টলিউডে যে কজন অভিনেতাকে সমীহ করা হয় তাদের একজন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। সম্মান ও ভালোবাসা প্রদর্শন করে মি. ইন্ডাস্ট্রি ডাকা হয় প্রভাবশালী এই অভিনেতাকে। তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সফলতা অনেক। এই সাফল্যে সবচেয়ে বেশি সঙ্গ দিয়েছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিনেত্রীর সঙ্গে জুটি বাঁধলেও বুম্বাদা বেশি পর্দা ভাগ করেছেন ঋতুপর্ণার সঙ্গে। ৪৯টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তারা। এবার এ জুটির সিনেমাটি পরিচালনা করছেন নির্মাতা কৌশিক গাঙ্গুলী। তবে ফেরার গল্পটি শুনিয়েছেন বুম্বা দা নিজেই।
দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার আগমনের খুশিতে মেতে উঠেছিল গোটা পশ্চিমবঙ্গ। এই সময়টাতে একাধিক পূজামণ্ডপ উদ্বোধনের অনুরোধ রাখতে হয় টলিপাড়ার অভিনেতা প্রখ্যাত প্রসেনজিতকে। তবে শুধু ফিতা কাটলেই হয় না। অভিনেতার মুখ থেকে কিছু শুনতেও চান সকলে। এমনই পরিস্থিতিতে ঋতুপর্ণার সঙ্গে রিলে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। টলি সুপারস্টারের মুখেই শোনা যাক সে খবর। তার ভাষায়, ‘আমি আর ঋতুপর্ণা ৫০তম সিনেমায় জুটি বাঁধছি। এখনও সবার কাছে এই খবর পৌঁছায়নি। আমার মনে হয়, ভারতবর্ষ বা গোটা পৃথিবীতে কোনো নায়ক-নায়িকা একসঙ্গে ৫০টা সিনেমায় অভিনয় করেননি। আপনাদের ভালোবাসা আর আশীর্বাদের জন্যই এই পথচলাটা সফল হয়েছে।’
তবে খবরটি সুখের হলেও পর্দায় খুব একটা সুখী দেখা যাবে না প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণাকে। এমনটা বোঝা গেছে কৌশিক গাঙ্গুলীর কথায়। তিনি স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ‘এটা নিশ্চিত যে কোনো সুখী দাম্পত্যের কাহিনি দেখা যাবে না সিনেমায়। তবে শেষটা দেখে দর্শক খুশি হবেন, এই আশ্বাসটুকু দিতে পারি।’
সিনে দুনিয়ায় ঋতু-বুম্বার যৌথ চলার শুরুটা হয়েছিল এক সংকটকালে। পশ্চিমবঙ্গ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে মন্দা চলছিল। ওই মুহূর্তে ‘নাগপঞ্চমী’ সিনেমার মাধ্যমে একসঙ্গে কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করতে পর্দায় আবির্ভূত হয়েছিলেন তারা। এরপরের গল্প সবার জানা। এই জুটি শুধুই মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। পর্দায় রসায়ন দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন বাস্তবেও কিছু একটা আছে এ জুটির মধ্যে। এ নিয়ে নিন্দুকের উৎপাত ছিল দেখার মতো। তবে শেষ পর্যন্ত সেরকম কোনো আলামত উপস্থাপন করতে পারেননি তারা। এদিকে সিনেমায় নিয়মিত ঋতু-বুম্বা।
তবে বদলে গেছে দৃশ্যচিত্র। দুজনকে একসঙ্গে দেখা যায় না। বহুদিন চলেছে এরকম। এক যুগের মতো পর্দায় রোমাঞ্চ থেকে বিরত ছিলেন তারা। এই বিরতি ভেঙেছিলেন ২০১৬ সালে। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায় পরিচালিত ‘প্রাক্তন’ সিনেমায়। ছবিটিতে শেষ পর্যন্ত মিল হয়নি তাদের। পরবর্তীতেও আর পর্দা ভাগ করতে দেখা যায়নি একসঙ্গে। এবার তাদের এক করতে যাচ্ছেন কৌশিক গাঙ্গুলী। সুরিন্দর ফিল্মসের ব্যানারে নাম চূড়ান্ত না হওয়া সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় লক্ষ্মীপূজার পর।
বিষণ্ন জয়া
জয়ার কাজই যেন জয় করা। দক্ষতা দিয়ে সীমানার কাঁটাতার ভেঙে ঢালিউড টলিউড বলিউডে বিচরণ যেন সে কথাই বলে। সাফল্যও আসছে মোটা দাগে। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দশম অবতার’ ছবির দিকে তাকালেই বোঝা যায়। থিয়েটারে ভালো দর্শক টানছে। ওই জায়গা থেকে তাকে অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস বলা যেতে পারে। বিষণ্নতা শব্দটি একেবারেই যায় না তার সঙ্গে। তবুও বিষণ্নতা তাকে গ্রাস করে।
