বাংলাদেশ-শ্রীলংকা ওডিআই সিরিজ
১-১ সমতায় থাকা বাংলাদেশ -শ্রীলংকা ওডিআই সিরিজের কাল ছিল সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচ। ক্যান্ডির পালেকেলে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত কালকের ম্যাচে টস জয়ী শ্রীলংকা ব্যাটিং করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৫ রান করেছিল। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ফ্লাড লাইটের নিচে পরিকল্পনা মাফিক ব্যাটিং করে এই ম্যাচ যেটা সম্ভব বলেই ধারণা করেছিল অনেকেই। কিন্তু বাংলাদেশ বাটিংয়ে না ছিল কোন পরিকল্পনা , না ছিল দায়িত্ববোধ। ৫০ ওভার খেলতে পারে নি বাংলাদেশ। জয়ের জন্য ক্ষুধা ছিল অনুপস্থিত। আর তাই ৩৯.৪ ওভার খেলে ১৮৬ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। পরিণতি ৯৯ রানের বিশাল ব্যাবধানে পরাজয়। আরো একটি সিরিজ হারলো বাংলাদেশ ২-১ ব্যাবধানে।
উইকেট কাল ছিল ফ্লাট ,ব্যাটিং সহায়ক। টস জয় করে শ্রীলংকান অধিনায়ক ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। শুরুতেই চরিথা আসালংকা বলেছিলো এই উইকেটে ২৮০ হবে ন্যূনতম সংগ্রহ। মেহেদী মিরাজের মতে ২৮০ রান তাড়া করে ম্যাচ জয় করা সম্ভব ছিল. পরিকল্পিত ব্যাটিং করে ৪০ ওভার শেষে শ্রীলংকান স্কোর দাঁড়িয়েছিল ৩/২২২. সেখান থেকে শেষ ১০ ওভারে ১০০ রান তুলে ৩২০-৩৩০ রানের পাহাড় চূড়ায় ওঠা সম্ভব ছিল. কিন্তু বাংলাদেশ ভালো বোলিং ফিল্ডিং করে শ্রীলংকান ইনিংস ২৮৫ রানে সীমিত করে আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু হয় এমন ম্যাচ জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ,সাহস আর পরিকল্পনা বাংলাদেশের নেই। তাই সঙ্গত পরিণতি হয়েছে বাংলাদেশের ৯৯ রানে পরাজয়ে। কোন অজুহাত দেয়া যাবে যাবে না. যোগ্যতর দল হিসাবেই সিরিজ জিতেছে শ্রীলংকা। সান্তনা লঙ্কা ওয়াশ হয় নি। দ্বিতীয় ম্যাচটি ভালো খেলেই জিতে নিয়েছিল বাংলাদেশ।
কাল লংকান ইনিংসের শুরুতেই মাধুস্কার উইকেট তুলে নিয়েছিল তানজিম সাকিব। ঝড়ের গতিতে শুরু করেছিল কুশল মেন্ডিস ,পিথুন নিঃশঙ্কাও ছিল চনমনে। দ্বিতীয় উইকেট জুটি দ্রুত ৫৬ রান জুড়ে দেয়ার পর তানভীর নিঃশঙ্কাকে ( ৩৫) ফিরিয়ে দিয়েছিলো। কামিন্দু মেন্ডিস( ১৬) সুবিধা করতে পারে নি. কিন্তু চতুর্থ উইকেটে জুটি বেঁধে কুশল মেন্ডিস আর অধিনায়ক চরিথা আসালংকা বাংলাদেশ বাটিংকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১২৪ রান যোগ করে. বিশেষ করে কুশল মেন্ডিস ছিল অনবদ্দ। মিডল অর্ডার বাটিংয়ে শ্রীলংকার শ্রেষ্টত্বের কারণে এগিয়ে যায় স্বাগতিক দল। ৪০ ওভার শেষে শ্রীলংকার স্কোর দাঁড়ায় ৩/২২. সেখান থেকে ৩২০-৩৩০ করে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিবে সবাই ভেবে নিয়েছিল। কিন্তু ম্যাচের এই একটি পর্যায়ে দারুন বোলিং ফিল্ডিং করেছে বাংলাদেশ। সঙ্গে মেহেদী মিরাজের বোলিং পরিবর্তন প্রশংসনীয় ছিল. শেষ ১০ ওভারে শ্রীলংকা ৪ উইকেট হারিয়ে যোগ করে ৬৩ রান. ২৮৫/৭ উইকেট সংগ্রহে মুখ্য ভূমিকা ছিল কুশল মেন্ডিস ( ১২৪) আর চারিথা আসালংকা (৫৮) .বাংলাদেশের হয়ে মেরাজ (২/৪৮) ,তাসকিন (২/৫১) সফল বলার ছিল.
বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ভালো সূচনা আর অন্তত দুটি লম্বা পার্টনারশিপ। তাড়া হুড়ো না করে পরিকল্পনা মাফিক ব্যাটিং করলে বাংলাদেশ ৫০ ওভারে লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে পারতো। কিন্তু বাংলাদেশ ইনিংসে কোন পরিকল্পনার ছাপ দেখা যায় নি. তৌহিদ হৃদয় ( ৫১) ,পারভেজ ইমন (২৮) ,মেহেদী মিরাজ (২৮) ,জাকের আলী (২৭) উইকেটে স্থিতু হয়ে উইকেট ছুড়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাটিং দুর্বলতা হলো কেউ দায়িত্ব নিয়ে ইনিংস বড় করতে পারে না. ২০/৩০ রান করলেই ভাবে যথেষ্ট হয়ে গাছে। টপ অর্ডার ,মিডল অর্ডার ব্যাটিং এখনো অনেক অগোছালো ,দুর্বল। ধারবাহিক ভাবে ম্যাচ জয়ের সক্ষমতা এখনো অর্জন করে নি. আর মুশফিকুর রাহিম ,মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অবসর নেয়ায় ব্যাটিং দুর্বলতা সুস্পষ্ট হয়ে ধরা দিচ্ছে।
এই স্কোয়াডে দেশে দারুন ফর্মে থাকা শেখ মোহাম্মদ নাঈম ছিল, আরো ছিল রিশাদ হোসেনের মত প্রমাণিত লেগ স্পিনার। ওদের সুযোগ দিলেই পরিস্থিতি পাল্টে যেত বলছি না। কিন্তু ওদের সুযোগ দেয়া উচিত ছিল. বাংলাদেশের প্রথম এবং শেষ দুটি ম্যাচেই সুযোগ ছিল. কিন্তু সেই সুযোগ গুলো লুফে নিতে পারলো না বাংলাদেশ।