আফরোজা আখতার পারভীন: প্রফেসর ড. ইজাজ হোসেন মনে করছেন, পরিবর্তিত বিশ্বপ্রেক্ষাপটে নেটজিরো অর্জনের বিষয় ৫ বছর পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে। তবে আমেরিকা সহ পশ্চিমা দেশগুলো যুদ্ধের জন্য বিপুল বিনিয়োগ করছে। আন্তরিক হলে তাদের পক্ষে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার যোগান দেওয়া বড় কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু এটার জন্য দেশগুলোর নেতাদের মনোভাব বদলানোটা খুব জরুরি। বিসিপিসিএল-ইপি ক্লাইমেট টকস-এর আলোচনায় তিনি উপরের কথাগুলো বলেছেন।
তিনি মনে করেন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ক্লাইমেট নেগোশিয়েশন বড় বাধার মুখে পড়বে। ইউরোপ ছিল গ্রিন ট্রানজিশনের মূল উদ্যোক্তা। কিন্তু এখন যুদ্ধের কারণে তাদের ফসিল ফুয়েলের দিকে ঝুঁকতে হয়েছে। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো পড়েছে প্রকৃত বিপদে। অন্য সকল খাতের বাড়তি ব্যয় মিটিয়ে তাদের পক্ষে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যথাযথ বিনিয়োগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ফলে নেটজিরো বিশ্ব অর্জন অন্ততপক্ষে ৫ বছর পিছিয়ে যেতে পারে। এখন দেখার বিষয় যুদ্ধ কতদিন চলে এবং জ্বালানি সংকট কিভাবে মোকাবেলা করা যায়। প্রকৃতপক্ষে কপ২৭-এ নেগোশিয়েশন অনেক কঠিন হবে। তবে আগের প্রতিশ্রুতি ঠিক রেখে সাময়িক ভাবে কিছুটা আপস করে নেগোশিয়েন প্রক্রিয়া চালু রাখা উচিত। বিসিপিসিএল-ইপি ক্লাইমেট টকস-এ এনার্জি এন্ড পাওয়ার সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেনের অতিথি হয়ে বুয়েটের সাবেক ডিন পরিবেশ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. ইজাজ হোসেন এসব কথা বলেন।
ইজাজ হোসেন বলেন, যুদ্ধে ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য ইউরোপ-আমেরিকা যেখানে ৪-৫শ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিচ্ছে সেখানে জলবায়ু তহবিলে ১শ বিলিয়ন অর্থ যোগান দেওয়া তেমন কোনো সমস্যা না। আসলে বিষয়টি দৃষ্টিভঙ্গির।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, ২০৫০ সালে নেট জিরো হয়তো বাস্তবায়ন হবে না। এখনো হাতে ৩০ বছর সময় আছে। এ সময়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে সময়কাল ধরে রাখতে খুব একটা সমস্যা হবে না। এছাড়া বর্তমান সংকট কাটাতে ইউরোপ-আমেরিকা গ্যাস ব্যবহার বাড়াচ্ছে। রাশিয়ার গ্যাস তুরস্ক বা অন্য কোনো মাধ্যমে বাজারে চলে আসবে। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৫০ ভাগ এলএনজি বাজারে চলে আসতে পারে। তখন দামও কমে আসবে। আর গ্যাসকে ক্লিন এনার্জি বলা হচ্ছে। গ্যাস এবং রিনিয়বল এনার্জির ব্যবহার বাড়লে নেট জিরোতে পৌঁছান সহজ হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী ৫ বছরে সুলভ মূল্যে বাংলাদেশের এলএনজি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এরপর হয়তো পাওয়া যাবে। তখন বর্তমানে তৈরি থাকা এলএনজি ভিত্তিক শিল্প চালান যাবে। কিন্তু সংকট মোকাবেলায় কয়লা ভিত্তিক উৎপাদন বাড়াতে হবে। কিন্তু জলবায়ু দূষণের দিকেও দেখতে হবে। তাই কয়লা বিদ্যুৎ খুব বেশি বাড়ান না-ও যেতে পারে। এখন সংকট মোকাবেলায় এলএনজি না পাওয়া গেলে আমাদের কয়লা ব্যবহার করতেই হবে। ভারত-চীন যেহেতু ২০৬০-৭০ সাল পর্যন্ত কয়লা ব্যবহার করছে আমরাও সে সময় পর্যন্ত কয়লা ব্যবহার করতেই পারি। এ নিয়ে দুর্ভাবনার কিছু নেই।
তার মতে, বর্তমানে রিনিয়বল এনার্জি একটা বিপ্লবের মধ্যে আছে। গত ১০ বছরে এ খাতে উপকরণের মূল্য কমে গেছে ব্যাপক ভাবে। তবে দেশে সোলার এনার্জি ব্যবহার করা যাচ্ছে শুধু দিনে। রাতে ব্যবহারের জন্য স্টোরেজ ব্যবস্থা করতে হবে। ফসিল ফুয়েলের সঙ্গে স্টোরেজ ক্যাপাসিটি সহ সোলার এনার্জি সমাধান হতে পারে। কিন্তু তাতে দাম বেড়ে যাবে। এক্ষেত্রে নতুন টেকনলজি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া নিউক্লিয়ার যেহেতু কার্বন দূষণমুক্ত সেহেতু আরও নিউক্লিয়ার এনার্জি উৎপাদনে যাওয়া যেতে পারে।
ক্লাইমেট তহবিল থেকে অর্থ পেতে ফোকাল পয়েন্টগুলোর সমন্বয় খুব জরুরি বলেও জানান তিনি। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রাইভেট ও পাবলিক সকল খাতকে নিয়ে এক সাথে কাজ করতে হবে। কিন্তু এখানে সমন্বয়হীনতা প্রকট। আবার এনডিসিতে কার্বন দূষণ আরো ১৪ শতাংশ কমানোর কথা বলা হয়েছে বৈশ্বিক সহায়তা পাওয়া সাপেক্ষে। কিন্তু এটা গ্রহণের জন্য আমাদের প্রস্তুতি কতটা আছে তা নিয়ে আমার সংশয় আছে।
সোলারের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে বৈশ্বিক সহায়তা না পেলে নবায়নযোগ্য খাতে বড় ধরনের উন্নয়ন আমাদের পক্ষে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং হবে। ফলে আমার মনে হচ্ছে বাংলাদেশকে তার অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে আরো বেশি সময় ফসিল ফুয়েল নির্ভর থাকতে হবে।