কিছুদিন আগে ছুরিকাঘাতে সস্ত্রীক খুন হন প্রখ্যাত ইরানি চলচ্চিত্র নির্মাতা দারিউশ মেহেরজুই। বিষয়টি সিনে দুনিয়ার জন্য বেদনাদায়ক। দারিউশ ছিলেন পৃথিবীর গুণী নির্মাতাদের একজন। স্বাভাবিকভাবেই তার হত্যাকাণ্ডে শোকাতুর করেছিল বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের। জয়াও বিষণ্নতায় ডুবেছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন তিনি। দারিউশের মৃত্যু নিয়ে লিখেছিলেন, পৃথিবীজুড়ে নানা খারাপ খবর। মনটা খুবই খারাপ হয়ে থাকে। কিন্তু এরমধ্যেও একটা খবর শুনে একদম শিউরে উঠলাম। কে বা কারা ইরানের মশহুর পরিচালক দারিউস মেহরজুইকে ছুরি দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। তাকে একা নয়, একইভাবে হত্যা করেছে তাঁর স্ত্রীকেও।
গুণী নির্মাতা দারিউশকে হত্যার কারণ খুঁজে পান না জয়া। নিষ্ঠুর আততায়ীকে নিয়ে লিখেছেন, এত অপূর্ব সব সিনেমা বানিয়ে ইরানকে যিনি পৃথিবীর সামনে গর্বের সঙ্গে তুলে ধরলেন, কে তাকে এভাবে হত্যা করতে পারল? এমন একজন মানুষেরও কি এমন নিষ্ঠুর শত্রু থাকতে পারে? মৃত্যুর সময়ও নিশ্চয় দারিউস মেহরজুই অবাক হয়ে সে কথাই ভাবছিলেন! যেই তাকে হত্যা করুক, আমাদের বুকের গভীরে তার মৃত্যু নেই।
আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতি সংরক্ষণ
রূপালি গিটার ফেলে আইয়ুব বাচ্চু চলে গেছেন পাঁচ বছর হলো। কিন্তু শ্রোতাদের মননে যে সুর তিনি গেঁথে দিয়ে গেছেন সেখানে প্রতিনিয়ত বেজে চলছে কেউ সুখী নয়, সেই তুমি, ফেরারীসহ অসংখ্য গান। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে এ ব্যান্ড কিংবদন্তির স্মৃতি।
১৮ অক্টোবর ছিল গায়কের অনুরাগীদের জন্য বিষাদের দিন। এ দিন জীবনের সব লেনাদেনা চুকিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীর ঠিক আগের দিন জানানো হয় স্মৃতি সংরক্ষণের খবর। উদ্যোগটি যৌথভাবে নিয়েছে আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণে গঠিত এবি ফাউন্ডেশন এবং বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক ইএক্সপি। প্রয়াত গায়কের সৃষ্টিকর্ম সংরক্ষণে আয়োজিত এ সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী ফেরদৌস আইয়ুব চন্দনা এবং এশিয়াটিকের কর্তাব্যক্তিরা।
ওই মাহেন্দ্রক্ষণে এবিকে নিয়ে চন্দনা বলেন, ‘তিনি বেঁচে থাকাকালীন গিটারগুলো এবি কিচেনে ছিল। এখন স্টুডিও নেই; মানুষটাই তো নেই। তাই গিটারগুলো বাড়িতেই রেখেছি। যথাসম্ভব যত্নে রাখার চেষ্টা করছি। এর আগে কিছু গিটার নিয়ে প্রদর্শনী হয়েছে। আগামীতেও হবে। তার রেখে যাওয়া গিটার এবং অন্যান্য সংগীতসামগ্রী নিয়ে একটি জাদুঘর তৈরি করা হবে। এছাড়া আগামী বছর থেকে ধারবাহিকভাবে তার স্মরণে বিভিন্ন কনসার্টের আয়োজনও করা হবে। এসব নিয়ে এশিয়াটিকের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে।’
এশিয়াটিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অভিনেতা ইরেশ যাকের বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চু আমাদের কাছে একজন কিংবদন্তি। ওনার রেখে যাওয়া সৃষ্টিকে আমরা চেষ্টা করবো এগিয়ে নিয়ে যেতে। যেন আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তাকে জানতে পারে এবং তার সৃষ্টিগুলোর চর্চা করে। এবি কিচেনের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমরা গর্বিত।’
অনন্তলোকে পাড়ি দিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। তবে প্রস্তুত করে রেখে গেছেন ২০০টির মতো গান। যা কি না এখনও অপ্রকাশিত। স্মৃতি সংরক্ষণের পাশাপাশি সেসব গানও একে একে প্রকাশ করা হবে এ প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পীদের কণ্ঠে। তবে চুক্তি অনুযায়ী, যদি কেউ বাণিজ্যিকভাবে এবির গান ব্যবহার করতে চায় তবে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে সমঝোতা চুক্তির সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান দুটির।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ফ্রেমবন্দি