অমিতাভ রেজা চৌধুরী বাংলাদেশী বিজ্ঞাপন নির্মাতা, এবং টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র পরিচালক। তিনি প্রায় হাজার খানেক টেলিভিশন বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেছেন। এছাড়া তিনি অসংখ্য টিভি নাটকও নির্মাণ করেন। আয়নাবাজি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন, যার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি একটি ফোন করা যাবে, প্লিজ… (২০০৮) ও সারফেস (২০১৪) টিভি নাটকের জন্য দুইবার শ্রেষ্ঠ নাট্য নির্দেশক বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেছেন।
অমিতাভ রেজার পৈতৃক বাড়ি কিশোরগঞ্জে। তিনি ১৯৭৬ সালের ১লা অক্টোবর বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তার নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বিএএফ শাহীন কলেজ ঢাকা থেকে তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করেন।[৩] তিনি ছোটবেলা থেকেই প্রচুর চলচ্চিত্র দেখতেন এবং বড় হয়ে চিত্র পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু পরিবারে চাপে তিনি পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ভারতের ফার্গুসন কলেজে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। চলচ্চিত্রের প্রতি প্রচন্ড আগ্রহের কারণে তিনি অর্থনীতির পাঠ চুকিয়ে দেশে ফিরে আসেন।
অমিতাভ রেজা বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘হাওয়া ঘর’ নাটক নির্মাণের মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। একই বছর তিনি একুশে টিভির অপেক্ষায় বৃষ্টি আরেকটি গোল্ডফিশের অপমৃত্যু নির্মাণ করেন। এরপর তিনি গ্রামীনফোন, বাংলালিংক, সিটিসেল, তোশিবা, ল্যাবএইড, অ্যাপোলো হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য বিজ্ঞাপনচিত্র এবং টেলিভিশন নাটক নির্মাণ করেছেন। তার তৈরিকৃত গ্রামীনফোনের একুশে ফেব্রুয়ারি, গ্রামীনফোন ভাষা আন্দোলন মুম্বই থেকে সম্মানসূচক পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া বাংলালিংকের ঐ দিন কি আর আছে গ্লোবাল মোবাইল পুরস্কার-২০০৭-এর মনোনয়ন লাভ করে।
তিনি ২০০৮ সালের একটি ফোন করা যাবে, প্লিজ… টিভি নাটকের জন্য সেরা নাট্য নির্দেশক বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেন।[৫] পরের বছর ইজ ইকুয়াল টু নাটকের জন্য সেরা নাট্য নির্দেশক বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। ২০১৪ সালের সারফেস টিভি নাটকের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নাট্য নির্দেশক বিভাগে তার দ্বিতীয় মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন। এই বছর বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের প্রযোজনায় অমিতাভ ল্যান্ড অব স্টোরিজ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এতে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ও দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য চিত্রিত করা হয়। প্রামাণ্যচিত্রটি জাগরেব পর্যটন চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার লাভ করে।
২০১৬ সালে তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র আয়নাবাজি মুক্তি পায়।[৮] চঞ্চল চৌধুরী ও মাসুমা রহমান নাবিলা অভিনীত চলচ্চিত্রটি সে বছর রেকর্ডসংখ্যক ব্যবসা করে। চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয় এবং অমিতাভ শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও সেরা চলচ্চিত্র পরিচালক বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার অর্জন করেন।
২০১৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে তিনি টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম ডিরেকশন কোর্সের ক্লাস নেন। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে শুটিং টিভি নাটকের জন্য সেরা নাট্য নির্দেশক বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এরপর তিনি ঢাকা মেট্রো নামের একটি ওয়েব নির্মাণ করেন। জাজ মাল্টিমিডিয়ার চলচ্চিত্র “মাসুদ রানা”য় ক্রিয়েটিভ প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।