নিজেদের পাতা ফাঁদে ধরা পড়লো টিম ইন্ডিয়া

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকাকে স্পিন ফাঁদে ফেলে টেস্ট জয় করার দুরভিসন্ধি বুমেরাং হয়েছে ভারতের। ইডেন গার্ডেন্স কলকাতায় অসম বাউন্সের ঘূর্ণি উইকেটে তিন দিনের কম সময়ে ৩০ রানে হেরে বিপর্যস্ত হয়েছে ভারত। ব্যাটসম্যানদের জন্য ঘাতক উইকেটে প্রথম ব্যাটিং করে জাসপ্রিত বুমরা ভেল্কিতে ১৫৯ করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

উইকেট শুরু থেকেই বাটিংয়ের জন্য চ্যালেঞ্জিং। মার্কো জানসেন এবং সাইমন হারমার (পেস-স্পিন) যুগল আক্রমণে কোনঠাসা হয়ে ভারতের প্রথম ইনিংস ১৮৯ রানে শেষ হলে ৩০ রানে এগিয়ে থাকে ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য মাইন ফিল্ডে পরিণত হয়। ৬০ রানে ৬ উইকেট এবং ৯১ রানে ৭ উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকা দেয়ালে পিঠ রেখে লড়াই করে ইনিংস ১৫৩ পর্যন্ত টেনে নেয়।

জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ১২৪। হাতে অফুরন্ত সময়।  কিন্তু উইকেট ঘাতক রূপে পরিণত। এই উইকেটে আবারো জানসেন-হারমার জুটি ভারত ব্যাটসম্যানদের নাকানি চুবানি খাওয়ায়।  মাত্র ৯৩ রানে ৯ উইকেট হারানো ভারত ৩০ রানে হেরে বিশাল সুযোগ হাতছাড়া করে।

দীর্ঘ দিন পর দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট জয় করে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করে। বাংলাদেশে একটি কথা আছে ‘অন্যের জন্য কুয়া খুঁড়লে নিজে পড়ে মরতে হয়’। বিগত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের আঙ্গিনায় নিউজিলান্ডের কাছে ধবল ধোলাই হয়েও ভারতের শিক্ষা হয়নি।

স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হলে শক্তিশালী ভারতকে হারানো হয়তো সহজ হতো না। দক্ষিণ আফ্রিকার কৃতিত্ব পূর্ণ জয়কে আদৌ খাটো করবো না। তবে এহেন উইকেটে ভাটটিং করার ভারতের একাদশ সঠিক ছিল না একথা ভারতের ক্রিকেট বিশ্লেষকরা হয়তো একমত পোষণ করবেন।

উইকেট কেমন ছিল বোঝা যাবে কিছু পরিসংখ্যানে। উভয় দলের দুই ইনিংসে একমাত্র অর্ধশত এসেছে দ্বিতীয় ইনিংসে  প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অপরাজিত ৫৫ রানে। ভারতের প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল কে এল রাহুলের ৩৯ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে আহত থাকায় শুভমন গিল ব্যাটিং করেনি। ৯৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩১ রান করে ওয়াশিংটন সুন্দর।

টেস্ট ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপের পূর্ববর্তী রাউন্ডে ভারতের খেলার আগে শ্রীলংকায় একই ধরনের উইকেটে খেলে নিউজিল্যান্ড ধাতস্ত হয়ে এসেছিলো এবারে দক্ষিণ আফ্রিকা পাকিস্তানে সিরিজ খেলে পরিবেশ পরিস্থিতি এবং উইকেটে মানিয়ে নিয়েছে। দুই টেস্টের সিরিজে প্রথম টেস্টে পা পিছলে ভারত নিজেদের পরিস্থিতি জটিল করলো। জানিনা দ্বিতীয় টেস্টে ভারত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা।

আমি দুই ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার কমিটমেন্ট এবং জয়ের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টাকে সম্মান জানাবো। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা উইকেটের সুবিধা অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছে। কিছু ক্যাচ ছিল অসামান্য দক্ষতার।  যোগ্য দল হিসাবেই জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস ১৫৯ (এইডেন মারকরাম ৩১, উইলিয়াম মুল্ডার ২৪, টনি ডি জর্জি ২৪। জাসপ্রিত বুমরা ৫/২৭, মোহাম্মদ সিরাজ ২/৪৭,কুলদীপ যাদব ২/৩৬)

দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংস ১৫৩ (টেম্বা বাভুমা ৫৫*, করবিন বচ ২৫। রবীন্দ্র জাদেজা ৪/৫০)

ভারত প্রথম ইনিংস ১৮৯ অল আউট (কে এল রাহুল ৩৯, ওয়াশিংটন সুন্দর ২৯, ঋষভ প্যান্ট ২৭, রবীন্দ্র জাদেজা ২৭। সাইমন হারমার  ৪/৩০, মার্কো জনসান ৩/৩৫)

ভারত দ্বিতীয় ইনিংস ৯৩ অল আউট (ওয়াশিংটন সুন্দর ৩১, আক্সার প্যাটেল ২৬। সাইমন হারমার ৪/২১, মার্কো জেনসেন ২/১৫)

দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০ রানে জয়ী

ম্যান অফ টি ম্যাচ: সাইমন হারমার

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eight − four =