পতনের গিরিখাদে ধাবমান ক্রিকেটকে নিয়ে বিসিবির চ্যালেঞ্জ

সালেক সুফী

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পথ ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে এসেছে পরিবর্তন। সাবেক সভাপতি সহ কয়েকজন পরিচালক পদত্যাগ করেছেন, অধিকাংশ পর পর কয়েকটি কার্যনিবাহী কমিটির সভায় অনুপস্থিত থাকায় হারিয়েছেন পদ। এদিকে ক্রিকেট দল ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুটি সিরিজ যাচ্ছেতাই ভাবে ধবল ধোলাই হওয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন পতনের গিরিখাতদ। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ক্রিকেট কিংবদন্তি শাকিব আল হাসান ঢাকা টেস্টে খেলে অবসর নেয়ার সুযোগ পায় নি। সাকিবের খেলার বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে বিসিবি। বিতর্কিত হেড কোচকে বরখাস্ত করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে নতুন হেড কোচ। এতো সব বিষয় হয়ত খেলোয়াড়দের উপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করেছে। না হয় দেশের মাটিতে পর পর দুটি টেস্ট এভাবে হেরে যাওয়ার মত দল নয় বাংলাদেশ। ভারতের বিরুদ্ধে হারের অনেক কারণ থাকতে পারে।  কিন্তু ঢাকা, চট্টগ্রামে যেভাবে বিনা যুদ্ধে বাংলাদেশ সেখান থেকে কিভাবে ঘুরে তাড়াবে বাংলাদেশ সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই এখন ফারুক আহমেদ নেতৃত্বের বিসিবির প্রধান চ্যালেঞ্জ।

এমনিতেই ২৪ বছর টেস্ট খেলেও টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পায়ের তলায় মাটি শক্ত হয় নি। সোনালী প্রজন্মের কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় একসাথে পারফর্ম করলে কালে ভদ্রে জয় এসেছে। যার অধিকাংশ আবার দেশের মাটিতে স্পিন ফাঁদ পেতে সফরকারীদের বিপাকে ফেলে। তবে সম্প্রতি পাকিস্তানে পাকিস্তান দলের বিরুদ্ধে ভালো খেলেই জয় পেলো বাংলাদেশ। এর পর কিযে হলো ভারত সফরে নিজেদের খেলাটাই গুলিয়ে ফেললো বাংলাদেশ। আর যেভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলেছে দলকে অজানা আতঙ্কে আতংকিত মনে হয়েছে। বিষয়গুলো হয়তো নতুন করে ক্রিকেট পরিচালনায় আসা ফারুখ আহমেদ, নাজমুল আবেদীন ফাহিম এবং গাজী আশরাফদের নজর এড়ায় নি। প্রতিদ্বন্দিতাময় ক্রিকেট বিশ্বে ক্রিকেট এখন প্রযুক্তি নির্ভর। ভালো খেলে ভালো খেলার ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করতে হলে ক্রিকেটারদের মানসিক চাপ মুক্ত রাখতে হয়। একটি দুটি টেস্ট বা একটি সিরিজ ভালো নাও যেতে পারে। কিন্তু যেভাবে বাংলাদেশ দুটি টেস্ট সিরিজ জঘন্য ব্যাটিং করে হেরেছে তার সঠিক কারণ অনুসন্ধান করে পরিস্থিতি মাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু না করলে পর্যায়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা সহজ হবে না।

পঞ্চ পাণ্ডবের সময় শেষ হয়ে এসেছে। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পরিকল্পনা আর কৌশলের অভাবে ওদের যোগ্য উত্তরসূরি গড়ে উঠে নি। ঘরোয়া ক্রিকেটের বেহাল অবস্থার জন্য পাইপ লাইনে মানসম্পন্ন ক্রিকেটারের অকাল। তাই অপরাপর দেশ নিয়মিত নতুন প্রজন্মদের নিয়ে এসে সাফল্য পেলেও বাংলাদেশ পাচ্ছে না। দেশ জুড়ে অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ক্রিকেটে ঢাকার বাইরে মানসম্পন্ন ক্রিকেট হচ্ছে না। তৃণমূলে ক্রিকেট সংগঠন বলতে কিছু নেই। লীগ এবং টুর্নামেন্টের মান বলতে কিছু নেই। নতুন মেধা অনুসদ্ধান এবং পরিচর্যা করে গড়ে তোলার উপযোগী কৌশল নেই। দল নির্বাচন নিয়ে আছে বিতর্ক। বিসিবির দক্ষতা, যোগ্যতা এবং মানসিকতা নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। এহেন অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে হলে ক্রিকেটের খোল নলচে পাল্টে ফেলা ছাড়া উপায় দেখি নেই। প্রথমেই প্রয়োজন ক্রিকেটকে রাজনীতি মুক্ত করে বিকেন্দ্রিকরণ।  অন্তত ৮ টি বিভাগীয় শহরে আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট অবকাঠামো গড়ে তুলে স্থানীয় ক্রিকেটের ম্যান উন্নয়ন। অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে স্বল্প কালীন, মধ্য এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন। উদাহরণ আছে ভারত, শ্রীলংকা।  খুদে জনসংখার দেশ নিউজিলণ্ড যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশ আফগানিস্তান সঠিক পরিকল্পনার কারণেই এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে ক্রিকেট বর্তমান অবরুদ্ধ অবস্থান থেকে সহসা মুক্তি পাবে বলে মনে হয় না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × three =