষেপ না করে বরং নিজের মনের মতো সাজিয়ে নেওয়া উচিত। রঙবেরঙের আজকের আয়োজন কিভাবে আপনার পুরানো বাড়ি করে তুলতে পারেন নান্দনিক।
গাছ
আপনার পুরানো বাড়ির আঙিনা ভরিয়ে দিতে পারেন গাছে। এতে বাড়ি প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর হয়ে উঠবে। মানিপ্লান্ট, তুলসিপাতা, লাকি ব্যাম্বো, ক্যাকটাস, পুদিনা ইত্যাদি গাছ রাখতে পারেন। কারণ এইসব গাছের জন্য খুব বেশি আলো বাতাস কিংবা যত্নের প্রয়োজন হয় না। ঘরের মধ্যেই দিব্যি বেড়ে উঠে। বাড়ির বারান্দা রঙিন করতে বারান্দা জুড়ে রাখতে পারেন বাগান বিলাস। ফুল গাছ রাখতে চাইলে রঙ্গন কিংবা নয়নতারা গাছ রাখা যেতে পারে। এই ফুল গাছগুলোর জন্য খুব বেশি আলোর প্রয়োজন হয় না। শুধু বারান্দা কেন আপনার সিঁড়িঘরও সাজিয়ে তুলতে পারেন বিভিন্ন ধরনের গাছে। আপনার পুরানো বাড়ির ছাদে করতে পারেন সবজি বাগান। মৌসুম বুঝে যে কোনো সবজি চাষ করা যায় ছাদে। গাছ দিয়ে ঘর সাজিয়ে আপনার পুরানো বাড়িকে করে তুলতে পারেন অনেক বেশি সজীব।
বই
বলা হয় বইয়ের চাইতে সুন্দর শোপিস কিংবা আসবাবপত্র আর কিছুই হতে পারে না। পুরানো বাড়িগুলো সাধারণত আয়তনে কিছুটা বড় হয়ে থাকে। তাই ঘরের ফাঁকা অংশে কিংবা একটি ঘরে ছোটখাটো লাইব্রেরি করে ফেলতে পারেন। এতে ঘরের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি আপনার রুচির পরিচয় পাওয়া যাবে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় বেশ সাশ্রয়ী দামে পুরানো বই পাওয়া যায়। সেসব বই এনে আপনার ঘর সাজিয়ে তুলতে পারেন। এতে বাড়ির লোকদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে।
উষ্ণ আলো
পুরানো বাড়িগুলো সাধারণত একটু অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। এর সমাধানও কিন্তু এখন রয়েছে। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন কৃত্রিম আলো। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়াও এখন বিভিন্ন রকমের কৃত্রিম আলো দিয়ে ঘর সাজিয়ে থাকেন অনেকে। বাড়ির অন্ধকার ভাব কাটাতে লাগাতে পারেন এলইডি লাইট। সাদা এলইডি লাইট ছাড়াও হলুদ কিংবা অন্য যে কোনো রঙের আলোর ব্যবস্থা ঘরে রাখতে পারেন। ড্রয়িং রুমের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রাখা যেতে পারে ল্যাম্প। সব সময় তা জ্বালিয়ে না রাখলেও অতিথি আপ্যায়নের সময় ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিলে ঘরের শোভা বৃদ্ধি পায়। পড়ার রুমে কিংবা স্টাডি কর্নারে টেবিল ল্যাম্পের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
দেয়াল সাজিয়ে তুলুন
সৌন্দর্য বাড়াতে ঘরের দেয়াল সাজিয়ে তুলুন। চাইলে পরিবারের লোকদের ছবি ফ্রেম করে বাঁধিয়ে রাখা যেতে পারে। এছাড়া শিল্পীদের চিত্রকর্ম কিংবা বিভিন্ন ধরনের ছবি দেয়ালে টানিয়ে দিতে পারেন। এখন বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ওয়াল পেপার। আপনার ঘরের উপর নির্ভর করে বাজারে গিয়ে পছন্দের প্রিন্টের ওয়াল পেপার কিনে দেয়াল জুড়ে লাগাতে পারেন। এতে খুব সহজে আপনার পুরানো বাড়িটি অনেক বেশি রঙিন হয়ে উঠবে। পুরানো বাড়ির দেয়ালগুলো অনেকটা কালচে হয়ে ওঠে। তাই এর উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য নিয়মিত দেয়ালে রঙ করা জরুরি। গতানুগতিক সাদা রঙ করতে না চাইলে হলুদ কিংবা যে কোনো পছন্দের রঙে দেয়াল সাজিয়ে তুলতে পারেন। এতে আপনার বাড়িটি অনেক বেশি প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
সিলিং
