ঢাকা, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ (বাসস): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট আজ সকাল ১০টা ১২ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি ইহসানুল করিম বাসসকে এ কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে একাধিক মন্ত্রী, চিফ হুইপ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, পুলিশ মহাপরিদর্শক এবং কূটনৈতিক কোরের প্রধান উপস্থিত ছিলেন।
লন্ডনে হিথ্রো বিমানবন্দরে চার ঘন্টা যাত্রা বিরতির পর ফ্লাইটটির ১৭ সেপ্টেম্বর (নিউ ইয়র্ক সময়) রাত ১০টা ৫০ মিনিটে নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইটের প্রতিটি প্রান্ত ঘুরে দেখেন এবং যাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবদুল মুহিত এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন।
প্রধানমন্ত্রী ১৭ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দফতরের সাধারণ পরিষদ হলে ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের প্রথম দিনের উচ্চ-পর্যায়ের সাধারণ আলোচনায় যোগ দেবেন। তিনি ২২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী ১৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত নৈশভোজেও যোগ দেবেন।
সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), সর্বজনীন স্বাস্থ্য ও অর্থসহ বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় ও সৌজন্যমূলক বৈঠকে অংশ নেবেন।
এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘সাধারণ বিতর্কে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন, অগ্রগতি, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্বাস্থ্য খাতে সাফল্যের পাশাপাশি বিশ্ব-শান্তি, নিরাপত্তা, নিরাপদ অভিবাসন, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু ও ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরবেন।’
বিশ্ব নেতারা ৭৮তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য নিউ ইয়র্কে একত্রিত হবেন। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে-‘আস্থা পুনর্গঠন ও বিশ্ব সংহতির পুনরুদ্ধার: সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও স্থায়িত্ব ত্বরান্বিত করতে ২০৩০ এজেন্ডা এবং এর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ। ’
প্রধানমন্ত্রী ১৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের রকফেলার সেন্টারে ইউএনআইডিও ও ডেলয়েট আয়োজিত ‘খাদ্য ভাবনা-খাদ্য সরবরাহ চেইন উদ্ভাবনে এসডিজিকে ত্বরান্বিত করার সহযোগিতা’ শীর্ষক একটি উচ্চ-পর্যায়ের সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
একই দিনে তিনি ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে ‘এসডিজি সামিট-লিডার্স’ ডায়ালগ ৪ (এসডিজি অর্জনের জন্য সমন্বিত নীতি ও পাবলিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা) শীর্ষক আরেকটি সম্মেলনেও ভাষণ দেবেন।
সন্ধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী নিউ ইয়র্কের লেক্সিংটন ভেন্যুতে জাতিসংঘ মহাসচিবের বৈশ্বিক শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত ও বিশ্ব স্বাস্থ্য অর্থায়নের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দূত গর্ডন ব্রাউন এবং গ্লোবাল বিজনেস কোয়ালিশন ফর এডুকেশনের এক্সিকিউটিভ চেয়ার সারাহ ব্রাউন আয়োজিত জাতিসংঘ ২০২৩ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে দেয়া একটি উচ্চ-পর্যায়ের ব্যক্তিগত নৈশভোজে যোগ দিতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদর দফতরের সিআর-১৬-এ স্পেনের প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় কাউন্সিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সভাপতির ‘টুওয়ার্ডস এ ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল আর্কিটেকচার’ শীর্ষক একটি উচ্চ-পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকেও ভাষণ দেবেন।
একই দিন শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দফতরে সিআর-১১ এ বাংলাদেশ, অ্যান্টিগুয়া এবং বারবুডা, ভুটান, চীন, মালয়েশিয়া, চ্যাথাম হাউস এবং সুচনা ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে চিকিৎসা পরিষেবা ভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি উচ্চ-পর্যায়ের সাইড ইভেন্টেও যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২০ সেপ্টেম্বর কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সাথে ‘টেকসই উন্নয়নে সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য আন্তর্জাতিক গণ অর্থায়ন বৃদ্ধি এবং দক্ষতা নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক উন্নয়ন অর্থায়ন (এফএফডি) বিষয়ে ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে একটি উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনায় প্রধান বক্তা হিসেবে ভাষণ দেবেন।
একই দিনে তিনি মহাসচিবের ক্লাইমেট অ্যামবিশন সামিট, মহামারী প্রতিরোধ, প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক, নারী নেতৃবৃন্দের জাতিসংঘ প্লাটফর্মের বার্ষিক সভা, ক্লাইমেট অ্যামবিশন সংক্রান্ত উচ্চ পর্য়ায়ের জলবায়ু বিষয় ভিত্তিক সম্মেলনের পাশাপাশি ন্যাশনাল জুরিসডিকশনের বাইরের এলাকার সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য আইনের ওপর জাতিসংঘের কনভেনশনে যোগ দেবেন।
তিনি ২১ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের সাইড ইভেন্টের পাশাপাশি ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সৃষ্ট হুমকি মোকাবেলা’ শীর্ষক ব্রেকফাস্ট সামিট এবং ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন।
সফরকালে জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার, জাতিসংঘ মহাসচিবের জেনোসাইড উপদেষ্টা, নবনির্বাচিত ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) মহাপরিচালক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে জাতিসংঘ সদর দফতরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় (নিউ ইয়র্ক সময়) ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে নিউ ইয়র্ক ত্যাগ করবেন। তিনি ২৩ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে অবস্থান করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৯ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে (বিএ-২৯২) রাত ১০.৪৫ টায় (ওয়াশিংটন সময়) লন্ডনের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ডিসি ত্যাগ করবেন এবং ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন।
বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম।
প্রধানমন্ত্রী ৩ অক্টোবর রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে (লন্ডন সময়) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের (বিজি ২০৮) একটি ফ্লাইটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন এবং ৪ অক্টোবর বেলা সাড়ে ১২টায় (বাংলাদেশ সময়) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন।