ময়ূরাক্ষী সেন
ঘর শুধু থাকবার জায়গা নয়। এখন সবাই চায় নিজের বাসাকে পরিপাটি ও সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে। কারণ কর্মব্যস্ত দিনের পর বাসা পারে প্রশান্তির স্পর্শ দিতে। সারাদিন যত রকমের ভোগান্তি যাক না কেন মানুষ বাসায় এসে তা ভুলে যায়। একটি বাসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে শোবার ঘর বা বেডরুম। দিন শেষে এখানে এসেই মানুষ আশ্রয় নেয় শান্তির খোঁজে। তাই বেডরুমকে সাজিয়ে তোলা উচিত মনের মতো। জেনে নেওয়া যাক কেমন করে বেডরুম সাজাতে পারেন।
একটা সময় ছিল যখন মানুষ মনে করতো ঘর ভর্তি আসবারপত্র থাকলেই ঘর সুন্দর লাগবে। কিন্তু এখন সে ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। ঘর বড় হোক কিংবা ছোট হোক কম আসবাবপত্র সবার পছন্দ। আসবাব কম রেখে ঘরের সৌন্দর্য আরো বেশি ফুটিয়ে তোলা যায়। তাই বেডরুমে প্রয়োজনের বাইরে কোনো আসবাব না রাখাই শ্রেয়। এমন আসবাব রাখতে পারেন যার ব্যবহার দুইভাবে করা যায়। যেমন বেডের নিচে ড্রয়ারের ব্যবস্থা করে তার মধ্যে ঘরের টুকিটাকি জিনিস রেখে দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া এখন বাজারে সোফা কাম বেড পাওয়া যায়। বেডরুম বড় হলে এক কোণায় সেই সোফা রেখে দেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে কিংবা বাড়িতে অতিথি এলে তা বেড হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
বেডরুমে থাকা প্রত্যেকটি আসবাবপত্রের মধ্যে মিল থাকলে ঘর দেখতে সুন্দর লাগে। এখন ট্রেন্ডে রয়েছে একই থিমে বেডরুম সাজানো। যেমন অনেকে সাদা ফার্নিচার দিয়ে পুরো বেডরুম সাজিয়ে থাকেন। অনেকে শুধু কালো ফার্নিচার রেখে থাকেন। শোবার ঘরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসবাব হচ্ছে বিছানা। ঘুমানোর বিছানা যাতে আরামদায়ক হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিছানায় আরামদায়ক গদি পেতে দিতে হবে, না হলে শরীরে ব্যথা বা ঘুমানোর সময় অস্বস্তি হতে পারে। এছাড়া বিছানায় আরামদায়ক সুতি চাদর বিছিয়ে রাখতে হবে। বেশি নকশা কিংবা কারুকার্য করা চাদর রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
বেডরুমের পর্দার সাথে চাদরের মিল থাকলে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। সব সময় সম্ভব না হলেও চেষ্টা করতে হবে বিশেষ দিনগুলোতে পর্দা ও চাদরের মধ্যে মিল রাখতে। ঘরের সৌন্দর্য অনেকটা নির্ভর করছে ঘরের দেয়ালের রঙের উপর। বেডরুমের দেয়ালের রঙ কিছুটা হালকা রাখা উচিত। এতে ঘর যেমন স্নিগ্ধতার ছোঁয়া পায় তেমনি হালকা রঙ তাপ শোষণ করে নেয়। বেডরুমের রঙ অফহাইট রাখা যেতে পারে। নিজের ফ্ল্যাট হলে তৈরির সময় এমন ভাবে করতে হবে যাতে বেডরুমে পর্যাপ্ত আলো বাতাস ঢোকার সুযোগ পায়। জানালার সামনে কোনো আসবাবপত্র না রেখে সে স্থান খালি রাখলে আলো ঢুকতে ও বাতাস চলাচল করতে পারবে।
বেডরুমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে আলোকসজ্জা। এমন আলোর ব্যবস্থা করতে হবে যাতে ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে। সাধারণ এলইডি লাইটের পাশাপাশি ঘুমানোর জন্য সবুজ কিংবা নীল রঙের ডিমলাইট রাখা যেতে পারে। এছাড়া বেডে বসে বই পড়ার অভ্যাস থাকলে কিংবা পড়ালেখা করলে পড়ার টেবিলের উপরে একটি টেবিল ল্যাম্প রাখতে হবে। বেডরুম বড় হলে কোণায় বসার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ঘরের কোণে বেতের সোফা এবং তার ওপর রঙিন কুশন রাখা যেতে পারে। এছাড়া সোফা কাম বেড রাখা যেতে পারে। একসাথে অনেক বন্ধুবান্ধব কিংবা আত্মীয় স্বজন এলে বেডরুমে বসার জন্য ফ্লোর ম্যাটের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিংবা নিচে বিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে শীতল পাটি। এতে বসার জায়গার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
শোবার ঘরের লুক পরিবর্তন করে ফেলতে পারেন শুধু দেয়াল সাজিয়ে। বেডরুমে একটি আয়নার প্রয়োজন হয়। আয়না দেয়ালে বসিয়ে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে জায়গা অপচয় হবে না, তাছাড়া দেয়ালে আয়না বসালে রুম দেখতে খানিকটা বড় মনে হয়। বাঁশ, বেত, কাঠসহ নানা ধরনের বাহারি নকশার আয়না এখন বাজারে পাওয়া যায়। যা ঘরকে নান্দনিক করে তোলে। এছাড়া দেয়ালে টানিয়ে রাখতে পারেন পছন্দের পেইন্টিং। দেয়াল জুড়ে নকশি কাঁথা বড় ফ্রেম করে টানিয়ে দিতে পারেন। এছাড়া নিজেদের প্রিয় মুহূর্তের ছবিও ফ্রেম করে দেয়ালে টানিয়ে রাখা যেতে পারে।
দেয়ালে যাদের চাই আভিজাত্য, তাদের জন্য হালকা রঙ ও দেশীয় উপকরণই যথাযথ। ছোট গাছ দিয়ে এক কোণে করে ফেলতে পারেন দেয়াল বাগান। দেশীয় উপকরণ যেমন টেরাকোটার পট, মুখোশ ছাড়াও দেয়ালসজ্জায় তালপাতা বা নকশিকাঁথার পাখা ব্যবহার বেশ ট্রেন্ডি। এ ছাড়া বাঁশ, বেত বা পাটের ছোট ছোট ঝুড়ি রঙ করে দেয়ালে ঝুলিয়ে দিলে আসবে ভিন্নতা। ঝুড়ির মধ্যে কৃত্রিম মোম বসিয়ে দিতে পারেন। রাতে মোমের আলোয় দেয়ালের সৌন্দর্যে ভিন্নমাত্রা যোগ হবে। যাদের হালকা রঙের দেয়াল পছন্দ তারা নীল, সাদা, বাদামি বা ক্রিম রঙের সিরামিক প্লেট বসাতে পারেন। এতে ঘরে ক্ল্যাসিক একটা লুক আসবে। ঘরের দেয়ালে গাছ, ফুল বা লতার মতো ট্রেন্ডি কিছু ডিজাইন আঁকতে পারেন। গাঢ় রঙ যেমন কমলা, নীল, সবুজ, লাল ব্যবহারে ঘরের দেয়াল হয়ে উঠবে প্রাণবন্ত।
ঘর সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার জন্য সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে ইনডোর প্ল্যান্ট। শুধু সুন্দরের জন্য নয় এটি স্বাস্থ্যকর এবং প্রকৃতির জন্যও উপকারী। আপনার বেডরুম সাজিয়ে তুলতে পারেন কিছু গাছ দিয়ে। ইনডোর প্ল্যান্ট ক্ষতিকারক পদার্থ যেমন কার্বন মনোক্সাইড, ফর্মালডিহাইড, অ্যামোনিয়া, কার্বন ডাই অক্সাইডসহ আরও অনেক কিছু দূর করে। এগুলো মূলত মাথাব্যথা, ক্লান্তি, অসুস্থতা ও অ্যালার্জির কারণ হিসেবে পরিচিত। ঘরে কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট যুক্ত করা হলে বাতাসের গুণমান বাড়বে এবং আরও পরিস্কার হবে। বেডের উপর খালি জায়গা থাকলে কিংবা জানালার ধারে রেখে দিতে পারেন কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট। এছাড়া দেয়ালে তাক লাগিয়েও গাছ সাজিয়ে রাখতে পারেন। ঘরের এককোণে অনেক সময় ডাস্টবিন রাখার প্রয়োজন হয়। প্লাস্টিকের ডাস্টবিন ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট করবে। সেক্ষেত্রে বেতের ঝুড়ি ডাস্টবিন হিসেবে বেডরুমে রাখতে পারেন। বই ঘরের সবচেয়ে সুন্দর আসবাব। দেয়ালে বুকশেলফ তৈরি করে তাতে আপনার পছন্দের বিভিন্ন বই সাজিয়ে রাখতে পারেন। বুক সেলফের ফাঁকে ফাঁকে মাটির শোপিস রাখতে পারেন, এতে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।
বেডরুমের মধ্যে অনেক সময় ভ্যাপসা গন্ধ হয়ে থাকে, যা ঘরের সৌন্দর্য কমিয়ে দেয়। ঘর সাজানোর পাশাপাশি গন্ধের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া ঘরের কোণে সেন্টেড মোমবাতি জ্বালিয়ে দিতে পারেন। সুন্দর গন্ধের জন্য ধূপকাঠিও ব্যবহার করা যেতে পারে। বেডরুমে মিউজিক সিস্টেম থাকলে নিজের পছন্দের গান শোনা যায়। সারাদিন পর ঘরে ফিরে যদি নিজের পছন্দের গান কিছুক্ষণ শুনেন এতে আপনার মন প্রফুল্ল হয়ে যাবে। তাই রুমে মিউজিক সিস্টেম রাখতে পারেন। বেডরুমের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও নজর দিতে হবে। অনেক সময় আসবাবপত্র, জানালা এবং দেয়ালে ময়লা জমে থাকে। নিয়মিত বেডরুম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। সুন্দর গোছানো পরিপাটি একটি বেডরুম আপনার মনের উপর প্রভাব ফেলবে এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ইন্টেরিয়র