হঠাৎ করে বাড়ির সিলিং সাজানো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আগে অনেকেই সিলিংয়ের কথা চিন্তা করেনি। কিন্তু এখন ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে পারে সিলিং। তাই আপনার পুরানো বাড়ির বিভিন্ন রুমের সিলিংগুলো সাজিয়ে তুলতে পারেন। দেয়ালের মতো সিলিংয়েও কিন্তু লাগিয়ে নিতে পারেন ওয়াল পেপার। পুরানো বাড়িতে কাঠের সিলিং বেশ নান্দনিক লাগে, তাই আপনার আসবাবপত্রের সাথে কিছুটা মিল রেখে সিলিং সাজিয়ে নিতে পারেন। ঘর রঙিন করে তুলতে পেশাদার ডিজাইনারের সাহায্য নিয়ে সিলিংয়ে করতে পারেন হ্যান্ড পেইন্ট। এছাড়া অনেকেই সিলিংয়ে ঝাড়বাতি কিংবা বাঁশের ঝুলন্ত বাতি লাগিয়ে থাকেন। তবে সিলিংয়ে ঝাড়বাতি ও ঝুলন্ত বাতি লাগানোর আগে আপনার ঘরের আয়তনের কথা খেয়াল রাখতে হবে।
আসবাবপত্র
ঘরের সৌন্দর্য অনেকটা নির্ভর করে আপনার বাড়ির আসবাবপত্রের উপর। ঘর ভর্তি আসবাবপত্র থাকলেই হয় না তার মধ্যেও থাকতে হবে নান্দনিকতা। পুরানো বাড়িগুলো কিছুটা বড় হবার কারণে কেউ কেউ অনেক ধরনের আসবাবপত্র রেখে থাকেন। কিন্তু আসবাবপত্র প্রয়োজনের তুলনায় বেশি না রাখাই ভালো, এতে ঘর অনেক বেশি হিজিবিজি লাগে ও ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। তাই আপনার ঘর বুঝে আসবাবপত্র নির্বাচন করুন। চেষ্টা করতে হবে যাতে প্রতিটি আসবারপত্রের সাথে প্রতিটির মিল থাকে। যেমন আপনার ঘরে যদি কাঠের আসবাবপত্র বেশি থাকে তাহলে অন্যগুলোও যেন কাঠের হয় সে চেষ্টা করুন। আবার ইচ্ছা করলে বিভিন্ন থিমে আসবাবপত্র সাজিয়ে রাখতে পারেন। অনেকে এখন সাদা আসবারপত্র ব্যবহার করছে। সাদা আসবাবপত্র আপনার ঘরের আভিজাত্য বাড়িয়ে তোলে।
দেশীয় ঐতিহ্যের ছোঁয়া
পুরানো বাড়ির ডিজাইন এবং গঠন কিছুটা বাঙালিয়ানা ধাঁচের হয়ে থাকে। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় বাড়িটি বাঙালি ঐতিহ্য বহন করছে। তাই আপনার ঘরের ভেতরটাও সাজিয়ে তুলতে পারেন বাঙালি ঐতিহ্যের ছোঁয়ায়। যাতে ঘরে প্রবেশ করার সাথে সাথে আপনার ঘরকেও অনেক বেশি ঐতিহ্যের ভান্ডার মনে হয়। বাড়ির দেয়ালে বড় করে টানিয়ে দিতে পারেন নকশি কাঁথা স্টিচের দেয়াল ছবি। ডাইনিং টেবিলের রানারে রাখতে পারেন জামদানি মোটিফের রানার। বিছানায় বিছিয়ে দিতে পারেন কাঁথা স্টিচের চাদর।
ঘরে বাড়তি জায়গা থাকলে সেখানে বেতের ছোট টেবিল এবং চেয়ার রাখতে পারেন। বারান্দা বড় হলে একটি দোলনা টানিয়ে দেওয়া যেতে পারে। বসার ঘরের এক কোনায় রাখতে পারেন বাঁশের তৈরি ল্যাম্প। বুক সেলফ, আলমারি বা বিভিন্ন জায়গায় রেখে দিতে পারেন মাটির তৈরি শোপিস। ঘরে রাখতে পারেন বেতের তৈরি আয়না কিংবা আসবাবপত্র। আপনার বাড়ির যে কোনো একটি ঘর বেতের খাট চেয়ার টেবিল আলমারি দিয়ে সাজিয়ে তুলতে পারেন। আজকাল দেশীয় ঐতিহ্য অনেকটা হারিয়ে যাচ্ছে। আপনি যদি ঘর দেশীয় ছোঁয়ায় সাজিয়ে তোলেন এতে আমাদের ঐতিহ্য ফুটে উঠবে।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা
আপনার বাড়ি যেমনই হোক বড় কিংবা ছোট, পুরানো কিংবা নতুন; বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা অনেক বেশি জরুরি। আপনার বাড়ির কোনায় ধুলা জমেছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখুন। বাড়ির আসবাবপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করুন। সাদা আসবাবপত্র হলে তাতে খুব সহজে ময়লা জমে যেতে পারে, তাই সেটি নিয়মিত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। অনেকেই দীর্ঘদিন বাড়ির দেয়ালের রঙের কথা চিন্তা করে না, এতে দেয়াল কালচে হয়ে যায় ও বাড়ি আরো বেশি পুরানো মনে হয়। তাই আপনার বাড়িটি পুরানো হলেও তাতে নিয়মিত রঙ করতে হবে। রঙ পুরানো বাড়ির উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ইন্টেরিয়র