নেপালে জেনজিদের বিক্ষোভে অন্তত ১৩ জন নিহত, কারফিউ জারি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে তরুণদের বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনী প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার পর অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে। নেপালের এই বিক্ষোভ জেনজিদের আন্দোলন বলে পরিচিতি পেয়েছে। খবর বিবিসি।

সোমবার (৮ আগস্ট)পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঠমাণ্ডুর বিভিন্ন স্থানে কারফিউ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী।

বিক্ষোভকারীরা নিউ বানেশ্বরের ফেডারেল পার্লামেন্ট কমপ্লেক্সেও হামলা চালিয়েছে। এ সময় সেখানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবরও পাওয়া গেছে। বিকেল সোয়া চারটা পর্যন্ত ওই এলাকায় পরিস্থিতি অশান্ত রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে এবং নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করলে তাদের ওপর বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়েছে নিরাপত্তা কর্মীরা।

কাঠমান্ডু থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মের ওপর থেকে সরকারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং দেশটির দুর্নীতির সংস্কৃতির অবসানের দাবিতে রাজধানী কাঠমান্ডুতে হাজার হাজার তরুণ সোমবার বিক্ষোভ করেছে।

সরকার ২৬টি অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্ম ব্লক করার পর শুক্রবার থেকে ফেসবুক, ইউটিউব ও এক্সসহ বেশ কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ব্যবহার করা যাচ্ছে না। যার ফলে নেপালের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা ক্ষুব্ধ ও বিভ্রান্ত হয়েছেন।

ইনস্টাগ্রামের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নেপালে লাখ লাখ ব্যবহারকারী রয়েছেন—যারা বিনোদন, সংবাদ ও ব্যবসার জন্য এই মাধ্যমগুলোর ওপর নির্ভর করে থাকে।

জাতীয় পতাকা উড়িয়ে, জেনারেশন জেড বিক্ষোভকারীরা জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু করে এবং তারপরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।

২৪ বছর বয়সী ছাত্রী যুজন রাজভান্ডারী বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। কিন্তু এটাই একমাত্র কারণ নয়, যে আমরা এখানে জড়ো হয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেওয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি।’

২০ বছর বয়সী আরেক ছাত্রী ইক্ষমা তুমরোক জানান, তিনি সরকারের ‘কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। তিনি এএফপি’কে বলেন,  ‘আমরা পরিবর্তন দেখতে চাই। অন্যরা এটা সহ্য করেছে, কিন্তু আমাদের প্রজন্মের সঙ্গেই এই ‘কতৃত্ববাদী মনোভাবের’ অবসান ঘটাতে হবে।’

নিষেধাজ্ঞার পর থেকে, সাধারণ নেপালিদের সংগ্রামের সঙ্গে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসবহুল জিনিসপত্র ও ব্যয়বহুল ছুটি কাটানোর তুলনামূলক ভিডিও টিকটকে ভাইরাল হয়েছে, যা এখনও চলছে। প্রতিবাদকারী ভূমিকা ভারতী বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিদেশে আন্দোলন হয়েছে এবং তারা (সরকার) ভয় পাচ্ছে যে, এখানেও এমনটা ঘটতে পারে’।

গত মাসে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয়, সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোকে সাত দিনের মধ্যে নেপালে নিবন্ধন করতে হবে, যোগাযোগের জন্য প্রতিনিধি রাখতে হবে এবং অভিযোগ ও নিয়ম মানা বিষয়ক কর্মকর্তাও নিয়োগ দিতে হবে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রোববার এক বিবৃতিতে সরকার বলেছে, তারা চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করে এবং ‘তাদের সুরক্ষা ও নিরবচ্ছিন্ন ব্যবহারের জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করতে’ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

নেপাল অতীতে জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে অ্যাক্সেস সীমাবদ্ধ করেছে। অনলাইন জালিয়াতি ও অর্থ পাচার বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে সরকার জুলাই মাসে টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপটিতে অ্যাক্সেস বা ব্যবহার বন্ধ করে দেয়।

প্ল্যাটফর্মটি নেপালি নিয়ম মেনে চলতে সম্মত হওয়ার পর, গত বছরের আগস্টে টিকটকের ওপর থেকে নয় মাসের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 − 2 =