আজ বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম তারকা মান্নার মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি লাখো ভক্তকে কাঁদিয়ে ওপারে চলে যান। ভক্তরা ভালোবেসে তাকে উপাধি দিয়েছিল ‘মহানায়ক’। মান্নার আসল নাম ছিল এএসএম আসলাম তালুকদার। তিনি সব মিলিয়ে ২৪৫টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ২০০৬ সালে ‘সেরা অভিনেতা’ হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ‘বীর সৈনিক’র জন্য। এ ছাড়া বাচসাস ও মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারও পান। ১৯৬৪ সালে টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এলেঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন মান্না। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করার পরই ১৯৮৪ সালে তিনি নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে সিনেমায় আসেন।
নব্বইয়ের দশকে অশ্লীল সিনেমা নির্মাণের ধারা শুরু হলে যে কয়জন প্রথমেই এর প্রতিবাদ করেছিলেন, তাদের মধ্যে নায়ক মান্না ছিলেন অন্যতম। যদিও মাত্রাতিরিক্ত অশ্লীল ‘ফায়ার’ ছবিটি ছিল তার। এরপরও রীতিমতো যুদ্ধ করেছেন অশ্লীল সিনেমার বিরুদ্ধে। এসব সিনেমার নির্মাতাদের সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছিলেন।
দাঙ্গা, লুটতরাজ, তেজী, আম্মাজান, আব্বাজান— সিনেমাগুলোয় চমৎকার অভিনয়ের মাধ্যমে জনপ্রিয়তার চূড়া ছুঁয়েছিলেন মান্না। তার অভিনীত ‘আম্মাজান’ সিনেমাটি বাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর একটি। প্রথম অভিনীত সিনেমার নাম ‘তওবা’। কিন্তু প্রথম মুক্তি পায় ‘পাগলি’। ১৯৯১ সালে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘কাসেম মালার প্রেম’ ছবিতে প্রথম একক নায়ক হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন। এর আগে সব ছবিতে মান্না ২য় নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন।
‘কাসেম মালার প্রেম’ সিনেমাটি দর্শকের মাঝে সাড়া ফেলার কারণে তিনি একের পর এক একক সিনেমায় কাজ করার সুযোগ লাভ করেন। কাজী হায়াতের ‘দাঙ্গা’ ও ‘ত্রাস’র সফলতা তাকে একক নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার রাস্তা সহজ করে দেয়। মোস্তফা আনোয়ারের ‘অন্ধ প্রেম’, মনতাজুর রহমান আকবরের ‘প্রেম দিওয়ানা’, ‘ডিস্কো ড্যান্সার’, কাজী হায়াতের ‘দেশদ্রোহী’, আকবরের ‘বাবার আদেশ’ সিনেমাগুলো মান্নার অবস্থান শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করে।
মান্না শুধু নায়কই ছিলেন না, তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ছিল— কৃতাঞ্জলী কথাচিত্র। তার প্রযোজিত অধিকাংশ সিনেমায় ব্যবসাসফল ছিল। সিনেমাগুলো হচ্ছে—লুটতরাজ, লাল বাদশা, আব্বাজান, স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ, দুই বধূ এক স্বামী, মনের সাথে যুদ্ধ, মান্না ভাই ও পিতা মাতার আমানত। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।