নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখলো আফগানিস্তান

লক্ষৌ, ৩ নভেম্বর ২০২৩ (বাসস) : নিজেদের সপ্তম ম্যাচে আজ নেদারল্যান্ডসকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ওয়ানডে বিশ^কাপের সেমিফাইনালের আশা  বেশ ভালোভাবেই বাঁচিয়ে রেখেছে  আফগানিস্তান।

হ্যাট্টিক জয়ে ৭ ম্যাচের ৪টিতে জিতে ও ৩টিতে হেরে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চমস্থানে উঠলো আফগানরা। ৮ পয়েন্ট করে আছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেরও। রান রেটে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া তৃতীয়স্থানে এবং চতুর্থস্থানে আছে নিউজিল্যান্ড। এই হারে ৭ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের অষ্টমস্থানে আছে নেদারল্যান্ডস। এতে সেমির আশা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে ডাচদের।

প্রথমে ব্যাট করে ৪৬ দশমিক ৩ ওভারে ১৭৯ রানে অলআউট হয় নেদারল্যান্ডস। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেন সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট। জবাবে অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদির অপরাজিত ৫৬ ও রহমত শাহর ৫২ রানের কল্যাণে ম্যাচ জিতে নেয় আফগানিস্তান। ১১১ বল বাকী রেখে ম্যাচ জয়ে রান রেটটাও বেশ বাড়িয়ে নিয়েছে আফগানরা।

লক্ষেèৗতে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় নেদারল্যান্ডস। ব্যাট হাতে প্রথমে ওভারেই উইকেট হারায় ডাচরা। স্পিনার মুজিব উর রহমানের বলে আউট হন ১ রান করা ওয়েসলি বারেসি। বারেসিকে শিকার করে আফগানিস্তানের চতুর্থ বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ১শ উইকেট পূর্ণ করেন মুজিব।

শুরুর ধাক্কা দ্বিতীয় উইকেটে সামাল দেন ম্যাক্স ও’দাউদ ও কলিন অ্যাকারম্যান। আক্রমনাত্মক ব্যাটিংয়ে ৬৩ বলে ৬৯ রান তুলে আফগানিস্তানকে চাপে রাখেন তারা।

তবে ১২তম ওভারে রান আউটের ফাঁদে পড়েন ও’দাউদ। ৯টি চারে ৪০ বলে ৪২ রান করেন তিনি।

দলীয় ৭৩ রানে চার নম্বরে নামা সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখটকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন অ্যাকারম্যান। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। রান আউটের শিকার হয়ে ৪টি চারে ২৯ রান নিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন অ্যাকারম্যান।

অ্যাকারম্যান ফেরার পরের ডেলিভারিতে রান আউট হন নতুন ব্যাটার ও অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। এরপর বাস ডি লিডেকে ৩ রানে শিকার করেন আফগান স্পিনার মোহাম্মদ নবী। এতে ২১তম ওভারে ৯৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে নেদারল্যান্ডস।

লিডের আউটের পর দলীয় ১শতে পৌঁছালেও দ্রুতই আরও ২ উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস। সাকিব জুলফিকারকে ৩ রানে নূর আহমেদ ও লোগান ফন বিককে ২ রানে বিদায় করেন নবি। তবে  এক প্রান্ত আগলে ৭৪ বলে ওয়ানডেতে ও বিশ^কাপে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি করেন এঙ্গেলব্রেখট।

অর্ধশতকের পর রান আউটের ফাঁদে পড়েন এঙ্গেলব্রেখটও। ৬টি চারে ৮৬ বলে ৫৮ রান করেন তিনি। দলীয় ১৫২ রানে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে এঙ্গেলব্রেখট ফেরার পর টেল এন্ডারদের দৃঢ়তায় ৪৬ দশমিক ৩ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে  ১৭৯ রানের সম্মানজনক  স্কোর গড়ে নেদারল্যান্ডস। নীচের দিকে রোলফ ফন ডার মারু ১১, আরিয়ান দত্ত অপরাজিত ১০ রান করেন। আফগানিস্তানের নবী ৩টি, নূর ২টি ও মুজিব ১টি উইকেট নেন। এই ইনিংসে নেদারল্যান্ডসের চার ব্যাটার রান আউটের শিকার হন। এবারের বিশ^কাপে ডাচদের সর্বোচ্চ আট ব্যাটার  রান আউট হয়েছেন।

১৮০ রানের টার্গেটে বড় ইনিংস খেলতে পারেনি আফগানিস্তানের দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। ২৭ রানের সূচনার পর দলীয় ৫৫ রানের মধ্যে বিদায় নেন দ’ুজনেই। গুরবাজকে ১০ রানে পেসার বিক এবং ইব্রাহিমকে ২০ রানে শিকার করেন স্পিনার মারু।

১১তম ওভারের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারনো আফগানিস্তানকে লড়াইয়ে রাখেন রহমত শাহ ও অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদি। ১৯তম ওভারে দলের রান তিন অংকে নেন তারা। পরের ওভারে ওয়ানডেতে ২৬তম ও এবারের বিশ^কাপে টানা তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৪৭ বল খেলা রহমত। এই ইনিংসের মাধ্যমে আফগানদের পক্ষে বিশ^কাপে টানা তিন হাফ-সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়লেন তিনি।

হাফ-সেঞ্চুরির পর রহমতকে থামান নেদারল্যান্ডস লেগ স্পিনার সাকিব জুলফিকার। ৫টি চারে ৫৪ বলে ৫২ রান করেন রহমত। এই ইনিংস খেলার পথে বিশ^কাপ মঞ্চে প্রথম আফগান হিসেবে ৫শ রান পূর্ণ করেছেন রহমত। শাহিদি-রহমত ৭৭ বলে ৭৪ রান যোগ করেন।

দলীয় ১২৯ রানে রহমত ফেরার পর ক্রিজে শাহিদির সঙ্গী হন আজমতুল্লাহ ওমরজাই। চতুর্থ উইকেটে ওমারজাইকে নিয়ে ৫৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫২ রান যোগ করে ৩১ দশমিক ৩ ওভারে আফগানিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন শাহিদি।

ওয়ানডেতে ১৯তম ও এবারের বিশ^কাপে তৃতীয় অর্ধশতকের ইনিংসে ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন শাহিদি। ৬৪ বল খেলে ৬টি চার মারেন তিনি। আফগানদের পক্ষে বিশ^কাপে সর্বোচ্চ ৫টি হাফ-সেঞ্চুরির মালিক এখন শাহিদি। ৩টি চারে ২৮ বলে অপরাজিত ৩১ রান করেন ওমরজাই। নেদারল্যান্ডসের বিক-মারু ও জুলফিকার ১টি করে উইকেট নেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

নেদারল্যান্ডস : ১৭৯/১০, ৪৬.৩ ওভার (এঙ্গেলব্রেখট ৫৮, ও’দাউদ ৪২, নবী ৩/২৮)।

আফগানিস্তান : ১৮১/৩, ৩১.৩ ওভার (শাহিদি ৫৬*, রহমত ৫২, মারু ১/২৭)।

ফল : আফগানিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 + eleven =